মীলাদ শব্দটার জায়গায় যদি সীরাত বসিয়ে দেন তখন আপনার সকল কিছুই বৈধ।
এই যে ধরুন, ১২ ই রবিউল আউয়ালে সীরাতুন্নবী মাহফিল অবশ্যই করতে পারবেন, তবে সাবধান ভুলেও ১২ ই রবিউল আউয়ালে মীলাদুন্নবী মাহফিল করতে যাবেন না, এটা বিদায়াত, দ্বীনে নতুন সংযোজন।
আবার ধরুন ১২ ই রবিউল আউয়ালে সীরাতুন্নবী উপলক্ষে লঞ্চ যাত্রা/নৌ-ভ্রমণ করতে কোন অসুবিধা নেই, তবে সাবধান ভুলেও ১২ ই রবিউল আউয়ালে মীলাদুন্নবী উপলক্ষে পদযাত্রা/জুলুজ/রেলি করতে যাবেনা।
এসব বিদায়াত, এসব মাজারপূজারীদের কাজ।
কারো অনুগ্রহের প্রতিদান দিতে কোন আয়োজন করতে চান? তাহলে শোকরানা মাহফিল করুন, তবে সাবধান নবীজিকে পেয়ে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে কখনোই কোন মাহফিল মীলাদুন্নবী শিরোনামে করবেন না এটা জগন্য বিদায়াত।
তবে মীলাদ নামটা চেঞ্জ করে সীরাত শব্দটা সংযুক্ত করলে এ আযোজন বৈধ হবে, যে কোন কনফারেন্স বৈধ হবে।
ইসলামী ফাউন্ডেশন কেন যে, মীলাদুন্নবী উপলক্ষে বইমেলা করে? সেটা সীরাতুন্নবী উপলক্ষে করলেই সব চুকে যায়। এজন্য গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স (জামাতের) সহ কওমীদের সব পাবলিকেশন্স অনুমোদনের সময় ফাউন্ডেশন বরাবর লেখা দরখাস্তে মীলাদুন্নবী উপলক্ষে বইমেলা লিখলেও সারামাসের প্রচারপত্রে লিখে সীরাতুন্নবী উপলক্ষে বইমেলা।
কারণ কোন কাজই মীলাদুন্নবীকে উপলক্ষ বানিয়ে করা যাবেনা, এটা বিদায়াত। করতে হবে সীরাতুন্নবীকে উপলক্ষ বানিয়ে।
আয়োজকঃ শায়খ, একটা মাহফিলে আপনাকে দাওয়াত করতে চাই।
শায়খঃ কি মাহফিল?
আয়োজকঃ মীলাদুন্নবী উপলক্ষে মাহফিল।
শায়খঃ নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ। এসব বিদায়াত।
কিছুক্ষণ পর ভিন্ন নাম্বার থেকে কল করার পরঃ
আয়োজকঃ শায়খ, একটা মাহফিলে আপনাকে দাওয়াত করতে চাই।
শায়খঃ কি মাহফিল?
আয়োজকঃ সীরাতুন্নবী উপলক্ষে মাহফিল।
শায়খঃ মা শা আল্লাহ , মা শা আল্লাহ। হাদিয়াটা মানসম্মত দিয়েন।
মীলাদুন্নবী উপলক্ষে কিছু করলেই বলা হবে এমন মাহফিল/আয়োজন/কর্ম কি কুরুনে ছালাছায় ছিলো? তোমরা কি সাহাবিদের থেকে বেশি নবীপ্রেমিক হয়ে গেছো?
আছলুল ইবাদাতে আততাওকিফ ইত্যাদি ইত্যাদি।
জনৈক ভক্তঃ শায়খ, প্রেসক্লাবে একটা ইসলামিক কনফারেন্স (যে কোন শিরোনামে হতে পারে) করবো।
শায়খঃ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।
ভক্তঃ কনফারেন্স শেষে আগত অডিয়েন্সের জন্য খাবারের (বিরানীর) ব্যবস্থা থাকবে
শায়খঃ অনেক ভালো হবে।
একই শায়খের কাছে আপনি ফোন করুন,
আপনিঃ শায়খ, মাহফিলের পর তাবারুক দেওয়া যাবে কি?
শায়খঃ না, কখনোই এ কাজটি করবেন না, এটা বিদায়াত, এটা হিন্দুদের প্রসাদের মতো সংস্কৃতি।
কেননা নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
مَن أَحْدَثَ في أَمْرِنَا هذا ما ليسَ فِيهِ، فَهو رَدٌّ
(এরকম দ্বিচারিতার ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ)
বাবারা, আল্লাহর তাওহীদের স্লোগান দিতে চাও?
তাহলে নারায়ে তাকবীর; আল্লাহু আকবার বলো।
সংগঠনের স্লোগান দিতে চাও?
তাহলে ইসলামী আন্দোলন / জামায়াতে ইসলামী; জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ বলো।
ব্যক্তির নামে স্লোগান দিতে চাও?
তাহলে বলো, পীর সাহেব চরমোনাই; জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।
আযহারী হুজুর, আযহারী হুজুর; জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।
ইসলামের নামে স্লোগান দিতে চাও?
তাহলে বলো দ্বীন ইসলাম, দ্বীন ইসলাম ; জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।
তবে সাবধান নবীজির নামে রিসালাতের স্লোগান তথা নারায়ে রিসালাত, ইয়া রাসুলুল্লাহ ভুলেও বইলোনা, বললে শিরক হইবে, বিদায়াত হইবে, ইসলাম থেকে খারিজ হইয়া যাইবা।
এককথায় সহজ উসূল শিখিয়ে দিচ্ছি, যেখানে মীলাদুন্নবী শব্দ দেখবে, সেখানেই বিদায়াত ফতুয়া বসিয়ে দিবে।
যেখানে সীরাতুন্নবী দেখবে সেখানেই শরীয়াহসম্মত ফতুয়া দিয়ে জোরছে করা শুরু করবে।
এ যেন দুনিয়ার যত দুশমনি সব মীলাদুন্নবী শব্দের সাথে।
পুনশ্চঃ
দিনশেষ, কওমীয়াত জিন্দাবাদ, সালাফিয়াত জিন্দাবাদ, মওদুদিয়াত জিন্দাবাদ।
©মুফতি মানজুর হোসাইন