না জানা তক আপনি বায়াসড থাকবেন। পৃথিবীতে জন্মেছেন, না জেনে বুড়ো হয়ে মরে গেলে কিছু হলো? হৃদয়ের মুক্তি, চিন্তার মুক্তি, সংস্কারের মুক্তি খুবই জরুরি।
১. পুরো দেশের পূর্ণ জনসংখ্যার ৩৩% মেরে ফেলেছিল।
২. কীভাবে মেরেছিল? মূলত গলা কেটে।
৩. কাটা মাথাগুলো কী করেছিল? কী আর করবে? প্রদর্শন করেছিল। পুরো আলজেরিয়ায় ১৮৩০ সাল থেকে ১৮৭৫ তক যারা জন্মেছে, তারা কাটা মাথাই দেখেছে। যত্রতত্র।
তার মধ্যে কয়েক শত মাথা শুকিয়ে ফ্রান্সে নিয়ে গিয়েছিল। ফ্রিডম অভ এক্সপ্রেশন যেখানে শোভা পায়, সেখানে, সেই জাদুঘরগুলোয় শোভা পেয়েছিল মুসলিমদের কাটা মাথা।
কবে? ১৮৩০ সালের পর থেকে।
কখন তক? এখনো। আজো।
যেসব জাদুঘরে ফ্রিডম অভ স্পিচ, আর্ট, লিটারেচার ও কালচার শোভা পায়, প্রস্ফুটিত হয়, সেখানে রাখা আছে আলজেরিয়ান মুসলিমদের মাথা। আজো। ফরাসিদের ব্যঙ্গচিত্র আর কাটা মাথার মধ্যে কোন তফাত নেই। দুটাই প্রদর্শনের বিষয়। দুটাই গুরুত্বপূর্ণ। দুটাই তাদের আত্মপরিচয়। যে মানুষটা ফ্রিডম অভ আর্ট অ্যান্ড লিটারেচার দেখে বাহবা করছে, সে-ই আলজেরিয়ার মুসলিমদের মাথা সেই একই জায়গায় দেখছে। এই প্রদর্শন দেখে বড় হয়েছে ফরাসি জাতি। তাদের কাছে যেমন কাটা মাথা প্রদর্শন ও ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনে কোন তফাত নেই, আমাদের কাছেও নেই।
২০১১ সালে আলজেরিয়ান একজন ইতিহাসবেত্তা এমনই এক ব্যাচ মাথা, যা প্রদর্শিত হচ্ছিল ফ্রেঞ্চ মিউজিয়াম অভ মান এ, ২৪ জনের মাথা ফেরত আনার চেষ্টা শুরু করেন। স্বাধীন আলজেরিয়ায় সেই বিশ্বাসীদের পবিত্র মাথা ১৫০ বছর পর ফেরত আসে।
এই ২০২০ সালে আলজেরিয়ার সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট ক্রন্দনরত অবস্থায় তা রিসিভ করেন। তিনটা মিগ বিমান সেই মস্তকবাহী বিমানকে গার্ড দিয়ে নিয়ে আসে। তোপদ্ধণি ওঠে আলজেরিয়ার সেনাবাহিনী থেকে। নৌবাহিনীও গোলা ছোঁড়ে। প্রবল সম্মানের সাথে নিয়ে আসা হয় তাদের অস্তিত্বর শেষবিন্দুকে। একদিন প্রদর্শনের পর দাফন করা হয় সসম্মানে।
তাঁরা বলেন, তাঁদের বাকী অস্তিত্বগুলোও সসম্মানে নিয়ে আসতে হবে। কলোনির যুগটার তলানিটুকু ফেরত নিতে হবে।
ফরাসিদেশে মাথা কাটার পর অপহৃত আলজেরিয়ার এক একজন মুসলিমের মাটিতে দাফন হতে দেড়শো বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, এবং এই ফ্যাক্ট নিয়েই ফ্রান্স চলেছে, পৃথিবী চলেছে, আমরাও চলছি। এবং শত শত মাথার মধ্যে তারা কিছু সংখ্যক।
৪. মুসলিমদের মাথা কাটার পর তাদের জননেন্দ্রীয়ও কাটা হতো। কেটে তা কাটা মাথার মুখে পুরে দেয়া হতো। এরপর তোলা হতো ছবি। নেটে পাবেন।
৫. আচ্ছা, ৩৩% মানুষকে যে মেরে ফেলেছে, বেশিরভাগই তো ছিল পুরুষ।স্বাভাবিক। তাহলে নারীদের কী করেছিল তারা? গ্রামগুলোতে, আাক্ষরিক অর্থে কুঁড়েঘরে তো থাকতো তখন বড়জোর নারীরা। কী হয়েছিল আমাদের সেই বোনদের সাথে? ছবি আছে। নেটে পাবেন।
৬. যারা ৪৫ বছর ধরে কেবল মাথা কেটে গেছে, ৪৫ বছর ধরে কেবল মুসলমানি করা যৌনাঙ্গ কেটে গেছে, ৪৫ বছর ধরে কুঁড়েঘরে ঢুকে ঢুকে মা বোনদের নগ্ন ছবি তুলেছে- তারা বাকী সাধারণ মানুষের সাথে কী করেছে? নিজের দেশে কেমন ছিল প্রায় সোয়াশত বছর আলজেরিয়ানরা?
যখন আলজেরিয়ায় ফ্রান্স সরকারিভাবে এসব করছিল, তখন আক্রান্তের পরিচয় ছিল, আলজেরিয়ান। আফ্রিকান। মুসলিম নয়। তারা তো উসমানিয়া খিলাফাতের অনুগত ছিল, তাদের পরিচয় কিন্তু খিলাফাতের পপুলেশন হিসাবে কখনো বলা হয়নি। কখনো কেউ কিন্তু বলে না, আলজেরিয়ার সূফিদেরকে এ অবস্থা করা হয়েছিল। আক্রান্তকারীর পরিচয় ছিল, কলোনিয়াল ফ্রেঞ্চ, ইমপেরিয়াল ফ্রেঞ্চ। ফ্রেঞ্চ নয়। ক্রিশ্চান নয়। ইহুদি নয়। নাস্তিক নয়।
যখন পনের লক্ষ ঘটনা আলজেরার এ ঘটে, তখন আক্রান্তর পরিচয় হয়ে পড়ে ‘আলজেরিয়ান’ এবং হত্যাকারীর পরিচয় হয়ে পড়ে ‘ফ্রেঞ্চ’।
যখন বিচ্ছিন্ন দু একটা ঘটনা ফ্রান্সে ঘটে, তখন ফ্রেঞ্চ নাগরিক হলেও আক্রমণকারীর পরিচয় আর ফ্রেঞ্চ থাকে না, ‘মুসলিম’ হয়ে যায়। আর আক্রান্তর পরিচয় হয় শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট, কার্টুনিস্ট। তার পরিচয় বিদ্বেষী রয় না।
খোদারই কসম, আলজেরিয়ায় ওই খতনা করা লিঙ্গ ছিন্নমস্তকে পুরে দেয়া লোকগুলোর মধ্যে কোন কবি কি ছিল না? ছিল না কোন শিল্পী? কেউ কি শিক্ষক ছিল না? কেউ কি সাহিত্য পড়াতো না? কেউ কি সূফিত্বের মানুষে মানুষে সহাবস্থান শেখাতো না?
আর কত! আর কত!
লেখা বড় হচ্ছে? হোক। এসব নিয়ে বারবার লেখা যায় না। কেন উসকে দেয়া হচ্ছে পুরো ফরাসি জাতিকে? কেন পুরো নেটিভ ফরাসিদেরকে ভয়ানক ইসলাম বিদ্বেষী করে তোলা হচ্ছে? কারণ একটাই। এরা এদের মত থাকতে চায়। এরা যা করে এসেছে, করে এসেছে। আরো করবে। এখনো করছে আফ্রিকার ২০ টা দেশকে সরাসরি অর্থনৈতিক লুট। আরো করবে। কিন্তু ফ্রান্সে তারা ঝামেলা চায় না। ফ্রান্সে তারা মুসলিম চায় না।
ওটা তাদের স্বর্গরাজ্য। ওখানে মুসলিম চলবে না। থাকলে ফরাসি হয়ে থাকতে হবে, মুসলিম হয়ে না। ফ্রান্সকে মুসলিমমুক্ত করার পথই হল একটা, ফরাসি নাগরিক মুসলিমদের উস্কে দেয়া, যেন তাদের মধ্যে ক্ষিপ্ত হয়ে অন্তত দু একজন অন্তত দু একটা মাথা কেটে নেয়।
উস্কে দেয়া ফ্রান্সের নেটিভ হোয়াইটদের, যেন তারা মুসলিমদের মুসলিম জীবনযাপনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এমন একটা অবস্থা তৈরি করা, যেন মানে মানে মুসলিমরা পাড়ি জমাতে পারে অথবা ইসলামকে ছেড়ে দিতে পারে। আচরণ ও কর্মকান্ডে ফরাসি হয়ে যেতে পারে। এরা এছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করবে না। এরা এদের মত থাকতে চায়।
আজকে একটা দুটা বিচ্ছিন্ন ঘটনায় কিছু মানুষ খুব সহজে মুসলিমদের বর্বর এবং অসভ্য বলে। আমরা মাথা দুলিয়ে সায় দেই। ফরাসিরা জাতিগতভাবে যা করেছে, তা?
ফ্রান্সে যে মুসলিম যা করেছে, অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে করেছে। আবেগ থেকে করেছে। ক্ষিপ্ত হয়ে করেছে। ফ্রান্স প্রাতিষ্ঠানিকভাবে,রাষ্ট্রীয়ভাবে যা করেছে এবং যা প্রদর্শন করেছে, তা?
কেন কিছু হলেই তাদের সব বাদ দিয়ে রাসূল দ.’র উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গচিত্র সরকারি ভবনগুলো থেকে ঝুলিয়ে দিতে হয়, প্রিন্ট করতে হয়, জানেন?
কারণ, ‘সভ্যতা’ দিয়ে সবকিছু ঢাকা যায় না। তারা মুসলিমভীত নয়, তারা আত্মপরিচয়ভীত। তারা যা করেছে, যা আজো করছে, ওইটুকুই তাদের প্রবল ভীত হবার জন্য যথেষ্ট। টাইরান্টরা, ডেসপটরা, অত্যাচারীরা সব সময়ে ভীতই হয়।
যদি আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলো বলে, আমাদের কাছ থেকে কেড়ে যা নিয়েছ, ব্যবসা করে নয়, অন্যায় করে ও প্রতারণা করে যা নিয়েছ, শুধু সেটুকু ফেরত দাও- ফ্রান্সে একটা ইঁটও কি বাকি থাকবে? আইফেল টাওয়ারের একটা নাট বল্টুও কি বাকি থাকবে?
অত্যাচারিত তো হিসাব চাওয়া শুরুই করেনি।
ফ্রান্সের ইসলাম বিদ্বেষ, মুসলিম বিদ্বেষ, স্বয়ং রাসূল দ.’র প্রতি বিদ্বেষের মূল কারণ এই একটা। ভীতি। হিসাব চাইবার ভীতি। হাজার হলেও, খোদ্ নেটিভ সাদাচামড়ার ফ্রেঞ্চদের মধ্যে লক্ষাধিক মুসলিম এখন।
যে ইসলামের এই হাল তারা করেছিল, সেই ইসলাম সেই ফরাসি জাতির মন জিতে নিচ্ছে, এটা তো তারা হতে দিবেনা। যদি একবার হিসাব চাওয়া হয়? হিসাব চাইতে তো তারা দিবে না। শক্তি তাদের আছে, এখনই তো সময় মুসলিমমুক্ত করার নিজ দেশকে। হিসাবমুক্ত করার।