দীর্ঘ ছ’ মাস সাগরের অথৈ পানিতে ভেসে থেকে অবশেষে ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করতে পেরেছেন ২৯৭ রোহিঙ্গা। সোমবার ভোরে স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় আচেহ প্রদেশে নামতে পেরেছেন তারা। স্থানীয় পুলিশ প্রধান ইপ্টু ইরওয়ানস্যা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মধ্যরাতে প্রথম উপকূলীয় এলাকায় রোহিঙ্গাদের বাহক একটি কাঠের নৌকা শনাক্ত করে স্থানীয় জেলেরা। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। তাদের মাঝে ১৮১ জন নারী ও ১৪টি শিশুও রয়েছে। এছাড়া, ১৩ বছরের একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের সবাইকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। তবে বিশেষ করে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে তাদের স্বাস্থ্যগত বিষয়টিই মূল উদ্বেগের বিষয়।
পুলিশের দাবি – ছ’ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার এ রোহিঙ্গারা। উপকূল থেকে কয়েক কিঃমিঃ দূরে তাদেরকে প্রথম দেখতে পান স্থানীয় এক জেলে। পরে তাদের উজং ব্ল্যাং সৈকতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে ২০২০ সালের জুনে নৌকায় ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে পৌঁছালে ৭৯ জন নারী ও শিশুসহ শ’খানেক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেন স্থানীয় জেলেরা। তখন উদ্ধার পাওয়া রোহিঙ্গাদেরকে আবারও সাগরে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। তবে স্থানীয় জেলেদের প্রতিবাদের মুখে তা সম্ভব হয়নি।
সাইফুল আমরি নামের এক জেলে বলেন: সরকার না পারলে, আমরা জেলে সমাজ তাদের সহায়তা করবো। কেননা, আমরা মানুষ; তারাও (রোহিঙ্গা শরণার্থীরা) মানুষ এবং আমাদের হৃদয় আছে।
মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাশের দেশগুলোতে আশ্রয় খোঁজেন রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে থাকা অনেক রোহিঙ্গাও আরো উন্নত জীবনের আশায় নৌকায় করে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া যেতে আগ্রহী। কিন্তু করোনার কারণে এসব দেশ সম্প্রতি তাদের নৌকা তীরে ভিড়তে দিচ্ছে না। ফলে, দীর্ঘদিন সাগরে ভেসে থেকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে রাষ্ট্রহীন এ জনগোষ্ঠীর বহু মানুষ।
মালয় প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন বলেছেন: আমার দেশের পক্ষে আর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়। কেননা, করোনার কারণে দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে গেছে।
তবে স্থানীয় জেলেদের অপরিসীম মানবিকতার কাছে শেষ পর্যন্ত পর্যুদস্ত হচ্ছে সরকারের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি।
সূত্র: রয়টার্স ও ডিডব্লিউ।
পছন্দের আরো লেখা