ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের খায়েশ পূরণ নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। কেননা, তুরস্ক এতে নতুন করে আপত্তি জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ঐ দেশ দুটির বিরুদ্ধে কুর্দি উগ্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিয়ে তাদের অভয়ারণ্য নির্মাণের অভিযোগ এনেছেন।
এ মাসের শুরুতে এরদোয়ান স্টকহোমকে আঙ্কারার প্রতি দেশটির প্রতিশ্রুতি পালন না করার অভিযোগ করে বলেছেন: তুরস্কের শত্রুরা সুইডেনে অবাধে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে সুইডেনের নব-নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসনের সাথে সাক্ষাতের জন্যে আমি তৈরী।
এরদোয়ান সরকারের কট্টর সমালোচক ও সেকুলার তুর্কি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম দুভার নিউজ পোর্টালের বিশ্লেষক ইলহান উজগেল বলেছেন: ওয়াশিংটন থেকে কিছু ছাড় পাওয়াই এরদোয়ানের উদ্দেশ্য। ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সদস্য হওয়ার আবেদনকে তিনি পশ্চিম থেকে কিছু পেতে দর কষাকষির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। আর তা বাইডেনের সাথে বৈঠক বা আমেরিকা থেকে এফ-১৬ জঙ্গীবিমান কেনা কিংবা নির্বাচনের সময় বহির্দেশের সমর্থন হতে পারে। তিনি নির্বাচনে জিততে পুরোপুরি মন দিয়েছেন। কেননা, তিনি অভ্যন্তরীণভাবে সমর্থন হারাচ্ছেন। তাই, তাকে নির্বাচনে জিততে হবে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিকভাবে যা করা দরকার – তিনি তা করতে যাচ্ছেন।
তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন: এরদোগান ন্যাটো – বিশেষ করে, আমেরিকার ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। কেননা, তারা এরদোগানের ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী ঘাঁটির মাঝে ভালো (নাশকতামূলক) ভূমিকা পালন করে; যার অর্থ হলো – ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগ দিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে।
এদিকে, পশ্চিমা, ধর্মহীন (সেকুলার) ও সমাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর মদদে ২০১৬ সালে ইসলামপ্রিয় এরদোয়ান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুতির ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জড়িত গুলেনপন্থী তুর্কি অন্যতম সাংবাদিক হলেন আব্দুল্লাহ বোজকার্ট। উনি ব্যর্থ ঐ অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের বাইরে মার্কিন আশ্রয়ে রয়েছেন এবং নানা পত্রিকায় এরদোয়ানবিরোধী কর্মকাণ্ড বা রটনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ‘নর্ডিক রিসার্চ অ্যান্ড মনিটরিং নেটওয়ার্ক’ নামের অনলাইন একটি পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালকও। এ পত্রিকাটি জানিয়েছে, গুপ্ত সাইবার আর্মি গঠনে গোপনে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে তুরস্ক। জনমত তৈরি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলমানদের মতামতকে প্রভাবিত, সেসাথে আমেরিকা ও হিন্দুস্তানকে আক্রমণ এবং পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে সমালোচনা রুখতে তৈরি করা হয় এ সাইবার আর্মি।
২০১৮ সালের ১৭ই ডিসেম্বর তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সোয়লু পাকিস্তান সফরে এসে দেশটির তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শেহরিয়ার খান আফ্রিদীর সাথে ব্যক্তিগত বৈঠক করেন। সেখানেই সাইবার আর্মি গঠনের ব্যাপারটি আলোচনার টেবিলে স্থান পায়। এ নিয়ে পাকিস্তানের উচ্চপর্যায়ের কর্তাদের সাথে আলোচনা হলেও ইসলামাবাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশীরভাগ স্টাফ থেকে তা গোপন রাখা হয়!
পাকিস্তানের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গোপন সাইবার আর্মি গঠনে সবুজ সংকেত দেন। তিনি একই দিনে সোয়লুর সাথে বৈঠক করেন। তখন ইমরান খান দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদেও ছিলেন।
এ গোপন আর্মির বিষয়টি প্রথমবারের মতো ২০২২ সালের ১৩ই অক্টোবর প্রকাশ্যে আনেন সোয়লু। ‘কাহরামানমারাসের’ স্থানীয় একটি টিভি স্টেশনের সাক্ষাৎকারে তিনি গোপন এ সাইবার আর্মি গঠনের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তিনি সরাসরি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি; শুধু ইঙ্গিত দেন, তুরস্ক থেকে ৫-৬ ঘণ্টার সরাসরি ফ্লাইটের দেশ!
সূত্র: মাধ্যম দুভার নিউজ পোর্টাল ও নর্ডিক রিসার্চ অ্যান্ড মনিটরিং নেটওয়ার্ক।