সোমবার আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট কমপ্লেক্সে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন: পিপলস অ্যালায়েন্সে অংশীদারদের (এমএইচপি) সাথে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে, আমরা একটি নতুন সংবিধান প্রস্তুতের পদক্ষেপ নেবো – যার খসড়াটি হবে স্বচ্ছ। ১৯৬০ সালের পর থেকে দু দফা সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রণীত সংবিধানই তুরস্কের বর্তমান সমস্যার মূল কারণ। এর আগেও বেশ ক-বার আমরা সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু বিরোধী সিএইচপি’র বিরোধিতায়, তা আর সম্ভব হয়নি। সংস্কার মানে, পরিবর্তন নয়, বরং যুগ ও দেশের মানুষের চাহিদা বা প্রয়োজন মোতাবেক সংবিধানকে নবায়ন করা। শিগগির সংস্কার প্রস্তাবনা প্রকাশ করা হবে। আর আমরা আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলো ১৫ই ফেব্রুয়ারি খুলে দেবো। তবে করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে, তা পুনরায় বন্ধ করে দেয়া হবে।
এছাড়া, তুর্কি প্রেসিডেন্ট মুদ্রাবাজারে তুরস্কের লিরার স্থিতিশীলতার দিকে গুরুত্বারূপ করেন। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুরস্কের সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়েছিলো। তখন এরদোয়ান ও তার সমর্থকরা বলেছিলেন: তুরস্কে অতীতের মতো ভঙ্গুর কোয়ালিশন সরকার ব্যবস্থা ফিরে না আসাটা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ক্ষমতাসম্পন্ন প্রেসিডেন্ট দরকার।
তুরস্কে গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতা আর যেনো বিপন্ন না হয় – এর বিহিত করতেই রাজনৈতিক সংস্কার আনে এরদোয়ান সরকার। ২০১৬ সালের ১০ই ডিসেম্বর তুরস্কের একেপি ও এমএইচপি (রাজনৈতিক দুটি দল) সংবিধান সংশোধনের ২১টি প্রস্তাবে সাংসদদের সই সংগ্রহ করে বিল আকারে পেশ করে। দেশটিতে সংসদে সাংসদরা নিজ দলের প্রস্তাবের বিপক্ষেও ভোট দিতে পারেন। সংবিধানের ৯, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৮৭, ৮৯, ১০১, ১০৪, ১০৫, ১০৬, ১১৬, ১১৯, ১২৫, ১৪২, ১৪৬, ১৫৯, ১৬১ ও ১২৩ আর্টিকেল কেবিনেটের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে ন্যস্ত ছাড়াও প্রেসিডেন্টকে প্রদেশ সৃষ্টির অধিকার দেয়া হয়েছে। ১৯২৩ থেকে বহাল প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা বদলের পক্ষে মত দেয় তুর্কি জনগণ। গণভোটের রায়ের ওপর ভিত্তি করে সংবিধান সংশোধনের পর, ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট পদে ভোটাভুটি হয়। আর এর মধ্য দিয়ে তুরস্কে সংসদীয় পদ্ধতি থেকে প্রেসিডেন্ট শাসিত পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা থাকাকালে তুরস্কের কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান মোটামুটি স্বাধীন ছিলো; যেমন- সশস্ত্র বাহিনী, বিচার বিভাগ, উচ্চতর শিক্ষা বোর্ড, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠান সরকার কিংবা সরকারপ্রধান কারো মুখাপেক্ষী ছিলো না। আর সামরিক দিক দিয়ে মুসলিম জাহানের শক্তিধর এ দেশটিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ছিলো ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল। দেশের নীতি-নির্ধারণী বিষয়গুলো এর সভাপতি প্রেসিডেন্ট এবং সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ও ‘জানদারমা’ প্রধানের সদস্যের হাতে ন্যস্ত ছিলো। নির্বাচিত সরকারের পক্ষে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও দু/একজন সিনিয়র মন্ত্রী। দেশ পরিচালনার নির্দেশনা মূলত ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল থেকেই আসতো। ফলে, তুরস্কের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে’ ক্রমিক নং ১-এ প্রেসিডেন্ট, ২-তে প্রধানমন্ত্রী, ৩-এ জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং ৪-এ তিন বাহিনীর প্রধান বা চিফ অব জেনারেল স্টাফ ছিলেন – যিনি তার নিজের মন্ত্রী, অর্থাৎ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরও সিনিয়র। কামাল পাশা এ বিধান প্রবর্তন করে যাওয়ায় এতোদিন এটা পরিবর্তনে কেউ সাহস দেখায়নি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও লকডাউনের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাবার আমদানি চাহিদা বেড়েছে। এটি সামনে রেখে এ বছর ২০ বিলিয়ন ডলারের খাবার রফতানির পরিকল্পনা করেছে তুরস্ক। ২০২০ সালে খাদ্যশস্য, ডাল ও তাজা সবজি-ফলের ক্ষেত্রে রফতানির উচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করে দেশটি। পাস্তা থেকে জুস তক উৎপাদিত সব রকম খাবারের রফতানির আয় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেড়ে ১৮.৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে ৪.২৬ ডলার উদ্বৃত্তি নিয়ে প্রথমবারের মতো খাবার খাতে প্রতি টন এক হাজার ডলারের বেশি মূল্য ছাড়িয়েছে। তুরস্কের ফেডারেশন অব ফুড অ্যান্ড ড্রিংক ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ইকনুর মেনলিক বলেন: খাবার শিল্পের জন্যে সঙ্কট সদাই আলোচ্য বিষয়। আগে থেকেই মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় করোনাভাইরাস মহামারীতে খাবার শিল্প সহজেই খাপ খাওয়াতে পেরেছে। দুগ্ধজাত খাবার উৎপাদনসহ নতুন নতুন কারখানা চালু করা হচ্ছে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, ইয়েনি শাফাক ও ডেইলি সাবাহ।