যখন সব প্রস্তুতি নেওয়া শেষ- বিখ্যাত সেই কামান যা আক্ষরিক অর্থেই সেযুগের ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইলতুল্য, নৌবহর, নৌঘাটি- সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ তার মন্ত্রী আহমদ পাশাকে তার শায়েখ শামসুদ্দীন আকা বেগের নিকট পাঠিয়েছিল দোয়ার দরখাস্ত করতে, এবং যদি সময় থাকে তো অভিযানে উপস্থিত থাকতে। এই শায়খ শামসুদ্দীনকেই পশ্চিমারা ‘মিস্টেরিয়াস শায়েখ’ নামে উল্লেখ করে থাকে।
শায়খ খুব খুশি হলেন, দোয়া করলেন এবং বিজয়ের সুসংবাদ দিলেন। সেই সাথে কোন তারিখে, কোন সময় ইস্তাম্বুল বিজয় হবে সেটাও বলে দিলেন!! আরও বললেন সুলতান যখন শহরে প্রবেশ করবে আহমদ পাশা থাকবে তার পাশে।
পুরোদমে যখন যুদ্ধ চলছে, শায়খের তথাকথিত সময় উপস্থিত, কিন্তু শহর এখনো অধরা। রাগে ক্রোধে আহমদ পাশা শায়েখের তাবুতে হানা দেয়। মুরিদরা বলে এখন প্রবেশ নিষেধ, শায়খ মানা করেছেন। রাগে গজরাতে গজরাতে পাশা তাদের পাশ কাটিয়ে তাবুর পর্দা উঠান। দেখেন শায়খ সিজদায়, হু হু করে কাঁদছেন। পাশা দাঁড়িয়ে ছিল কখন উঠবে আর সুলতানের সাথে ভাওতাবাজির হিশাব নিবে।
বেশকিছুক্ষণ পর সিজদা থেকে উঠলেন। আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিলেন। পাশা মুখ খুলতে যাবে এমন সময় হট্টগোলের শব্দ ভেসে আসে। পাশা তাকিয়ে দেখেন একদল জেনেসারি উল্লাস করছে- শহরের দেয়ালে উড়ছে উসমানি সালতানাতের পতাকা!
বিপুল হট্টগোল আর যুদ্ধের হৈ-হুল্লোড়ের মাঝে সুলতান শহরে প্রবেশ করেন, সহসা তাকিয়ে দেখেন আহমদ পাশা তার পাশে। সুলতানের মন্তব্য ছিল- আজকে আমি শহরের বিজয়ে খুশি হইনি, খুশি হয়েছি আমাদের মাঝে এমন শায়েখের উপস্থিতিতে।
ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন আহমদ বিন ইউসুফ আল কিরমানি, একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা। উসমানি সালতানাত, বিষেশত সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহের ইস্তাম্বুল বিজয়ে তার গ্রন্থ- আখবারুদ দুয়াল ও আসারুল উয়াল ফিত তারিখ অতি অমূল্য। কারণ তিনি ছিলেন সুলতানের সমসাময়িক!
আখবারুদ দুয়াল ও আসারুল উয়াল ফিত তারিখ কিতাবের হস্তলিখিত একটি পাণ্ডুলিপির ছবি
ঘোড়ায় চড়ে সুলতান বিজিত শহরে প্রবেশ করেন। সোজা আয়া সোফিয়ার প্রাঙ্গনে যান। সিঁড়ির সামনে নেমে, হাঁটুগেড়ে বসে একমুঠো মাটি নিয়ে নিজের মাথায় ছিটিয়ে দেন। বিনয় ও ক্ষুদ্রতার নিদর্শন হিশেবে।
ছোট করে একটা কথা বলি। দশহাজার বছরের মানব সভ্যতার ইতিহাসে শুধুমাত্র আমরা- মুসলিমরা ছাড়া আর কোনো ইতিহাস আছে কিনা যেখানে বিজয়ী বিজিত শহরে প্রবেশ করে নতজানু হয়ে, বিনয়াবনত হয়? নেই, আমি পাইনি, আপনি পেলে দেখাবেন। আমরা এটি শিখেছি হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহূ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কা বিজয় থেকে।
হ্যাঁ, অন্যদের মাঝেও পাই। যখন নেপোলিয়ন মস্কো জয় করে, গোটা শহরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পোড়া লাশের বীভৎস গন্ধ পেয়ে নেপোলিয়ন বলে উঠে কী চমৎকার! তাই না? এক সৈনিক বলেছিল কী দুর্গন্ধ। প্রত্যুত্তরে সে বলেছিল শত্রুর পোড়া দেহ থেকে যে গন্ধ ছড়ায় তা সর্বদাই মধুর!!
‘সুলতান আয়া সোফিয়ায় প্রবেশ করে দেখতে পান কিছু পাদ্রি বিভিন্ন কোণে জবুথবু হয়ে বসে আছে, তিনি তাদের নিরাপত্তা দেন। খানিকবাদে আরও কিছু পাদ্রি কাঁপতে কাঁপতে চার্চের বেদির গোপন কুঠুরি থেকে বেরিয়ে আসে, সুলতান সৈন্যদের আদেশ দেন তাদেরকে যেন নিরাপদে যেতে দেওয়া হয়।
সুলতানের এক সৈন্য চার্চের মেঝের মহামূল্যবান কিছু পাথর ভাঙতে চেষ্টা করছিল, জিজ্ঞেস করলেন ভাংছো কেন? সে বলল- আমার ইমানের তাগিদে! তরবারি বের করে তার উপর চালিয়ে দিলেন স্বয়ং সুলতান, বললেন গোটা শহর আমার। অর্ধমৃত অবস্থায় তাকে বাইরে ফেলে আসা হয়।’
এই সবগুলো তথ্য কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী আমেরিকান লেখক উয়িন্সটনের- আয়া সোফিয়াঃ এ্যা হিস্টোরি থেকে নেওয়া। সো সেক্যুলার ভাইরা একটু জ্বলতে পারেন।
সুলতান শহর জয় করেছিলেন মঙ্গলবার, তখনই এর নাম দেন আল মাসজিদুল উযমা আয়া সোফিয়া, আয়া সোফিয়া গ্রেট মস্ক। শুক্রবারের জুমার জন্য মসজিদ প্রস্তুত করতে বলেন। জুমায় ইমামতি করেছিলেন ‘মিস্টেরিয়াস শায়খ’।
এখনকার সবচেয়ে আলোচিত টপিক হচ্ছে সুলতান মসজিদ কিনেছিল কিনা, পক্ষে বিপক্ষে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। ইন্টারনেটে কিছু পিক ঘুরছে। কিন্তু কথা হচ্ছে সেসব পিকের অথেনটিসিটি নিয়ে প্রশ্ন আছে, তাছাড়া সেগুলোর তারিখও ইস্তাম্বুল বিজয়ের অনেক পর। তাছাড়া কিরমানির পূর্বোক্ত গ্রন্থেও সুলতান মসজিদ কিনেছেন বলে কোন তথ্য নেই।
যদি সুলতান মূল্য পরিশোধ করেও থাকেন তবে সেটা হয়ত পরে করেছিলেন, সেটা সম্ভবও বটে, কারণ তৎকালীন অর্থোডক্স প্যাট্রিয়র্কের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব ছিল।
কথা হচ্ছে সুলতান যদি মসজিদ কিনে না থাকেন, তবে সেটা মসজিদে রূপান্তর করা কি ভুল ছিল? অনুদারতা ছিল?
যেকোনো দিক থেকে এটি কক্ষনো অনুদারতা ছিল না। বরং ইস্তাম্বুল বিজয়ে তার উদারতা এত বেশি ছিল ভলতেয়ারের মত কুখ্যাত ইসলামফোব দার্শনিকও হা-হুতাশ করেছেন কেন তাদের একজন মুহাম্মদ ফাতিহ নেই? কেন ইস্তাম্বুলে প্রদর্শিত উদারতার মত তাদের নিজেদের কোনো ইতিহাস নেই?
একেবারেই যে নেই সে কথা বলা যাবে না, আছে। ১০৫৪ সালে পশ্চিমের ক্যাথলিক চার্চ আর অর্থোডক্স বাইজান্টাইন চার্চের মধ্যে চূড়ান্ত বিভেদ সৃষ্টি হয়, দুদল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয়ে যায়। এটাকে বলা হয় গ্রেট স্কিজম বা চূড়ান্ত বিচ্ছেদ।
তারপর ১০৯৩ থেকে ১০৯৯ পর্যন্ত প্রথম ক্রুসেড পরিচালিত হয়। এটি শুধু মসজিদুল আকসা দখলের জন্য ছিল না, অর্থোডক্সদের রাজধানী ইস্তাম্বুল দখলের জন্যও ছিল। তখন থেকেই বেশকিছু শহর ল্যাটিনদের (পশ্চিমের ক্যাথলিক খ্রিস্টান) দখলে ছিল। ১২০৪ সালে চতুর্থ ক্রুসেড পরিচালিত হয়েছিল শুধুমাত্র ‘অর্থোডক্স বিধর্মী’দেরকে সায়েস্তা করার জন্য।
তখন ফরাসি-ইতালি-রোমান ক্যাথলিকরা গ্রিক অর্থোডক্স ইস্তাম্বুল জয় করে। ইস্তাম্বুলের খ্রিস্টানদেরকে গ্রিক খ্রিস্টান বলা হত। কারণ শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল গ্রিকদের দ্বারা। তো শহর দখলের পর তারা এর কেন্দ্রস্থলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আটদিন-আটরাত লাগাতার সে আগুন জ্বলেছিল।
শহরের কেন্দ্রস্থল বরাবর তিন মাইল প্রস্থে এই আগুন জ্বলেছিল। ফলে মূল শহরের দালানকোঠা, রাজপ্রাসাদ, আয়া সোফিয়া সব গরম ধোয়ার কুন্ডুলিতে পরিণত হয়।
সুলতান ফাতিহের শহর দখল এবার আবার পড়ুন।
গত লেখাতেই বলেছিলাম আয়া সোফিয়া শুধু চার্চ ছিল না, এটি ছিল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। বিগত এক হাজার বছর ধরে সমস্ত সম্রাটদের অভিষেক অনুষ্ঠান এখানে হয়েছে। ফলে যখন যারাই শহরের ক্ষমতায় এসেছে তাদের প্রথম টার্গেট ছিল আয়া সোফিয়া। কারণ এটি ছিল বিজয়ে প্রতীক, সিম্বল। ধরুন আমাদের যুগে সংসদ যেমন, যদি কেউ কোনো দেশ দখল করে, কিন্তু এর সংসদ থেকে যায় স্থানীয়দের দখলে, এই বিজয় কখনো পূর্ণতা পায় না। আয়া সোফিয়া ছিল গোটা সাম্রাজ্যের প্রধান সংসদ।
দ্বিতীয়তঃ শহরের ডেমোগ্রাফি বা জনমিতি। শহরের জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে রদবদল হয়ে গিয়েছিল। একটা উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট হবে বিষয়টা। শহর দখলে সুলতানের সেনাবাহিনির সংখ্যা ছিল এক লক্ষ ষাট হাজার।
পক্ষান্তরে শহরের পক্ষে যোদ্ধা ছিল প্রায় পাঁ…চ হাজার প্লাস!! কারণ ক্যাথলিকদের বর্বরতায় জ্ঞানী-গুণী-শিল্পী-সাহিত্যিক-ব্যবসায়ি সবাই ততদিনে ইস্তাম্বুল ছেড়ে গেছে। ইউরোপের সহায়তা চেয়ে বাইজান্টাইন সম্রাট বারবার আকুতি জানিয়েছেন, কিন্তু পোপের আদেশ ছাড়া কারো সামর্থ নেই সহায়তা করার।
তাই পোপের কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন শহরটা বাঁচানোর, কারণ এটি অর্থোডক্সদের মক্কা-মদিনা। পোপ সহায়তা পাঠিয়েছিলেন, দুইজন পাদ্রি!! তাদের দায়িত্ব ছিল আয়া সোফিয়ায় বসিয়ে সম্রাটকে তওবা করানো যেন সে অর্থোডক্স মতবাদ ছেড়ে ক্যাথলিক হয়। তবেই পোপ সাহায্য প্রেরণ করবেন। এটি ছিল সুলতানের আক্রমণের ঠিক আগের বছরের ঘটনা।
সম্রাট পোপের অনুকম্পা লাভের আশায় তওবা করেন, কিন্তু সেখানে প্যাট্রিয়ার্ক (অর্থোডক্সদের প্রধান পোপ) উপস্থিত ছিল না। উল্টো সম্রাট ক্যাথলিক হয়ে গেছেন এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই শহরের অর্থোডক্সরা বিদ্রোহ করে, তখন বাইরে সুলতান ফাতিহের অবরোধ প্রস্তুতি চলছিল। (তাদের নেতা ছিল জর্জ স্কলারিয়োস/জেনাডিওস)
এসব কারণে শহরের জনসংখ্যা ছিল খুবই কম। পক্ষান্তরে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল বিপুল। পাশাপাশি সুলতান এটিকে রাজধানি বানাবেন শুনে গোটা বিশ্ব থেকে মুসলিমরা এসে বসতি গড়েছিল। তাই শহরের চার্চগুলোকে গির্জায় রূপান্তরিত করা হয়।
অউউউ!! নাইস!! শহরে তো জায়গার অভাব পড়েছিল যে চার্চকে মসজিদ বানাতে হবে? হ্যাঁ ভাই, অভাব পড়েছিল।
কষ্ট করে দুটো পৃষ্ঠা পড়েন সেই যুগে শহর ব্যবস্থা কেমন ছিল। শহর ছিল নগর দেয়াল দিয়ে ঘেরা, সুতরাং মসজিদ বানান আর মন্দির বানান তা এই সীমিত জায়গার ভিতরেই করতে হতো।
একটি তথ্য দেই বুঝার সুবিধার্থে। ২০০০ সালের এক শুমারি অনুযায়ী ইস্তাম্বুলে এখন ১২৩ টি অর্থোডক্স চার্চ আছে। সাথে আর্মেনিয়ান চার্চ ৬০ টি, ৮ টি ক্যাথলিক, দুইটি সিরিয়াক।
৫০০ বছর মুসলিম রাজধানী থাকা সত্ত্বেও সেখানে যদি ধরে নিই ২০০ চার্চও থাকে, তো ১১২৩ বছর যখন সেটি খ্রিস্টধর্মের রাজধানী ছিল তখন চার্চ কয়টা ছিল? অনুমান করা যায়? সেখান থেকে সুলতান কয়টা চার্চকে মসজিদ বানিয়েছেন? জানেন? প্রায় স…তে…র…টা!!! ইসসস! কত্ত বর্বর রে বাবা!
তথ্যটা আছে খ্রিস্টান গবেষক স্ট্যানফোর্ড শ’র তিনখন্ডে রচিত বিখ্যাত বই হিস্টোরি অব অটোমান ইম্পায়ার এন্ড দ্য মডার্ণ তুর্কি-তে।
তাইলে সুলতান নতুন মসজিদ বানিয়ে নিলেই পারতেন। পারতেন তবে সেটা হতো অনর্থক কাজ। কারণ ততদিনে ইস্তাম্বুল ভূতের শহরে পরিণত হয়েছে। উয়িন্সটনের ভাষায়- ‘শহরের বাজারগুলো ছিল উতপাদনহীন, শহরের প্রধান গুদাম ছিল বিরান এবং ইঁদুরের গুদামে পরিণত, এককালের জমকালো দালানকোঠাগুলো আগাছা জন্মে এখন প্রকৃতির অংশে পরিণত হয়েছে।”
আর আয়া সোফিয়া? ১৩৯১ সালে স্পেনিশ রাষ্ট্রদূত লেখেন-“চার্চের শুধুমাত্র গম্বুজটা বাকি ছিল, বাকিসব মাটির সাথে মিশে গেছে।” তাছাড়া শহরের অর্থনৈতিক দেওয়লিয়াত্বের কারণে ১৩৪৪ সালের ভূমিকম্পে চার্চ ভেঙ্গে পড়ার পর সেটি মেরামত করার মত পয়সাও ছিল না।
আজকের সুশীল-মডারেট-খ্রিস্টান আর লাজুক মুসলিমদের আয়া সোফিয়ার জন্য যত দরদ উথলে উথলে পড়ছে, সেকালে ক্যাথলিক-অর্থোডক্স কারোই এত পিরিত ছিল না সেটা নিয়ে। পিরিতি এখন তৈরি করা হচ্ছে, কৃত্রিমভাবে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে- এখন এত্ত যে পিরিত, কিন্তু তৎকালীন প্রধান গুরু প্যাট্রিয়র্ক জর্জ মামাস কী করেছিল জানেন? চার্চ ছেড়ে, শহর ছেড়ে পালিয়েছিল। একবার ভাবুন তো প্রধান ইমাম কাবা ছেড়ে পালিয়েছে!!
তারপর সুলতান নিজে দ্বিতীয় জেনেডিয়সকে প্যাট্রিয়ররক হিশেবে নিয়োগ দেন শহরের অর্থোডক্সদের দেখাশোনা করার জন্য। এটা ছিল ইস্তাম্বুলে সুলতানের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক আদেশ!! তাদের প্রধান চার্চ হিশেবে চার্চ অব হোলি এ্যাপোস্টল নির্ধারণ করেন, সেটিও যুদ্ধের সময় সুলতান নিজে ধ্বংস থেকে রক্ষা করেছিলেন।
সুলতান নতুন প্যাট্রিয়রককে ক্রুশ প্রদান করেন, লাঠি প্রদান করেন। এবং তাদের মাঝে ব্যক্তিগত সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। পরস্পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা একান্তে আলাপ সালাপ করতেন।
সুলতান কি শহরে লুটপাট চালিয়েছিলেন?
ইস্তাম্বুলে ঢুকে সুলতান সর্বপ্রথম যে কাজটা করেছিলেন সেটা হচ্ছে শহরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা। এটি দিবালোকের মত নয় বরং দিবালোকের চেয়েও বেশি স্পষ্ট। আবার অবরোধ চলাকালীন সৈন্যদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য সুলতান বলেছিলেন শহরের সব সম্পদ তাদের। এবং শহর বিজিত হওয়ার পর তিনদিন ধরে মুসলিমরা সেখানে ‘লুটপাট’ চালিয়েছিল। তো?
হ্যাঁ, শহরের সব সম্পদ সৈন্যদের দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তবে সেটা জনগণের ঘরে ঢুকে ছিনিয়ে আনা সম্পদ না, যেমনটা পশ্চিমারা সারাজীবন করে এসেছে এবং অন্যদেরকেও সেভাবেই দেখে। বরং সেগুলো ছিল সরকারি কোষাগার, রাষ্ট্রীয় অর্থ। অর্থাৎ ইস্তাম্বুলের সরকারি সমুদয় সম্পদ সৈন্যদের মাঝে বন্টন করে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু সাধারণ জনগণের গায়ে হাত দেওয়া হয়নি। যখন শহরে প্রবেশ করেন তখনো শুধু তাদেরকেই হত্যা করা হচ্ছিল যারা প্রতিরোধ করতে এসেছিল।
এমনকি প্রতিরোধযোদ্ধাদের একাংশ পালিয়ে পাশের গানাতা শহরে আশ্রয় নেয়, এই শহরের সাথে সুলতানের চুক্তি ছিল নিরপেক্ষতার। কিন্তু যোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে তারা সেই চুক্তি লংঘন করে। তবুও তিনি তাদের উপর হস্তক্ষেপ করেননি। নতুন করে চুক্তি করে তাদের ধর্ম ও চলাফেরার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। কম দুঃখে তো আর ভলতেয়ার চুল ছিঁড়েনি।
সুতরাং যারা বলে যে শহরে লুটপাট চালানো হয়েছিল হয়ত তারা নিরেট গবেট কিংবা কপট মিথ্যুক।