‘কমান্ডো’ মুভি নিয়ে আলাপে যাবার আগে ‘নবাব’ মুভি নিয়ে কিছুটা বলে নেই। ২০১৭ সালে রিলিজ হয় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘নবাব’। যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র না বলে নবাব চলচ্চিত্রকে কলকাতার মুভি বলাই অধিক সংগত হবে, এর সুটিং স্পট ছিলো ভারতে, চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে প্রায় সকল অভিনেতা ও কলাকুশলী ছিলো ভারতীয়। তবে নায়ক ছিলো বাংলাদেশি সাকিব খান।
মুভিটিতে দেখা যায়, ভারত জুড়ে সন্ত্রাসীদের ব্যাপক দৌরাত্ম্য দেখা দিয়েছে। ভারতের একজন নেত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে ভারতীয় বাহিনীকে। ভারতীয় পুলিশকে সহায়তা করতে পাঠানো হয় বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা রাজিব চৌধুরি ওরফে নবাব ওরফে সাকিব খানকে। সাকিব খান ভারতে যেয়ে সন্ত্রাস দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং নেত্রীকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে হেফাজত করে। মুভিতে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা দেখলে মনে হবে বাংলাদেশ-ভারত যেন একই দেশ বা দুই দেশের বাহিনী পুলিশ ভিন্ন কোন বাহিনী নয় নিদেন পক্ষে মেনে নিতে হবে উভয় পরস্পর খুবই বন্ধুপ্রতিম বাহিনী।
এবার আসা যাক কমান্ডো মুভিতে। গণমাধ্যমে উঠে এসে তথ্য ও টিজার মারফত যতটুকু জানতে পারলাম, কমান্ডো একটি বাংলাদেশি মুভি কিন্তু ‘নায়ক’ ভারতীয়। কমান্ডো মুভিতে দেখানো হয়েছে সারা বাংলাদেশ সন্ত্রাসীতে ছেয়ে গেছে। আর এই সন্ত্রাস দমনের জন্য স্পেসাল অপরেশন চালায় ভারতীয় অভিনেতা দেব (দীপক অধিকারী)। ভারতীয় ‘নায়ক দেব তার বাহিনীর নৈপুণ্য বাংলাদেশ থেকে কথিত সন্ত্রাস নির্মূল করে।
নবাব ও কমান্ডো উভয় মুভির মূল থিম এক হলেও দুইটি মুভির মাঝে বড় একটি পার্থক্য আছে। নবাব মুভিতে ভারতীয় সন্ত্রাসীদের দেখানো হয়েছে শার্ট-প্যান্ট পরিহিত সাধারন লেবাসে। কোন বিশেষ ধর্ম বা হিন্দু ধর্মীয় পতাকা, প্রতীক, গে_রুয়া পোশাক দেখানো হয়নি। অপরদিকে কামান্ডো মুভিতে দেব যাদের পরাজিত করে তথা বাংলাদেশের কথিত সন্ত্রাসীদের দেখানো হয়েছে দাড়ি, টুপি, পাগড়ী, পাঞ্জাবি পরিহিত তথা ইসলাম ধর্মীয় লেবাসে। দেখানো হয়েছে সন্ত্রাসীরা ইসলামের কা_লেমার পতাকাবাহী আর তাদের পরাজিত করে দেব অধিকারী। এখানে তাদের উদ্দেশ্যমূলক ইসলাম_ফোবিয়া স্পষ্ট। সন্ত্রাসের সাথে ইসলামকে জুড়ে দেয়া হয়েছে কমান্ডো মুভিতে। আর এক কাল্পনিক ভয়ানক বাংলাদেশের চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। যা মুসলিমদের পাশাপাশি বাংলাদেশেরও ভাবমূর্তি নষ্ট করে।
কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যায়, দুই দেশের সন্ত্রাস নির্মূল করার দৃশ্য দেখাতে ভিন্ন দেশ থেকে নায়ক ভাড়া করে আনতে হবে কেন? দুই দেশের বাহিনী একবাহিনী বোঝানোর কেন হটাৎ করে প্রয়োজন পড়ে গেলো? মুভি বানিয়ে কেন বিষয়টা স্বাভাবিক বানানো হচ্ছে? এর পেছনে কী কোন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে? বিষয়গুলো কী চক্রান্ত নাকি নিছক কাকতালীয়? কেন ভারতীয় গীতিকার সৈকত চট্টোপাধ্যায় গায়ক নবেলকে ‘বাংলা মিলবে কবে’ গান গাইতে দিয়েছিলো। কেন মুভি বানিয়ে ইসলামকে অবমাননা করা করা হবে?
আর প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা ভালো বাংলাদেশের অনৈতিকতার সয়লাব,পরকীয়া,ধর্ষণ,মাদক ব্যভিচারসহ নানা অপরাধের প্রণোদনা যুগিয়ে আসছে এই মুভি ইন্ডাস্ট্রিগুলো। আর তারাই এখন এসেছে একমাত্র সত্য ও কল্যানময় ধর্ম ইসলামের চিহ্নসমূহ প্রশ্নবিদ্ধ করতে। পরিশেষে বলবো একটি সুন্দর বসবাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী গড়ার জন্য বিদ্যমান মুভি ইন্ডাস্ট্রির আমূল সংস্কার ও ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।