ঢাকার ডি,আই,টি, রোডে রাজউক ভবন ঘেঁষে অবস্থিত মসজিদটি বর্তমানে দিলকুশা জামে মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় পঞ্চদশ শতকে মুঘল আমলে। তবে এর সঠিক নির্মাণকাল জানা যায় না। মসজিদের নকশার সাথে মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আমলের (ওফাতঃ ১৬৯৪ খৃঃ) নকশার মিল রয়েছে। সম্ভবত তিনি বা তাঁর পূর্বে কোনো শাসক এ মসজিদটি নির্মাণ করে থাকবেন। জানা যায় যে,
ঢাকার পার্শ্ববর্তী সোনারগাঁও থেকে এখানে এসে ইসলাম প্রচার শুরু করেন শায়খ শাহ নিয়ামাতুল্লাহ। তখন ১৫৫৬ সালের পরবর্তী যুগ এবং বাংলায় মুঘল আমল শুরু হয়েছে।
তাঁর পিতা ছিলেন আল্লাহর বন্ধুগণের মধ্যে অন্যতম বাংলায় ক্বাদেরিয়া তরীকা প্রচারকারীদের মধ্যে অন্যতম প্রথম, শায়খ ইবরাহীম দানিশবন্দ। শায়খ সাইয়্যিদ শাহ নিয়ামাতুল্লাহ পিতার দিক থেকে ছিলেন ইমাম হুসাইনের বংশধর। তাঁর ইশারায় মুর্তিসমূহ ধ্বসে পড়তো। ফলে, তিনি ফার্সী উপাধি “বুদ সেকান্দ” নামে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি ছিলেন ঢাকার মধ্যে দাফনকৃত আউলিয়ায়ে কেরামের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় গাউছ। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁকে এখানে দাফন করা হয়। মারকাদাল্লাহু ওয়াজহাহু।
মসজিদের ভেতরে ঢুকলে ওযুখানার ডানপাশে তিনটি উঁচু কবর দেখা যাবে। এগুলোর মাঝেরটি শায়খ নিয়ামাতুল্লাহ’র। এর মধ্যে একটি তাঁর প্রধান খাদেমের। রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা ‘আনহুম।
মসজিদের ছাদ অনেকটা উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই মুঘল আমলে নির্মিত ঢাকার অন্যান্য মসজিদের মতো এর ধারণক্ষমতা কম। মসজিদের পেছনে পাকিস্তান আমলেও একটি পুকুর ও ঘাট ছিলো। ক্লালক্রমে তা ভরাট করে পার্কিং স্পেইস বানানো হয়েছে। মসজিদের পাশে একটি প্রাচীন কূপ রয়েছে, যা এখন পরিত্যক্ত। একসময় নামাযীগণ কূপটি ওযুর জন্য ব্যবহার করতেন। এ মসজিদে প্রাচীন ফার্সী ভাষার একটি শিলালিপিও রয়েছে।
মসজিদটি ঢাকার তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর বা নায়েব-ই নাজিম, নওয়াব সৈয়দ আলী খান বাহাদুর নুসরাত জং (১৭৭৫-১৮২২ খৃঃ) একবার সংস্কার করেন। এরপর নবাব খাজা আহসানুল্লাহ (১৮৪৬-১৯০১ খৃঃ) মসজিদটি একাধিকবার সংস্কার করেন। পাকিস্তান আমলে এটি নওয়াব বাড়ী জামে মসজিদ নামেও প্রসিদ্ধ ছিলো। পরবর্তীকালে একে দিলকুশা জামে মসজিদ নামে আখ্যায়িত করা হয়। বর্তমানে মসজিদটি এ নামেই আছে।
এ মসজিদের ভেতরে কয়েকবার জামাআতে অংশগ্রহণ এবং শায়খ সাইয়্যিদ শাহ নিয়ামাতুল্লাহ’র (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা ‘আনহু) মাজার যিয়ারত করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমি এখানে যতোবারই গিয়েছি, এক অনন্য নীরবতা ও পরম প্রশান্তি অনুভব করেছি। এ মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন সুন্নী এবং তাঁদের ক্বিরাআত ও আযান আমার কাছে অত্যন্ত মধুর লেগেছে। মুঘল স্থাপত্যরীতির অংশ হিসেবে এ মসজিদটির সংস্কার কার্যক্রম বজায় থাকুক – এটাই কামনা।
তথ্যসূত্রঃ
১. হাকিম হাবিবুর রহমান রচিত “আসুদগান-ই ঢাকা”, প্রকাশকালঃ ১৯৪৬।
২. ডঃ সাইয়্যেদ মাহমুদুল হাসান রচিত “মুসলিম মনুমেন্টস অফ বাংলাদেশ”, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রকাশকালঃ ১৯৮০।
৩. ডঃ সাইয়্যেদ মাহমুদুল হাসান রচিত “মুসলিম এন্টিকুইটিস অফ ঢাকা”, গ্লোব লাইব্রেরী (প্রাঃ) লিঃ, প্রকাশকালঃ ২০০৪।
পছন্দের আরো লেখা