হিন্দুস্তানের রাফেযিদের গতি থামাতে বারেলভি মাসলাকের পেশওয়া (অগ্রপথিক), হযরত মাওলানা আহমদ রেযা খাঁ সাহেবের ফতোয়াও খুব কার্যকর ছিল। রাফেযিদের আপত্তির বিপরীতে আসহাবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষে জবাব দিতে তিনি কোনো ত্রুটি রাখেননি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবিদের বিদ্বেষী ও অস্বীকারকারীদের খণ্ডনে ‘রদ্দুর রিফযাহ’, ‘রদ্দ-এ তাযিয়াদারি’ ও ‘আদিল্লাতিত ত-ইনাহ ফি আযানিল মুলাইনাহ’-সহ আরো অনেক বিখ্যাত গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। এসব গ্রন্থে তিনি সুন্নি-শিয়া দ্বন্দ্বের অবস্থান থেকে ইনসাফের সাথে আহলে সুন্নাত-এর পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন।
এটা সত্য যে, বারেলভি আলেমগণও শিয়াদের বিরোধিতা করেন এবং বারেলভি মাসলাকের ইমাম জনাব মাওলানা আহমদ রেযা খাঁ মরহুম রাফেযিদের বিরুদ্ধে দেওবন্দের আকাবের আলেমদের চেয়েও কঠিন ফতোয়া দিয়েছেন।
– দেওবন্দ ঘরানার আলেম কাযি মাযহার হুসাইন দেওবন্দি সাহেব।
[বাশারাতুদ দারাইন, পৃষ্ঠা-৬৬৩, ইদারা-এ মাযহারে তাহকিক, লাহোর]
আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা মুহাদ্দিস-এ বারেলি। সব ভ্রান্ত-পথভ্রষ্ট দলের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়ার জন্য এই নামটিই যথেষ্ট। এমন ব্যক্তিত্ব ইতিহাসে কয়টা খুঁজে পাবেন, যাঁর একক অস্তিত্ব পুরো বাতিল ফের্কাকে এক পাশে করে দেয়। হাজার হাজার নয়— গত এক শতাব্দির কথাই বলি— দ্বিতীয় আরেকিটা ব্যক্তিত্ব পাবেন না। সেই একই সূত্রেই শিয়া-রাফেযি সম্বন্ধে আলা হযরতের অবস্থান ছিল খুবই দৃঢ়। এতটাই দৃঢ় ও ন্যায়নিষ্ট ছিল যে, বিপরীত ঘরানার অনুসন্ধিৎসু আলেমগণও তাঁর অবস্থানে মুগ্ধ এবং মুগ্ধতা স্বীকারে বাধ্য। প্রমাণতো উপরে আছেই। শিয়া-রাফেযিদের বিভিন্ন বিষয়ের খণ্ডনে আলা হযরতের—ছোটো-বড়ো— ২০টি গ্রন্থ আছে। ২০ টি গ্রন্থ কি যথেষ্ট নয় একটি গোমরাহ দলের মূলোৎপাটনের জন্য? ২০ টু গ্রন্থ কি পর্যাপ্ত নয় সঠিক পথ নির্বাচন করে সে-পথেই দৃঢ়ভাবে থাকতে পারার জন্য? নিশ্চয় যথেষ্ট। এই ২০টি গ্রন্থ থেকেই ছোটো তিনটি রিসালাহ-র অনুবাদের একত্রে নাম— ত্রিরত্ন।
ত্রিরত্ন:শিয়া-রাফেযিদের খণ্ডন ও সংশোধনে ইমাম আহমদ রেযা (রহ:)
আলা হযরতের তিনটি রিসলাহ—
★ রদ্দুর রিফযাহ (রাফেযি ও তফযিলি শিয়াদের খণ্ডনে),
★ আদিলাতুত ত-ইনাহ ফি আযানিল মুলাইনাহ (শিয়াদের আযানে খণ্ডন তাদের গ্রন্থ থেকেই) এবং
★ আআলিয়ুল ইফাদা ফি তাযিয়াতিল হিন্দ ওয়া বায়ানিশ শুহাদা (তাযিয়াদারি ও শাহাদাতনামা সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর)—
সাথে আমিরে মুয়াভিয়া রাদিআল্লাহু আনহুকে নিয়ে আলা হযরত রহমতুল্লাহি আলাইহির ছোটো একটি ফতোয়া এবং পাশাপাশি পাঠককে বইটির সাথে আরো বেশি যুক্ত রাখতে দুইটি প্রবন্ধ—আলা হযরতের ওপর আরোপিত শিয়া অপবাদের খণ্ডন এবং দেওবন্দি ঘরানার আলেমদের দৃষ্টিতে আলা হযরতের রাফেযিদের খণ্ডন; স্ট্যাটাসের শুরু অংশটা এই প্রবন্ধের একটা ছোট্ট টুকরা— যুক্ত করার চেষ্টা করেছি। সবকয়টিই অনুবাদ। মূল কেন্দ্রে আছে আলা হযরতের তিনটি রিসালাহ, তাই গ্রন্থটির নাম দিয়েছি— ত্রিরত্ন।
আলহামদুলিল্লাহ অনুবাদ শেষ, সম্পাদনাও প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুত আনতে পারব এই ভরসা নিয়েই এনাউন্সমেন্টটা করলাম। প্রচ্ছদ দেখিয়ে প্রত্যাশা জাগিয়ে চুপসে যাওয়াকে ভয় করি। তাই দুআ চাই, খুব বেশি দুআ চাই— আল্লাহ তাআলা আমাদের কামেয়াব করুন। চলমান ফিতনা দমাতে আমার পক্ষ থেকে এই নযরানা আল্লাহ কবুল করুন।