টেকনাফ থেকে জাহাজে চড়ে সেন্ট মার্টিন গিয়েছেন কখনো? কিংবা সদরঘাট থেকে চাঁদপুর? টেকনাফ থেকে জাহাজে চড়ার কিছুক্ষণ পরই দেখবেন জাহাজের পেছন পেছন গাংচিলের দল উড়ে আসছে। কেউ কেউ ওদের দিকে চিপস বা বিস্কুট ছুড়ে দিচ্ছে। একটু পর দেখবেন, খালি হওয়া চিপস বা বিস্কুটের প্যাকেট সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। একই ব্যাপার দেখা যাবে চাঁদপুর যাওয়ার পথেও। গাংচিল হয়তো আশপাশে পাবেন না, কিন্তু চিপস, বিস্কুট বা প্লাস্টিকের বোতল ফেলে দেওয়ার দৃশ্য বদলাবে না এতটুকু।
নদী-নালা বা এর আশপাশে আমরা যেসব প্লাস্টিক আবর্জনা ফেলে রাখি, তাদের শেষ গন্তব্য সমুদ্র। প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক আবর্জনা সাগরে গিয়ে পড়ে। এই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের কারণে সামুদ্রিক পরিবেশ গুরুতরভাবে বিপন্ন হচ্ছে। এমনকি মহাসাগরে বিচরণকারী কোনো কোনো পাখি এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর পাকস্থলী পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এর ৮০ শতাংশ জায়গা প্লাস্টিক বর্জ্যে ভর্তি হয়ে আছে। প্লাস্টিক সাধারণত হজম হয় না, যার ফলে আস্তে আস্তে পাখি বা প্রাণীগুলো না খেতে পেরে করুণভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। শুধু প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী ও কচ্ছপ মারা যাচ্ছে। খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে যাচ্ছে। ফলে জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হচ্ছে।
প্লাস্টিকের বোতল, ব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রীর ২০ থেকে ১ হাজার বছর সময় লাগে ভেঙে টুকরো হতে। সাধারণত প্লাস্টিকসামগ্রী ভেঙে টুকরো হয়ে প্রথমে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। পানি ও অন্য খাদ্যের সঙ্গে একসময় এই মাইক্রোপ্লাস্টিক বিভিন্ন জীবের দেহে প্রবেশ করে। এমনকি একসময় মাছের সঙ্গে মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে চরম স্বাস্থ্যবিপর্যয় ঘটাতে পারে।
এই ছবিটিতে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের মিডওয়ে প্রবালদ্বীপ থেকে তোলা একটি মৃত অ্যালবাট্রোসের পাকস্থলীর ভেতরের অবস্থা দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে কাছের মহাদেশ থেকে দ্বীপটি প্রায় ২ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। ধারেকাছে কোনো কলকারখানা আছে, এমনও নয়। সমুদ্রের এই পাখিগুলো প্রশান্ত মহাসাগর থেকে যখন খাবার সংগ্রহ করে, তখন সাগরে ভেসে বেড়ানো বিভিন্ন প্লাস্টিকও এরা না বুঝে খেয়ে ফেলে এবং নিজেদের ছানাদেরও খাওয়ায়। সমুদ্রে প্লাস্টিক-দূষণ যে কত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, এ ছবিটি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।
ছবি: ক্রিস জর্ডান
লিখেছেন Tanvir Rivnat.
#SaveFutureBangladesh #SaveBirds
#saveenvironment #savebirdslife #savenature