কিছু গরু চাষীদের কান্না শোনার অপেক্ষায়।
বাংলাদেশে গত দশ বছরে কুরবানির জন্য পশু পালন বেশ লাভজনক একটি ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্, নিঃসন্দেহে এটা একটি উত্তম ব্যবসা, এতে অনেকেই নিজে লাভবান হচ্ছে পাশাপাশি কুরবানি দাতাদের উপকার হচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে।
কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করেছি, যা খুবই দুঃখজনক।
সেটা হলো- অনেকেই কুরবানি উপলক্ষে শুধু মাত্র একটি বা দুটি গরু পালন করেছেন তার সামর্থ্যের সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে এবং সেই গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন- ১৫/২০/২৫ এমনকি ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। অনেকের কাছে বিষয়টি “তৃপ্তিদায়ক” হলেও আমার কাছে বিষয়টি একেবারেই হাস্যকর এবং উম্মাদের কাজ।
কেন একথা বললাম?
– বিভিন্ন নামের এসব “হাইপ্রোফাই” গরুর মালিকেরা বিভিন্ন টিভি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে যে তারা গরুটিকে ৩-৫ বছর যাবত পরম যত্নে লালনপালন করেছেন। এতোটুকু স্বাভাবিক। কিন্তু তারপর তারা ফিরিস্তি তুলে ধরেন, তাদের গরুর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা!
নিম্নরুপঃ
☞সকালে- ২৪ টা পাঁকা সাগর কলা, ১ কেজি ভিজানো ছোলাবুট, ৩ কেজি গাজর, ২ কেজি চাউলের জাউভাত এবং অন্যান্য সবুজ ঘাস ও খর কুড়া ভূসি ইত্যাদি।
☞দুপুরেঃ ১ কেজি আঙ্গুর, ৬ টা মাল্টা, ২ কেজি ভিজানো খৈল, ৬ টা আপেল, ২ কেজি শশা এবং অন্যান্য সবুজ খাস, খর কুড়া ভূসি ইত্যাদি। এবং সাবান, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার মেখে গোসল।
☞বিকালেঃ আপেল ৬টা, মাল্টা ৬ টা, কলা ১২ টা, ১ কেজি ভিজানো ছোলা, ভিজানো খৈল ১ কেজি এবং সবুজ ঘাস খর কুড়া ভূসি ইত্যাদি।
☞দিন রাত ২ টা বৈদ্যুতিক পাখা চলে এবং চারপাশে চারটি মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখা হয়।
তারা গর্ব করে জানান প্রতিদিন গরুটির পিছনে তাদের খরচ গড়ে এক হাজার থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। (যদি ৫০% সত্যও হয়)
* মানুষের জন্য বিলাসবহুল এমন ফলমূল একটি তৃণভোজী পশুকে খাওয়ানোটা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত?
* এসব খাদ্য না খাওয়ায়ে কী পশুপালন সম্ভব নয়?
* বিক্রিই যদি উদ্দেশ্য থাকে তাহলে সেটা তার কুরবানির পশু হয় কিভাবে? (যিনি কিনেন তার হবে)
* এসব খাবারের খরচ গরুর দাম অপ্রয়োজনীয় ভাবে কি বৃদ্ধি করেনা?
অথচ তারা ১টি গরুর পিছনে এভাবে খরচ না করে ৩/৪ টি লালন পালন করলে বেশি লাভবান হতে পারে। বুদ্ধিমান পশুপালকরা তাই করে।
অনেকের হয়তো ১ কোটি টাকা দামের কয়েকটি গরু কিনে কুরবানি দেওয়ারও সামর্থ আছে, কিন্তু ঐ সব লোকেরা এতোটা কম বুদ্ধি নিয়ে সমাজে চলাফেরা করেনা। তারা কখনো এসব “হাইপ্রোফাইল” গরু কিনেননা, কখনো এমন খবর আসেনি। তারা ৫/৬ লাখ টাকার মধ্যেই গরু কিনেন। আর যারা বেশি সাওয়াবের আশা করেন এবং গরীব মানুষকে নিয়ে ভাবেন যাতে অধিক সংখ্যক গরীব মানুষ মাংস খেতে পারে তারা ৬ লাখ টাকা দিয়ে ৩-৪ টা পশু কিনেন (এমন মানুষ দেখেছি)।
আর প্রত্যেকটা পণ্যেরই একটি আন্তর্জাতিক বাজার দর থাকে, সুতরাং ২০/২৫/৩০ লাখ টাকা দিয়ে ১টি গরু কিনলে জবাহের পূর্বে গরুটির প্রতি কেজির দাম পড়ে কমবেশি ২০০০ টাকা! মাংসের দাম পড়ে +- ২৫০০ টাকা। (যদিও কুরবানির পশুর মাংসের দাম বিবেচনা করা হীনমন্যতা)
যার ফলে এসব গরুর ক্রেতা পাওয়া যায়না এবং অধিকাংশই অবিক্রীত থেকে যায়। দু’একটি বিক্রি হলেও সেগুলো হাঁকানো দামের চার পাঁচ ভাগের একভাগ দামে বিক্রি হয়।
তখন বাকিরা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদে আর সরকারের দোষ দেয়! বলে এতো কষ্ট করে পালন করেও সরকার ন্যায্য দাম দেয়না! তাদের কান্না দেখে মনে হয় যেন- সরকার তাদের বলেছিল- ওহে বৎস্, ঋণ করে হলেও গরুকে আপেল আঙ্গুর মাল্টা কলা খাওয়াও!
©Monir Hossain