ম্যাক্রোন গিয়েছিল জেরুজালেম। সেখানে ‘সেইন্ট আন্নে’ নামে একটা চার্চ (চ্যাপেল) আছে। চার্চের ভেতর ছিল কিছু বন্দুকধারী ইসরাইলি সৈন্য। এদের দেখেই ম্যাক্রোন চেঁচিয়ে উঠল। বলল : বেরিয়ে যাও! কেউ যেন কাউকে উস্কানি না দেয়। উত্যক্ত না করে। আমরা সবাই আইন জানি। বেরিয়ে যাও! বেরিয়ে যাও! শত শত বছরের আইনকে সম্মান করো! বেরিয়ে যাও! এই আইন আমার জন্য পরিবর্তন হবে না!
একই ঘটনা ঘটেছে জাক শিরাক (Jacques Chirac) এর সময়ে, ১৯৯৬ সালে। তিনিও ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তখনও একই চার্চে ইসরাইলি পুলিশ ঢুকেছিল। জাক শিরাকও ধমকে উঠল। তার ভাষ্য : তোমরা কী চাও আমি বিমান ধরে ফ্রান্সে ফেরত যাই! বের হও! এখুনি বের হও! আমি ফ্রান্সের মাটিতে কোন অস্ত্র চাই না!
প্রবন্ধটা পড়ে নড়েচড়ে বসলাম। ঘটনা কী! জানলাম এই চার্চটা ফ্রান্সের সম্পত্তি। এ ছাড়াও আরো তিনটি, মোট চারটি চার্চ আছে জেরুজালেমে, যাতে ফ্রান্সের সার্বভৌমত্ব চলে। কিন্তু ক্যামনে! এর এগুলান পাইলো কীভাবে?
ইতিহাসটা এমন, ১৮৫৩-১৮৫৬ সাল অবধি ক্রিমিয়ান যুদ্ধ হয়েছিল। সে যুদ্ধে এক পক্ষে ছিল সে সময়ের রাশিয়া। বিরুদ্ধে পক্ষে ছিল- সারদিনিয়া (Sardinia), যুক্তরাজ্য বা ব্রিটিশ, ফ্রান্স ও ওসমানি সালতানাত বা অটোম্যান অ্যাম্পেয়ার। বলে রাখি, এখানে মূলশক্তি ছিল ওসমানিরা। বাকিরা নিজ স্বার্থে যোগ দেয়।
১৮৫৬ সালের মার্চে যুদ্ধ শেষ হয়। ওসমানিরা জিতে যায়। সাহায্যকারী দল হিসেবে ফ্রান্সকে সেইন্ট আন্নে চার্চ উপহার দেয় ওসমানিগণ। আর এই উপহারের জোরেই জেরুজালেমের বুকে রয়েছে ফ্রান্সের নিজস্ব সম্পত্তি। বিষয়টা ভাবুন, ওসমানিদের দেয়া উপহারে ফ্রান্স গলা উঁচিয়ে চেঁচায়। ইসরাইলি সৈন্য লাথিয়ে বের করে। তারা বলে শত বছরের আইনকে সম্মান করতে। অথচ হাজার বছর ধরে বসবাসরত মুসলিমরা সেখানে হয় উদ্বাস্তু, গৃহহীন, যাযাবর, উড়ে এসে জুড়ে বসা!
আচ্ছা, এরা যে শত বছরের আইনকে সম্মান জানাতে বলে, এরা কীভাবে হাজার বছরের মুসলিম মূল্যবোধকে অপমান করা, বারবার অপমান করাকে বাক-স্বাধীনতা বলে? আইন কী শুধু তাদের জন্যই! সম্ভবত শরৎচন্দ্র বলেছিল- দেবতারা বাস করে সাহেব পাড়ায়, গরিব পল্লীতে ভগবান মিলে না। আইন, সার্বভৌমত্ব, জাতীয়তাবোধ, ভিটেমাটির অধিকার কী শুধু রক্তচোষা ঔপনিবেশিক দস্যুদের জন্য!
ভয়ানক তথ্যটা কী জানেন, ক্রিমিয়ান যুদ্ধ কিন্তু মুসলিমদের স্বার্থে হয়নি। সে সময়ে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান ছিল রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়। রাশিয়া তাদের স্থান দিতে চায়নি জেরুজালেমে। রাশিয়া চাইছিল পূর্ব-অর্থাডক্স-চার্চ জেরুজালেমে ঘাঁটি গাড়ুক। ইসলামে শিয়া ও ওহাবি যেমন দুটি ফের্কা বা দল, তেমনি রোমান ক্যাথলিক আর অর্থাডক্স হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মের দুটি ফের্কা।
হায়রে ওসমানি! বুকটা চিনচিন করে। তোমরা তাদের জন্য যুদ্ধ করো, তাদেরকে আশ্রয় দাও, আজ তারাই তোমাদের সাম্রাজ্য-খেলাফতকে ধ্বংস করেছে। হে ওসমানিয়াত! তোমরা যে নবীর জন্য পুরো পৃথিবী দিতে প্রস্তুত ছিলে, আজ সেই নবী সাল্লালাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে আঘাতের অপচেষ্টা করে তারা, এককালে তোমাদের আনুকূল্য পাওয়া অকৃতজ্ঞেরা।
ওসমানিরা লড়েছিল ইসলামের জন্য, মানুষের জন্য, সত্যের জন্য, সুন্দরের জন্য, মুসলিম উম্মাহর জন্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী আগলে রেখেছিল ইসলামকে। আর এই ওসমানিদের ধ্বংসের পিছনে মূলশক্তি ছিল উগ্রগোত্রবাদ। এই গোত্রবাদ থেকে আজকের ইসরাইল। সৌদিও সেই গোত্রবাদের ফসল।
একদিকে উগ্র-জায়োনিজম, অন্যদিকে শিরিক-বেদাতের মদে মাতাল সৌদ-ওহাবি জোট। একটা বাহিরে, অন্যটা ভেতর থেকে। দুটাই ভয়ংকর। তবে পেটেরে ছুরি পেট কাটলে আটকানোর সুযোগ থাকে না। আজকে এই ইসরাইল-সৌদ কিন্তু জমজ ভাই। ইসরাইলের বিপক্ষে যুদ্ধ করা হারাম ফতোয়াও দেয় সৌদি-ওহাবিরা।
আহ্ ইসলাম! বড় অসহায় তুমি। একজন সুলতান আব্দুল হামিদ খুব বেশি প্রয়োজন তোমার। আজ বুঝতে পারি, ইমাম আলা হযরত কেন সুলতান আব্দুল হামিদকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন- পৃথিবীর মাটিতে সুলতান (ন্যায়পরায়ণ শাসক) আল্লাহ্র ছায়া!
ফিরে এসো ওসমানিয়াত! ফিরে এসো! এসো, একসাথে আবার চেঁচাব- ইয়া আব্দুল কাদির শাইয়ান লিল্লাহ !