শীর্ষ আলেমদের মূর্তি-ভাস্কর্য নিয়ে ফোতয়া কেবল ফোতয়াই নয়, এটা সরাসরি সেকুলারদের বুকে আঘাত বললেও একচুল পরিমাণ বাড়িয়ে বলা হবে না। ইস্যুটা যেহেতু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে তাই আওয়ামী লীগ অখুশি হবে বেশ স্বাভাবিক। তবে শুধু আওয়ামী লীগ না, আওয়ামী লীগ বিরোধী অন্যান্য বাম-সেকুলারদের জন্যেও এই ফোতয়া মেনে নেয়া সম্ভব না, এমনকি তাদেরকেও ক্রুদ্ধ করবে, হয়তো কেউ কেউ মনের অভিব্যক্তি ডা: জাফরুল্লাহ’র মতো প্রকাশ করবে আবার কেউ বা আপাত চুপ থাকার নীতি গ্রহণ করবে।
এই সেকুলার মানসপট বুঝতে আমাদের সেকুলারদের মূল চেতনার দিকে তাকানো প্রয়োজন, “সেকুলারিজম কখনো সরাসরি ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তাকে গ্রহণ বা প্রত্যাখান করতে বলে না, সেকুলারিজম সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্র থেকে ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব কে অস্বীকার করার কথা বলে।”
অর্থাৎ সেকুলার ডগমা মতে রাষ্ট্রের সংবিধানে ঐশি বাণীর কোন স্থান থাকবে না, মানুষে কী করবে আর কী করবে না তা নির্ধারণ করার অধিকার আল্লাহকে দেয়া যাবে না। সেটা নির্ধারণ করবে মানুষ। আর কেউ একান্ত ধর্ম পালন করতে চাইলে ব্যক্তিগত পরিমণ্ডলে পালন করতে পারবে, তবে ধর্মের সীমা নির্ধারণ করে দেবে এই সেকুলারিজম নিজেই।
এজন্য সেকুলারদের বরাবরই বলতে দেখা যায়, আলেমদের কাজ হলো কেবল ব্যক্তিগত ইবাদত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলা, নামাজে হাত কোথায় বাঁধবে বুকে, নাভির উপরে নাকি নিচে এটা নির্ধারণ করবে আলেমেরা, রোজার মাশয়ালা বর্ণনা করবে। এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকলে সেকুলারদের কোন মাথা ব্যথা নেই। তবে আলেমরা রাষ্ট্র, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, সমরনীতি,কূটনীতি প্রভৃতি বিষয়ে কথা বলার অধিকার পাবে না। এগুলো আল্লাহ প্রদত্ত ধর্মের কাজ না! এগুলো দেখবে তারা। এক্ষেত্রে সেকুলাররা আল্লাহর আনুগত্যের পরিবর্তে পশ্চিমা দর্শন ও নিজেদের খায়েসাতের আনুগত্য করবে এবং সকল মানুষের উপর সেই আইন ও চেতনা চাপিয়ে দিবে।
এখন প্রাণীর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে আলেম সমাজের সম্মিলিত স্পষ্ট ফতোয়া সেকুলার রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ধর্মীয় পন্ডিতদের সীমালংঘন ঠেকবে। এটাকে তারা বিবেচনা করবে রাষ্ট্রের কাজে ধর্মের হস্তক্ষেপ হিসেবে। তবে মজার বিষয় হলো, এদেশের গনমানুষ যেহেতু ধর্মপ্রাণ তাই সেকুলার রাজনীতিবিদরা পাবলিকলি খোল্লামখোলা জীবনের নানা দিক থেকে ধর্ম অস্বীকারের কথা বলে না, বলা সমীচীন মনে করে না। তাই তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে সিংহভাগ মানুষের চেতনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আলোচিত ধর্মবিরুদ্ধ কাজ করা কঠিন। কেননা এতে ধার্মিক জনগন তাদের পাপাচারী হিসেবে অধিক ঘৃণা করবে। আবার ধর্মের সিদ্ধান্ত মানতে গেলে তাদেরকে সেকুলার আদর্শ বিসর্জন দিতে হবে। এখানে রাষ্ট্রের কাজে বা সংস্কৃতি নির্ধারণে ধর্মকে স্পেস দেয়া হয়ে যায়।
এখন সেকুলাররা ফতোয়া মানতে গেলে সেকুলার ডকট্রিনকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে, আবার না মেনে গণমানুষের সেন্টিমেন্টের বিপরীতে দাঁড়ালে সেকুলারদের ধর্ম বর্জনের খোলস বের হয়ে আসছে, তারা যে মুসলমানদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে ধর্মবিরুদ্ধ কাজ করে ইসলামের সীমা অতিক্রম করছে তা আরও মানুষের কাছে স্পষ্ট হবে। মুসলিমদের জন্য সেকুলার রাজনীতিবিদদের ধোঁকা বুঝতে সহজ হবে, সুযোগ ঘটবে বিকল্প চিন্তার। আর প্রাণীর ভাস্কর্য অপসারিত হলে তা তো অবশ্যই ইসলাম ও মুসলিমদের বিজয়।
আলেমদের এই ফোতয়ার কৌশল সবদিক থেকেই মুসলিমদের ফেভারে ফল বয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ। এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে ইসলামের প্রকৃতচিত্র তুলে ধরে রাষ্ট্রের ধর্মবিরুদ্ধ কাজের বিষয়ে ফোতয়া প্রদান আলেম সমাজ অব্যাহত রাখলে সেকুলারপন্থা ক্রমশ দুর্বল ও জনবিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য। আর জাতিও জানতে পারবে মানবকল্যাণে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের প্রকৃত চিত্র।