ফোনে রাখা গুরত্বপূর্ণ বা গোপনীয় ফাইল লুকিয়ে রাখার জন্য অনেকে থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করেন। আবার কিছু কোম্পানী যেমন শাওমী, ওয়ানপ্লাস, স্যামসাং, হুয়াওয়ে এরা ফোনের সাথেই বিল্ড ইন ফিচার পান। যেমন ওয়ান প্লাসে লকবক্স, রিয়েলমি-অপো এসবে ফাইল সেইফ, স্যামসাং এস সিকিউর, হুয়াওয়ে সেইফ, শাওমী হিডেন ফাইল এসব।
আলাদা ফাইলে লুকিয়ে রাখার অর্থ হচ্ছে হয় এগুলো গোপনীয় অথবা ব্যক্তিগত যেগুলো যেন কেউ দেখতে না পায়। আপনার ফোনে থাকা যেসব অ্যাপসের গ্যালারী, ফাইল এবং ফটোসের পারমিশন দেয়া আছে তারা যেন আপনি ইন্টারনেটে কানেক্টেড থাকা অবস্থায় আপনার ফাইল গুলো নিয়ে নিতে না পারে। যেমন আমরা অনেকেই জেনেছিলাম ‘পাঠাও’ আপনার ফোনের সব ডেটা তাদের সার্ভারে কালেক্ট করে রাখে। এমন অনেক অ্যাপই আছে যারা কন্টিনিউয়াসলি ডেটা কালেক্ট করে।
এদের হাত থেকে আপনার সেই ডেটাগুলো বাঁচানোর সেরা উপায় হচ্ছে এনক্রিপশন। অর্থ্যাৎ আপনার ডেটাগুলো শুধু লুকিয়ে রাখলেই হবে না, এগুলো এনক্রিপ্টেড থাকতে হবে।
সিনেমায় আমরা দেখি যে অনেক হ্যাকার কিছুক্ষণের মধ্যেই এনক্রিপশন ভেঙে ফেলে। যেটা শুধু সিনেমাতেই সত্যি, বাস্তবে এনক্রিপ্টেড ফাইল আপনার এনক্রিপশন কিই (পাসওয়ার্ড) ছাড়া ভাঙাটা এত সহজ কাজ না। পৃথিবীর সেরা সেরা হ্যাকার, প্রোগ্রামাররাও এনক্রিপশন ভাঙতে ব্যর্থ হয়। যাই হোক, সেটা অন্য লম্বা আলোচনা।
আপনার কোনো ডেটা আপনি হাইড করে রাখার অর্থই কিন্তু এনক্রিপশন নয়, এর অর্থ হচ্ছে সেটা শুধুমাত্র আপনি দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু সেটা জায়গামত বহাল তবিয়তে আছে। আপনার ফোনে থাকা অ্যাপস গুলো সেই ডেটা কালেক্ট করতে পারবে।
কিন্তু আপনার সেই ডেটাগুলো যদি এনক্রিপ্ট করে ফেলা হয়, তাহলে কেবল আপনি ছাড়া এই ডেটা কেউই আর দেখতে পারবে না। যেটা হচ্ছে প্রকৃতভাবেই সিকিউর। এখন আপনি বলতে পারেন যে সেই কোম্পানীও কি দেখতে পারবে না? এর উত্তরও হচ্ছে- না, দেখতে পারবে না। এবং তাদের সেই দাবী সত্যি কিনা সেটা টেস্ট করার জন্যই অনেক সিকিউরিটি ল্যাব আছে। যাদের কাজই হচ্ছে সিকিউরিটি ল্যাব সিকিউরিটি ফ্লজ বের করা। তারা বড় কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে এমন কিছু বের করতে পারলেই সেটা নিয়ে বিশাল হইচই পড়ে যায়, বিশাল কেলেঙ্কারি হয়ে যায়।
তো এমনভাবে আপনার ডেটা এনক্রিপ্ট করে কারা? ওয়েল, আপনি যদি স্যামসাং ইউজার হন তাহলে আপনি আপনার ফোনে দেখবেন Secured by Knox. Knox হচ্ছে স্যামসাংয়েরই নিজস্ব সিকিউরিটি এজেন্সি।
স্যামসাংয়ের ফোনগুলো তৈরীর সময়েই নক্স হার্ডওয়ার লেভেলের সিকিউরিটি প্রোভাইড করে। অর্থ্যাৎ আপনার স্যামসাংয়ের সিকিউর ফোল্ডার একই সংগে সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়ার লেভেলের এনক্রিপশন দেয়া আছে। এই ফোল্ডারে রাখা সব ডেটা ডাবল লেয়ার এনক্রিপশন করা।
একই কথা হুয়াওয়ের সেইফের ক্ষেত্রেও। তাদের শুধু সফটওয়্যারেই ডাবল লেয়ার এনক্রিপশন। এবং প্রতিটি আলাদা ফাইলের জন্য আলাদা এনক্রিপশন। এর বাইরে আবার হার্ডওয়ারেও একই নিরাপত্তা তারা আপনাকে দিচ্ছে।
হুয়াওয়ের যে ডেটা পাচারের অভিযোগ আমেরিকা করেছে, সেটাও হচ্ছে ফোনের মেটাডেটা যেটা নরমাল ডেটাগুলো অর্থ্যাৎ যেগুলো এনক্রিপ্টেড না। সেই অভিযোগের অবশ্য কোনো প্রমাণ কেউ পায়নি, খোদ আমেরিকাও দেখাতে পারেনি। এমনকি হুয়াওয়েকে ব্যান করার কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছে ইরানের সাথে ব্যবসা করায় ইউএসের অবরোধ ভঙ্গ করা। সিকিউরিটি ফ্লজের প্রমাণ পেলে সেটাকেই দেখাতো। যেহেতু প্রমাণ পায়নি তাই ইরান বিষয়ক সমস্যা দেখিয়ে ব্যান করেছে।
তাহলে স্যামসাং আর হুয়াওয়ে আপনার ডেটা গুলো এনক্রিপ্টেড করে দিচ্ছে আপনার জন্য। যেটা পুরোপুরি নিরাপদ। অন্যদের গুলোর কী অবস্থা দেখা যাক!
এটা জেনে প্রচুর ইউজার খুবই হতাশ হবেন যে, আপনার ওয়ানপ্লাসের লকবক্স, রিয়েলমি-অপো-ভিভোর ফাইল সেইফ, শাওমির হিডেন ফাইল কোনোটাই এনক্রিপ্টেড না। অর্থ্যাৎ আপনার গ্যালারী তথা প্লেইন সাইট থেকে সরিয়ে রাখলেও আসলে ফাইল গুলো জায়গামতো খোলামেলাভাবেই আছে। যে কেউ চাইলেই সেটা দেখতে পারে, নিতে পারে। আপনার ফাইলগুলো হাইড করছে উইদাউট এনি এনক্রিপশন।
এই জায়গায় এসে শাওমি, রিয়েলমির চেয়ে আমাকে সবচেয়ে বেশী হতাশ করেছে ওয়ান প্লাস। এত টাকার ফোনে তারা হার্ডওয়্যার বেইজড না দিক, অন্তত সফটওয়্যার বেইজড সিকিউরিটি দিতে পারতো। এটলিস্ট এনক্রিপ্টেড ফাইল দিলেই পারতো। কিন্তু তারা সেটাও করেনি। সস্তা চাইনিজ ফোনগুলো যেহেতু সস্তায় অনেক ফিচার দেয়, তাই তাদের প্রচুর সিকিউরিটি ফ্লজ থাকে। সেটা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু ওয়ানপ্লাস টাকা তো কম নেয় না!
সে হিসেবে আপনার স্যামসাং এবং হুয়াওয়ের ডেটা যতটা নিরাপদ অন্য ফোনে থাকা ডেটা ততটাই অনিরাপদ। বিশেষ করে যেখানে আপনি নিরাপদ ভেবে সরিয়ে রাখছেন।
তাহলে আপনার ফাইল নিরাপদ রাখতে চাইলে কী করবেন? আপনাকে যেটা করতে হবে, সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে সব ফাইলের একটি ফোল্ডার বানিয়ে সেটাকে পাসওয়ার্ড দিয়ে জিপ করে রাখা। যেটা আপনার ফোনের হিডেন ফোল্ডারের চেয়ে অনেক অনেক বেশী নিরাপদ।
প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন