জয়া আহসান। হালের সেনসেশান বলা হয় যাকে। এপার বাংলা ও ওপার বাংলা মাতিয়ে রেখেছেন অভিনয়, রূপ ও শরীর দেখিয়ে। তিনি অভিনয়ে যতটা না পারদর্শী তারচেয়ে বেশি পারদর্শী অশ্লীলতায়, নগ্নতায়। প্রায় ত্রিশ বছর যাবত চলচ্চিত্র, নাটক ও বিজ্ঞাপনে কাজ করে আসছেন ৪৮* বছর বয়সী এই ভালগার তরুণী।
ব্যক্তি জীবনে তিনি তার প্রথম স্বামী মডেল ও অভিনেতা ফয়সাল আহসানের সাথে বিচ্ছেদ ঘটান ২০১১ সালে। তবে, আমরা তার ব্যক্তি জীবন ঘাটবো না। সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়া এই অভিনেত্রীর বাহ্যিককর্ম সম্পর্কে আমরা আজ কিঞ্চিৎ আলোকপাতের চেষ্টা করবো। তার বা তাদের কাজ যেহেতু সমাজের উপর ইম্প্যাক্ট ফেলে , তাই কেমন ইম্প্যাক্ট ফেলছে তা বোঝার জন্য এ নিবন্ধ আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।
তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ব্যাচেলর’ (২০০৪)। এর কাহিনী রচনা করেছেন সাহিত্যিক এবং প্রথম আলোর সাংবাদিক আনিসুল হক। আনিসুল হক সম্পর্কে কারো অজানা থাকার নয়। তাই আপাতত আমাদের মূল আলোচনায় তাকে বাদ দিচ্ছি। এই মুভিতে ‘লিটনের ফ্ল্যাট’ প্রোমোট করে তরুণ সমাজকে ব্যাপক অবক্ষয়ের মুখে ঠেলে দেওয়ার পাশাপাশি এই মুভির একটি জঘন্য গান মার্কেটে জনপ্রিয় হয়েছিল, “তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও করি প্রেমের তরজমা।” এই জঘন্য গানটি সে সময় ও পরবর্তী সময়ে ব্যাপকভাবে তরুন সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।
২০০৯ সালে তিনি ‘তারপরও আঙ্গুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’ নাটকে একজন যৌন কর্মী হিসেবে কাজ করেন। নাটকটি সম্পর্কে জয়া বলেছিলেন, “নাটকটির শুটিং গোয়ালন্দ রাজবাড়ী রেড লাইট এলাকায় হয়েছিল, যেখানে প্রায় ১৫০০ যৌনকর্মী ছিল। আমি যে চরিত্রে অভিনয় করেছি তার চামড়াতে (চরিত্রের শিকড়ে) ঢুকে যেতে চেয়েছিলাম, তাই আমি এলাকাটি পরিদর্শন করেছি এবং এই মহিলাগুলিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি “আমি তাদের পদ্ধতিগুলি, তারা কী ধরণের পোশাক পরে এবং কীভাবে তারা তাদের ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলেছে তা নিয়ে গবেষণা করেছি।”
যদিও যৌনকর্মীর জীবন বোঝাতে অশ্লীলতাকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা কোন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাজ নয়, এখানে সরাসরি তাদের সাক্ষাৎকার নিলেই আরো স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠতো।
২০১১ সালে নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ বিষয়ক ছবি হলেও এখানে জামায়াতের বিরোধীতার আড়ালে আলেম সমাজ ও ধার্মিক মুসলিমদের বর্বর খুনি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। দেখলে মনে হবে মসজিদের ইমাম মানেই পাকবাহিনীর নারী ধর্ষণের সহযোগী। ‘আল্লাহু আকবর’ হলো নিরীহ মানুষ হত্যাকারীদের শ্লোগান। নানা ইসলামী অনুসঙ্গকে সুক্ষ্মভাবে ‘গেরিলা’ মুভিতে নিন্দিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গেরিলা চলচ্চিত্রের পর থেকে জয়া নিয়মিত বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতার চলচ্চিত্রে কাজ করা শুরু করেন। ছোট পর্দার পাশাপাশি নিয়মিত মডেলিং, ফোটোসেশন, এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে তাকে নগ্ন পোশাকে দেখা যায়।
২০১৫ সালে তিনি কলকাতায় নির্মীত ‘রাজকাহিনী’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি তুমুল সমালোচিত হোন। সমালোচনার ঝড় পৌঁছে যায় কলকাতা পর্যন্ত। সিনেমাটির একটি দৃশ্যে তিনি খুবই আপত্তিকর ভাবে অভিনয় করেন, অশ্লীল ডায়ালগের সাথে দৃশ্যায়ন করেন। দৃশ্যটিতে দেখা যায় জয়া তাঁর সহঅভিনেতা প্রাপ্তমনস্ক রুদ্রনীলকে কোনো রাখঢাক বা ইশারা ইঙ্গিতের ধার না ধেরে সোজাসাপ্টা নিজের শরীরের প্রাইভেট অংশ নিয়ে খোলামেলা আলাপ করছেন।
সেই দৃশ্যের জন্য তিনি সব জায়গায় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তাতে তিনি কোনরকম গাঁ মাখান নি। বরং খুশি হয়েছেন। দেশে যখন এই সমালোচনা শুরু হলো, তখন সুযোগ বুঝে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা ও ইন্ডিয়া টাইমস তাকে নিয়ে নিউজ ছাপালো এবং বাংলার ‘সানি লিওন’ বলে ট্যাগ দেওয়া শুরু হল। কলকাতার আরেকটি দৈনিক এই সময় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সেই অশ্লীল দৃশ্যের জন্য আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, ” হুম বিতর্ক হয়েছে। তবে ভীষণ পাওয়ারফুল ডায়লগ ছিল সেগুলো। তবে আমি মনে মনে খুব পরিষ্কার ছিলাম। অনেক বার স্ক্রিপ্টটা পড়েছিলাম। রিহার্সাল করেছিলাম। আমি মনে করি ওই সিনটার প্রতি ফুল জাস্টিস করতে পেরেছি। আর আমি এখানে সৃজিতকেও কৃতিত্ব দেব, যে ভাবে ও পুরো সিনটা বা ডায়লগগুলো লিখেছিলো।“
বাহ! কী চমৎকার। চরম বেহায়াপনা একটি দৃশ্য ও ডায়লগের জন্য তিনি গর্ব বোধ করেছেন। সিনটির প্রতি জাস্টিস করেছেন বলেও জানান। এছাড়া তার থেকে আর কী আশা করা যায়, লজ্জা থাকলে তো লজ্জিত হবেন! এতে অন্তত এতে অনেকে মনে করে করেন জয়া অঘোষিতভাবে অশ্লীলতার ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর। তার অভিনীত দুই পার্টের বানিজ্যক মুভি “পূর্ণ দৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী”ও অশ্লীলতায় ভরপুর। যুবসমাজের চরিত্র ধ্বংসে ভালোই সবক দেয়া হয়েছে সেখানে।
২০১৫ সালের পর, ৪৮ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীকে বিভিন্ন সময়ে শর্ট স্লীভ, টপস ও অর্ধনগ্ন পোশাক পরিহিত অবস্থায় সময় সময়ে দেখা গেছে, এখনো যায়। পোশাকের এই বিবর্তন শুরু করেছিলেন স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর পরই। এরপর, দিন যত গড়িয়েছে ততই নিজেকে যুব সমাজের সামনে আবেদনময়ী হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করেছেন। তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে আপলোডকৃত ফোটোসেশান দেখলেই এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যায় যে তিনি কি পরিমাণ অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও যুব সমাজ ধ্বংসে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন।
তার পেইজের লাইক সংখ্যা ১৪ লক্ষ+ । তাঁর ফেসবুক পেইজ দেখলে সহজেই অনুমেয় হয় যে তিনি অশ্লীলতা ও দেহ প্রদর্শনীর কাঁরখানা। এই পেইজে তাঁর আপলোডকৃত ফোটো দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেন না যে তিনি বাংলাদেশী অভিনেত্রী। পোশাক-আশাকে যেমনই ইউরোপের বেশ্যাদের ছাপ, তেমনই কর্মে অশ্লীলতার ছাপ সুস্পষ্ট। যুব সমাজ ধ্বংস আর বেহায়াপনার ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর জয়া আহসান কিছু নোংরা মিডিয়ার ইতিবাচক প্রচারণায় দেশের লাখো নির্লজ্জ তরুন-তরুনীর আইডল বনে গেছেন।
১৭ জানুয়ারি, ২০১৮ আনন্দবাজার পত্রিকার এক ইন্টার্ভিউতে তিনি উল্লেখ করেন, “অভিনয় আমার ইবাদত (প্রার্থনা)।“ এবং আনন্দবাজার পত্রিকা এর শিরোনাম করে, “‘অভিনয় আমার ইবাদত” নামে।
অশ্লীলতা আর খোলামেলা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি কলকাতায় বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া অশ্লীলতা ছড়ানোর পাশাপাশি দেশে কলকাতার হিন্দুয়ানী কালচার বরাবরই প্রোমোট করে আসছেন জয়া। হিন্দুদের পুঁজোতে কলকাতায় মণ্ডপে তিনি এমনভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকেন যাতে এটা বোঝার উপায় থাকেনা যে, তিনি একজন মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকরী নারী। তার কাজ মুসলিমদের মধ্যে সুক্ষ্মভাবে হিন্দু ধর্মের রীতিতে অভ্যস্ত করার প্রয়াস বলেই মনে হয়।
তিনি কৌশিক গাঙ্গুলী নামের এক পরিচালকের বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। যাকে নিয়ে কলকাতায় গুঞ্জন শোনা গেলেও আমরা সেদিকে সময় ক্ষেপণ করবো না।
২০১৮ সালে এই পরিচালকের চলচ্চিত্র ‘ বিজয়া’ তে অভিনয় করেন তিনি। এই চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে পরিচালক বলেন,
“মাথায় রাখতে হবে ‘বিজয়া’ এমন একটা সময় রিলিজ করছে যখন পরকীয়া আর অবৈধ নয়। যেখানে ত্রিভুজ ব্যাপারটা প্রায় সরলরেখার মতো। সেখানে দাঁড়িয়ে আমারও একটা বার্তা দেওয়ার আছে। পরকীয়া মানেই একটা বিচ্ছিরি গুজগুজ ফুসফুস নয়। খুব সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালবাসার জিনিস হতে পারে পরকীয়া। অক্সিজেনের মতো এসেনশিয়াল হতে পারে পরকীয়া সম্পর্ক, যদি তাতে ভদ্রতা, শিক্ষা, রুচি থাকে। এ সব কিছু উত্তীর্ণ করেও গণেশ, পদ্মা এবং নাসিরের যে ভালবাসার জায়গা তা যে কি বিচিত্র সমস্ত শেপ নিতে থাকে ‘বিজয়া’তে সেটাই দেখবার।“
বাহ! পরোকীয়া নিয়ে পরিচালকের কী সরল স্বীকারোক্তি!! সুতরাং, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, হিন্দুয়ানী ও পশ্চিমা কালচারের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর উপাধির সাথে পরকীয়ার মত অবৈধ সম্পর্কের মার্কেট প্রমোটার বললে খুব বেশি ভুল হবার কথা নয়।
শুধু চলচ্চিত্র কিংবা নাটক নয়, বিজ্ঞাপনেও জয়াকে চরম নোংরা পোশাক পরিধান করতে দেখা যায়, ভুল বললাম হয়তো! টেলিভিশনে বহুল প্রচারিত স্যান্ডেলিনা সাবানের বিজ্ঞাপনে তো তাকে কোন পোশাকই পড়তে দেখা যায়নি! কেবল বাথ টাবে সাবানের ফেনায় দেহ কিছুটা আবৃত ছিলো। তার বিজ্ঞাপনে পোশাকের সাথে আরো যুক্ত হয় কুৎসিত বিকৃত অঙ্গভঙ্গি।
গত বছর জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার একটি সাক্ষাৎকারে জয়া উল্লেখ করেন যে, সম্ভব হলে তিনি ভারতেরও নাগরিকত্ব চান। কিন্তু সে সুযোগ নেই বলে সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর কর্মের ফিরিস্তি দেওয়া শুরু করলে এরকম হাজার হাজার পেজ ফুরিয়ে গেলেও শেষ হবার নয়।
এতোসব বিকৃতকাজের অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে জয়া এখন অবধি তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পূর্ব, ছয়টি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার,দুবার “ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার” এবং আরও অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। কিছু মিডিয়া উদ্দেশ্যমূলকভাবেই তাকে ফলাও করে প্রচার করে। তার ভালগার কাজগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াস চালিয়ে আসছে।
এসব অপসংকৃতির ধারকবাহকদের, অশ্লীলতার প্রচারকদের, হিন্দুয়ানী ও পশ্চিমা কালচারের ইম্পোর্টারদের থেকে যুব সমাজ ও আমাদের তরুণ-তরুণীদের সচেতনা করা না গেলে ঘরে ঘরে জয়া আহসান গড়ে উঠবে। যদিও বর্তমানে জয়া আহসানের সংখ্যা নেহাত কম নয়।
* তার বয়স নিয়ে একটু বিতর্ক রয়েছে, গনমাধ্যম ও উইকিপিডিয়ায় তার জন্মসন ১৯৭২ উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন