কুরবানী ইদ। বলা ভালো এটা নিরীহ পশু হত্যার মচ্ছব। এক দিনেই ঝরে যায় হাজার হাজার অবলা প্রাণ। আহ! তো কী করা লাগবে? পশুহত্যা বন্ধ করতে হবে। চলুন একটু দেখি পশুহত্যা বন্ধ করলে মানবতা কতটুকু রক্ষা হয়।
১০০ গ্রাম মাংসে আছে ৫৯২ ক্যালরি, সমপরিমাণ গমে আছে ৩৩৯ ক্যালরি। প্রায় দ্বিগুণ। আজকে যদি আমরা প্রাণিজ খাদ্যগ্রহণ অফ করে দেই, তো সবজির উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। বলা ভাল আরো বহুগুণ বৃদ্ধি করতে হবে।
কিন্তু সমস্যা হলো পৃথিবীর মোট ভূখন্ডের দুই তৃতীয়াংশ চাষ অযোগ্য। যেমন নেপালের পাহাড়ি ভূমি। পৃথিবীজুড়ে এরকম হাজার হাজার পর্বতাঞ্চল রয়েছে। তারপর আছে মরুভূমি। সেখানেও চাষ করা যায় না। দুই মেরুর শীত প্রধান দেশগুলোতেও নির্দিষ্ট কিছু ফসল নির্দিষ্ট সময়ে হয়। এর বাইরে হয় না।
তো চাষাবাদ বৃদ্ধির জন্য কী করা লাগবে? এসব অঞ্চলগুলো চাষের আওতায় আনতে হবে। আচ্ছা একটা কথা। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সংকট কী? ঠিক কী কারণে কেয়ামতা ছাড়াই পৃথিবী ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে? গ্রিন হাউজ গ্যাস- রাইট?
একদম সহজে বললে- মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা সবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত। তো আমরা যে আলো দেখি, রোদের আলো, চাঁদের আলো কিংবা আপনার ঘরের লাইটের আলো, তার সবই এরকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোর ফোটা মিলে মিলে বড়সড় আলো হচ্ছে। কিন্তু আলোর এই ফোটাগুলোকে ফোটা বলে না, বলে ফোটন।
আপনার, আমার, পৃথিবীর প্রতিটা বস্তুরই কিছু না কিছু শক্তি থাকে। তা আলোরও এরকম কিছু আছে। তার মাঝে একটা হল আলো তাপ তৈরি করে। ঠিক ভর দুপুরে টিনের চালে উঠেছেন কখনো? একদম শুটকি ভাজা গরম হয়ে থাকে, তাই না? তারপর আবার আপনি আপনার শখের বাইকটা বাইরে রেখে শপিং এ গেলেন, এসে দেখেন বাইক তো আর বাইক না, ডিম ভাজার ফ্রাইপ্যান হয়ে আছে। ঠিক?
চৈত্রের ভর দুপুরে রিকশায় চড়ে ঊঊঊঊঊঊ বলে চিক্কুর মারার অভিজ্ঞতা হয়নি, এমন লোকের সংখ্যা আর এলিয়েনের সংখ্যা মনে হয় সমান। তাই না?
আচ্ছা এমনটা কেন হয়? অইতো সব নষ্টের মূল সেই আলো। আলো পড়ে তা তাপে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে। এই রূপান্তর প্রকৃয়ার বাহ্যিক দিকটা তো আমরা নিজেদের পশ্চাদ্দেশে অনুভব করতে পারি। বাট এর অভ্যন্তরীণ একটা চেঞ্জ হয়। সেটা হলো আলো যখন তাপে পরিণত হয়, তখন আলোর ফোটনগুলো বড় হয়ে যায়। অর্থাৎ তাপের ফোটন আলোর ফোটনের চেয়ে বড়।
হাড়িতে মুখ দিয়ে গলা আটকে গেছে এমন বিলাইবাবু দেখার সৌভাগ হয়েছে? না হলে জীবনের ষোলো আনাই বৃথা। যাক গে, তা বলছিলাম অই আটকে যাওয়ার ব্যাপারটা আরকি। বেচারা নিজের মাথার চেয়ে ছোট পাতিলে হানা দিয়েছে, সাজাটাও হাতে নাতেই পেয়েছে।
আমাদের আলোর ফোটন আর তাপের ফোটনের ব্যাপারটাও সেম। আলোর ফোটন যেহেতু টিঙটিঙে, যেখানে সেখানে সেঁধিয়ে যেতে পারে। বাট যখন সে বড় হয়ে যায়, তাপের ফোটন, সেটা কিন্তু সেখানে সেখানে ঢুকতে পারে না। বাট আলো হয়ে ঢুকেছিল, তখন ছোট ছিল, বুঝে নি। তাপে পরিণত হয়ে সেটাই তো এখন বড় হয়ে গেছে, তা বেচারা এবার বেরুবে কিভাবে?
বের হতে পারে না। আর এভাবেই তাপ বাড়তে থাকে। আলো আসে, এসে আটকে যায়। কিন্তু নামটা কত সুন্দর দেখেছেন? গ্রিন হাউজ। জুতার পালিশের মত চকচকে কালো লাল মিয়ার মত। পৃথিবীর চৌদ্দটা বাজিয়ে দিচ্ছে, আবার নাম গ্রিন হাউজ! কিন্তু কেন?
………
ইউরোপ ও মেরুঅঞ্চলে যখন শীত নামে, পেজা তুলার মত ধবধবে সাদা তুষার আপনার আমার মত ট্যুরিস্টদের দিলে প্রেমের আবহ তৈরি করলেও, গাছের কিন্তু বারোটা বাজিয়ে দেয়। অই এলাকার লোকজন খাবে কী? শীত গেলে আবার চাষাবাদের চারাই বা আনবে কোত্থেকে?
এজন্য তার যেটা করে- কাঁচের বড় বড় ঘর বানায়। তার ভিতর গাছ লাগায়, রোদ এসে কাঁচ ভেদ করে ঢুকতে পারলেও সেটা একটু পর যখন তাপে পরিণত হয়, বেচারা কাঁচ বেয়ে বের হতে পারে না। কারণ এখন সে ফুলে গেছে। তাপটা ভিতরে থাকে, গাছগুলো কনকনে শীতে বেঁচে যায়।
এখন পৃথিবীর এক নম্বর শত্রু এই গ্রিন হাউজ গ্যাস, যার বেশিরভাগই আসে মিল-ফ্যাক্টরি থেকে, কিছু আসে গ্রিন হাউজগুলো থেকে। কারণ গ্রিন হাউজের সংখ্যা খুবই কম। বাট আমরা যখন গরু খাওয়া ছেড়ে পুরোপুরি ভাল মানুষ হয়ে যাব, আমাদের সবজির চাহিদা মেটানোর জন্য গোটা পৃথিবী চাষের আওতায় আনতে হবে। অই মেরু অঞ্চলগুলোও, সেখানে পুরোটা গ্রিন হাউজ বানিয়ে ফেলতে হবে। নাহয় খাব কী?
তখন গরু-ছাগলের মানবতা রক্ষে হবে তা নিচ্চিত, কিন্তু আপনার আমার কী হবে? এইত গেল একটা।
………
এক পাউন্ড গম উৎপন্ন করতে মোটামুটি ৬০ পাউন্ড পানি লাগে। এক পাউন্ড আধাকেজির একটু বেশি। এই পানিগুলো আসে মাটির নিচ থেকে। এগুলোতে লবণের পরিমাণ বেশি। বৃষ্টির পানি দেখেন না একটু কেমন যেন স্বাদ? ওটা হয় কারণ ওতে লবণ নাই।
তো আমরা যখন সেঁচ দেই, ভূতলের লবণযুক্ত পানি দিয়ে দেই। এসব লবণ আবার সবজি সাহেবরা খায় না, এগুলো মাটিতেই থেকে যায়। যদি বৃষ্টি হয়, ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আবার পরের সিজনে চাষ করা যায়। কিন্তু যদি বৃষ্টি না হয়?
গতবছর ভারতের চেন্নাই, রাজস্থানের হাজার হাজার মানুষ শহর ছেড়ে যেতে হয়েছে দেখেছেন? কারণ পানি নেই। ভূগর্বে তো আর কারও বাবার পাম্প নেই যে অনবরত জল দিবে। পানির স্টক সীমিত। যদি এগুলো মাত্রাতিরিক্ত তুলে ফেলা হয়, তবে ভূপৃষ্ঠে প্রচুর লবণ জমবে, জমিতে চাষ করা যাবে না। পাশাপাশি নিচের পানিও ফুরিয়ে আসবে।
‘জল-খাবারের’ জল কিংবা খাবার কোনোটাই আর থাকবে না। উপরে খাবার গজাবে না, নিচ থেকেও জল আসবে না। এসব তেমন সমস্যা না। গরু-ছাগলগুলো তো বেঁচে গেল!
দুইটা।
………
আমেরিকার উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিশাল বনাঞ্চল। সেখানে সুন্দর সুন্দর হরিণ দলে দলে ঘুরে। দৃশটা দারুণ না? হ্যাঁ। তারা খায়-দায় ঘুরেফিরে, প্রকৃতির রাজ্যে বিচরণ করে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- মার্কিন প্রশাসন দশ বছর ধরে জরিপ চালিয়ে দেখতে পেয়েছে সেখানে প্রতি স্কয়ার মাইলে ২০ টি হরিণ থাকলে তারা যে পরিমাণ ঘাস খাবে, তাতে অর্ধেক তৃণভূমি ‘নাই’ হয়ে যাবে।
স্কয়ারমাইল প্রতি ৪০ টা থাকলে আরও অর্ধেক হারিয়ে যাবে। আর পঞ্চাশ বছর পর গোট তৃণাঞ্চলই উধাও হয়ে যাবে, সাথে হরিণ তো যাবেই, তাই না? সেখানকার আরও হাজার হাজার প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
তো সমাধান কী? সমাধান হচ্ছে শিকারি! অর্থাৎ গোটা বিশ্বই একটা সার্কল, শিকার ও শিকারির। আজকে যে শিকারি, আগামিকাল সে-ই শিকার হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই পৃথিবীটা টিকে আছে। তো শিকারি যদি ভালো মানুষ হয়ে যায়, এতে সে তো যাবেই, যাদেরকে দয়া দেখাতে ভালোমানুষ সেজেছিল, তাদেরকেও নিয়ে ডুববে।
এখন প্রসাশনের সামনে পথ হচ্ছে সেখানে শিকারি কুকুর, হায়েনা ছেড়ে দেওয়া, তাতেও না হলে মানুষ কিছু হরিণ মেরে খেয়ে ফেলতে হবে। এতে হয়ত মানুষ ও হরিণ উভয়ই বেঁচে যাবে, বাট মরে যাবে মানবতা!
এরকম আরও কয়েকশ আছে, মানবতা লাগবো?