সেকুলার আইনে ধর্ষণ করা তো অপরাধ, কিন্তু মনে মনে ধর্ষণ করা কী অপরাধ? প্রশ্নটা অদ্ভুত শোনা যাচ্ছে হয়তো! একটু ভেঙ্গে বলি, একজন নারীকে বা পুরুষকে নিয়ে কুচিন্তা তথা কুকল্পনা করা কী অপরাধ বিবেচিত হবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কর্তৃক আরোপিত সেকুলার আইনে? আমরা জানি এটা বিদ্যমান আইনে অপরাধ বলে বিবেচিত হবার কারণ নেই! কেননা এখানে অপরের কোন ক্ষতি করা হচ্ছে না, মনে মনে কল্পনার জগতে ধর্ষণ করা হচ্ছে মাত্র!
এবার আশা যাক ইসলামি আইনে, ইসলামি আইনে ধর্ষণ ও ‘মনে মনে ধর্ষণ’ উভয়টাই হারাম, নিষিদ্ধ এবং অপরাধ। হ্যাঁ তবে দুইটি অপরাধের শাস্তি একরকম নয়, প্রথমটির শাস্তি জগতেও দেয়া মানবজাতির জন্য বাধ্যতামূলক এবং অপরটির শাস্তি মহাজগতে তথা পরপারে, আল্লাহর ইখতিয়ারাধীন। ইসলামিবিধি কেবল বাহ্যিক বা ফিজিক্যাল অপরাধকে আমলে নেয় না, এর সাথে মনোজাগতিক অনৈতিক পাপ প্রবণতাকে পুরোপুরি নিঃশেষ করার প্রয়াস চালায়, বিলুপ্ত করে সুপ্ত অপরাধপ্রবণতা। পরিশুদ্ধ করে আত্মাকে, মন ও মননকে।
এখানেই সেকুলার আইনের প্রকৃতির সাথে ইসলামী আইনের প্রকৃতিগত বড় পার্থক্য। সেকুলাররা চায় শুধু আইনের মাধ্যমে অপরাধ দমন করতে, তাদের কাজ অপরাধ সংগঠিত হলে শাস্তি দেয়া, শাস্তি দিয়ে থামাতে ব্যর্থ হলে বা অপরাধ ব্যাপক আকার ধারণ করলে সেই অপরাধটাই বৈধ বলে ঘোষণা দেয়া, যেমনটা আমরা আমেরিকায় মদ বৈধকরণ, কানাডায় গাঁজা বৈধকরণসহ সারা পৃথিবীতেই দেখে আসছি। সেকুলারদের হিসেবে অপরাধ যেহেতু দমন করা যাচ্ছে না তাই অপরাধটা আইন করে বৈধ ঘোষণা করলেই তো হয়! তাহলে তো আর অপরাধী থাকছে না! এই হচ্ছে সভ্য সভ্যতার বাস্তবতা, সমাধান, প্রগতিশীলতা।
সেকুলারদের এই সমস্যা বা কাঠামোগত দূর্বলতার বড় কারণ হলো তাদের এই ইহজাগতিক ধর্মে নৈতিক কোন বয়ান নেই, তাদের জীবনে উদ্দেশ্য জানা নেই, নেই মহাজগত বিষয়ে বিশ্বাস বা আলাপ। এই জীবনের পরেও যে আরেকটি বিচারের ময়দানে দাঁড়াতে হবে এই বোধ তাদের কাছে নেই, তাদের কাছে দুনিয়াতে নফসের চাহিদা মেটানোই সব। তাই আমরা ইতিহাসে দেখি খে_লা_ফ_ত যেখানে নৈতিক উন্নয়ন ও আসমানীবিধির শাসনের মাধ্যমে সমাজ থেকে অপরাধ প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে পারে, অপরদিকে ধর্মবিমূখ সেকুলার সভ্যতা অপরাধ দমন করতে না পেরে, অপরাধকেই বৈধ বলে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়। এরপরও যখন আমরা আসমানী প্রত্যাদেশকে অনুসরণে কথা বলবো, সংবিধান হিসেবে গ্রহণের আহ্বান জানাবো তখন আমরা হয়ে যাবো ব্যাকডেটেড আর তারা হবেন প্রগতিশীল।
সেকুলারদের সীমাবদ্ধতা শুধু একটি কিংবা দুটি বিষয়ে নয়, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে জাগতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের এই বিশৃঙ্খলা। এজন্য আমরা দেখি বিচারহীন অবস্থায় যেখানেই সেকুলার শিক্ষায় শিক্ষিতরা সুযোগ পায়, সেখানেই তারা অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ, ঘুষ ও চাঁদা আদায়ে লিপ্ত হয়, সচিবালয় থেকে শুরু করে সরকারি হাসপাতাল সবখানেই ঘুষখোর অফিসারদের দেখা যায়, তারা সবাই সেকুলার প্রতিষ্ঠানের প্রডাক্ট, আর এখানে যারাই নূন্যতম সৎ থাকার চেষ্টা করেন, তারা নৈতিক শিক্ষা পরিবার বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব যার থেকেই হোক পেয়েছেন। একথা অনস্বীকার্য যে বিচারহীনতার বাংলাদেশে যতটা শৃঙ্খলা টিকে আছে তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছেন ধর্মপ্রচারকরা। তাঁদের থেকে ধর্মের শিক্ষা পেয়ে বহু মানুষ সুযোগ থাকার পরেও অপরাধ থেকে দূরে থাকছেন। ইসলাম প্রচার বন্ধ হলে এদেশের অবস্থা যে কী হবে কল্পনাও করা যায় না!
বলতে হয় এই বিকলাঙ্গ সেকুলার মতাদর্শ কেবল আদর্শহীন বিকলাঙ্গ মানুষ তৈরি করছে, এই ডগমা ব্যর্থ হয়েছে সভ্য পৃথিবী উপহার দিতে। বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে অশান্তির দাবানল জ্বেলেছে। নৈতিক, মানবিক, কল্যাণময় পৃথিবী পেতে মানব জাতিকে ফের কোরআনের কাছে ফিরে যেতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই, একথা যত তাড়াতাড়ি আমরা বুঝবো ততই আমাদের কল্যাণ ত্বরান্বিত হবে।