অর্থনৈতিক স্বার্থে ইউরোপের মুসলিম দেশ কসোভো অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়েছে! কসোভার এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন, আরব লীগের মহাসচিব আহমাদ আবুলগেইত। অন্যদিকে, তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস সরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সার্বিয়া। আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও সুদানকে বলেছেন: ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে সন্ত্রাসীর খাতা থেকে নাম কাটাও।
চলতি সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে সার্বিয়া ও কসোভোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাতে একটি অর্থনৈতিক চুক্তিতে সই করেন সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুসিক ও কসোভোর প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ হোতি। এরপর শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন – বলকান অঞ্চলের দু প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ সার্বিয়া ও কসোভার মাঝে একটি শান্তি চুক্তি সইয়ে আমেরিকা মধ্যস্থতা করেছে। একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার দু্ যুগ পর, এ দু দেশ একটি চুক্তিতে পৌঁছালো।
ট্রাম্পের এ ঘোষণার পরপর সেদিনই এক বিবৃতিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন: ইউরোপের মুসলিম সংখ্যাগুরু প্রথম দেশ হিসেবে জেরুজালেমে দূতাবাস খুলতে যাচ্ছে কসোভো। সম্প্রতি আমি যেমনটা বলেছিলাম যে, ইসরাইলের শান্তির প্রক্রিয়া ও স্বীকৃতি আরও বিস্তৃত হচ্ছে এবং আরও অনেক দেশ এ তালিকাভুক্ত হবে বলে আশা করছি আমরা।
এদিকে, আরব লীগের মহাসচিব আহমাদ আবুলগেইত কসোভোর ঐ সিদ্ধান্তকে ‘ভ্রান্ত’ এবং ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন। ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা পিএলও’র নির্বাহী কমিটির সচিব সায়েব এরকাতও সার্বিয়া ও কসোভোর এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন: ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনি অভিলাষ পূর্ণ করতে ফিলিস্তিনী জনগণকে বলির পাঁঠা বানাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি দেশ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে দূতাবাস খুলেছে – যুক্তরাষ্ট্র ও গুয়েতেমালা।
ওদিকে, মার্কিন সরকার সুদানকে এ প্রস্তাব দিয়েছে যে, ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলে সুদানের নাম সন্ত্রাসবাদে সমর্থক দেশগুলোর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে।
সুদানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উমর কামারুদ্দীন আমেরিকার এ ন্যাক্কারজনক প্রস্তাবের খবর ফাঁস করে দিয়েছেন। তিনি আরবি দৈনিক আত-তিয়ারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সম্প্রতি খার্তুম সফরে গিয়ে সুদান সরকারকে বলেছেন – আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে সুদানের কথিত সমর্থনের কারণে দেশটির যে নাম আমেরিকার সন্ত্রাসবাদের কালো তালিকায় রয়েছে, তা কাটাতে হলে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে হবে। পম্পেও এ দুটি বিষয়কে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে, ২০১৭ সালে তার প্রশাসন তেলআবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে তাদের দূতাবাস স্থানান্তরিত করে। তবে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মাঝে শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা জেরুজালেম। ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে মেনে রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। কিন্তু তেলআবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করেছে ইসরাইল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসরাইলের সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্কোন্নয়নে সম্প্রতি জোর তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি এখন ট্রাম্পের এক গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি।
বিশ্লেষকরা বলছেন – নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে শক্তিশালী ইহুদি লবিকে পাশে পেতেই ট্রাম্প প্রশাসনের এ দৌড়ঝাঁপ। এরই অংশ হিসেবে গত মাসে তারা ইসরাইল ও আমিরাতের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনে সফল হয়। আগামী তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মাঝে ইসরাইলে দূতাবাস খুলবে বলেও জানিয়েছে আমিরাত। আর এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ট্রাম্পের জামাতা ও তার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জারেড কুশনার।