বাণীটা কার জানেন?
জ্ঞানতাপস খ্যাত ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ।
শুরুতেই এই ঐতিহাসিক উক্তি দিয়ে কেন শুরু করলাম তা লেখার শেষেই বলব।
এই মানুষটিকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমার নিতান্তই শূন্য বললে কম বলা হবে। যাঁর ব্যাপারে বলা হয় বহুভাষাবিদ। ধারণা করা হয়ে থাকে ৩০ টি ভাষা তিঁনি জানতেন তবে এর মধ্যে ১৮ টি ভাষায় দখল ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ের।
বাংলা ও উর্দূ অভিধানে নিজের জাত চিনিয়ে গেছেন এই ক্ষণজন্মা।
বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআনের বঙ্গানুবাদ করলেও আজো তা বাঙ্গালী জাতির অজ্ঞেয় অবস্থায় আছে।
আজকের এই আধুনিক দুনিয়ায় কে কয়টা ভাষায় পাণ্ডিত্য রেখেছেন? ভাবতে পারেন ১৮ টি ভাষা? আমার কেন জানি একাধিক ভাষা জানা মানুষদের প্রতি অন্যরকম শ্রদ্ধা কাজ করে। একাধিক ভাষা শেখার বা জানার ইচ্ছা জাগে ছোট বেলায় ড. শহীদুল্লাহ এর জীবনী পড়ে।
এইছাড়া সাহিত্য নিয়ে বলতে গেলে বাঙ্গালী জাতিকে কি দেন নাই?
পারস্যের সে হাফিজ আর ওমর খৈয়ামের রুইবাইকে জানাতে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম বোধই ড. সাহেবি করেছিলেন।
এইসবের মাঝে ড. সাহেব আপাদমস্তক একজন সুফী মুসলিমও ছিলেন বটে। উনি ভিতর থেকে যেমন একজন পাক্কা সুফী মুসলিম। বাহির থেকেও অনুরূপ। বেষ-ভূষাও মর্ডান সুফীদের ন্যায় দেখতে ছিলেন।
ভারতের ফুরফুরা সিলসিলার দীক্ষা নিলেও পরবর্তীতে খেলাফত প্রাপ্তও হয়েছেন।
তাসাউফের মোহনায় পড়ে ধর্মীও বহু লিখাও রচনা করে যান।
আরো মুখরোচক লুকায়িত ঘটনা হচ্ছে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হলে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটি লেখনির মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন ত্বরান্বিত হয় অনন্য রূপে।
সেসময়কার কমরেড পত্রিকায় একটি লেখা তিনি লিখেন এইভাবে,
“দ্য ল্যাঙ্গোয়েজ প্রবলেম অফ পাকিস্তান” শিরোনামে বলেন, সেগুলো হচ্ছে এই যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বাংলাভাষী অংশে, যদি বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষা রাষ্ট্র ভাষা হয়, তাহলে সেই স্বাধীনতা হবে পরাধীনতারই নামান্তর।
একথা তিনি বলেন ১৯৪৭ সালের তেসরা অগাস্ট অর্থাৎ ১৪ই অগাস্টের এগারোদিন আগে। এরপরের ভাষা আন্দোলনের কথা ইতিহাসে আমরা জেনেছিলাম কি হয়েছিলো।
তিনিই সর্বপ্রথম যুক্তি-তর্ক দিয়ে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বিবেচিত করার যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
২০০৪ সালের কথা, বিবিসি বাংলা এর জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীর তালিকায় ১৬ তম হোন এই জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ।
আরো বহু গুণে গুণান্বিত এই মহান ব্যক্তিকে কয়জন জানেন? কয়জন বাঙ্গালী উনাকে লালন করেন?
নিজেকে বাঙ্গালী বলে অহংকার করতেন অথচ আমাদের বাংলা একাডেমির জন্য ওনার অবদানের কথা বাঙ্গালী ভুলে গিয়েছে সাথে বাংলা একাডেমীও।
ডা. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি, আজ তাঁর ওফাত বার্ষিকী, অথচ এই শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীকে বাঙ্গালীরাই স্মরণ করা ছেড়ে দিয়েছে।
প্রথমে যে উক্তি দিয়ে শুরু করেছিলাম তার প্রেক্ষিতেই বলতে বাধ্য হচ্ছি।
শুধু মাত্র মুসলিম বলেই বাঙ্গালী এমন সূর্যসন্তানকে ভুলে যেতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। আজ তিনি অন্য ধর্মের হতেন? যদি ধর্ম ছাড়া কেউ হতেন? তাহলে হয়তো ওনার ইতিহাস আরো রঙচঙা হতো।
আর পাশাপাশি বাঙ্গালী অনেক মুসলিমও ওনাকে দূরে সড়িয়ে দিয়েছে শুধু মাত্র ওনি সুফী আক্বিদায় বিশ্বাসী ছিলেন বলে। মাজার পন্থী বলে।
তারপরও এই জ্ঞানতাপসের প্রতি শ্রদ্ধা কিছু বাঙ্গালীর বুকে ক্ষীণভাবে জ্বলে থাকায় তারা ভুলে যায়নি উনার সাহিত্য, ধর্ম, রাষ্ট্র ও বাকিসবের প্রতি অন্তর্নিহিত অবদানের কথা।
আল্লাহ ওনাকে ওনার মর্যাদায় মহিমান্বিত করুক। 💙