সৌদি আরবকে সরিয়ে ইসলামী দুনিয়ার নেতৃত্বের জন্যে প্রচণ্ডভাবে লড়াই করছে তুরস্ক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান মুসলিম জাহানের শীর্ষস্থান থেকে সৌদি আরবকে সরাতে চান এবং এতে চীন ও পাকিস্তানের সমর্থন রয়েছে। ৪ঠা আগস্ট ইউরেশিয়ান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।
ঐ প্রতিবেদনে সাংবাদিক শফিক বলেন: হাজিয়া সোফিয়াকে জাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তর করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগ দেয়ার সব আশা চুরমার করে দিয়েছে তুরস্ক এবং এগিয়ে যাচ্ছে ‘প্যান ইসলামিজম’-এর দিকে।
সৌদি আরবকে ইসলামী দুনিয়ার নেতৃত্ব থেকে সরাতে তুরস্কের প্রচেষ্টার প্রথম সংকেতটি আসে গত বছর – যখন মালয়েশিয়া সৌদি আরব নিয়ন্ত্রিত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনকে (ওআইসি) দুর্বল করতে মুসলিম জাহানের আরো একটি ফ্রন্ট তৈরির জন্যে কুয়ালালামপুর শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এরদোয়ান পাকিস্তান ও কাশ্মীরী মুক্তিযোদ্ধাদের খোলাখুলি সমর্থন দেয়ায় এবং ফিন্যানশিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) সঙ্গে সংঘর্ষে ইসলামাবাদকে সহযোগিতার চেষ্টা করায়, তুরস্কের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
তুরস্ক ও পাকিস্তান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে একে অপরকে সমর্থন দিয়েছে। সামরিক ক্ষেত্রেও তারা একে অপরকে অনেক সহায়তা করে থাকে। তারপরও তুরস্ক ও পাকিস্তানের সম্পর্কে কিছু জটিলতা রয়েছে। চীনের জিনজিয়াংয়ে কমিউনিস্ট সরকারের হাতে উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতিত-নিপীড়িত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে দেশ দুটির মাঝে – যা তাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমস্যা।
চীনের সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক থাকায় পূর্বাঞ্চলীয় তুর্কিস্তান ইসলামী আন্দোলনের বিদ্রোহীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেয় পাকিস্তান! অপর দিকে তুরস্ক জিনজিয়াংয়ে নেয়া আপত্তিকর নীতিমালার জন্যে শুরু থেকেই চীনের সমালোচনা করে আসছে। তবে পরবর্তীকালে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে উইঘুর বিষয়ে নিজেদের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করেছেন এরদোয়ান।
এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে; অন্যদিকে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো হতে থাকে। এমনকি এরদোয়ান আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল পাশার পরিকল্পিত (সেকুলার) তুরস্কের ভিত্তিও নষ্ট করে দিচ্ছেন।
আগস্টের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর আঞ্চলিক ট্রানজিট হাব হিসেবে কাজ করছে আঙ্কারা। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও এরদোয়ান ক্রমেই স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করছেন এবং কামাল পাশার পরিকল্পিত ইউরোপীয় ধাঁচের ধর্মনিরপেক্ষ (ধর্মহীন) তুরস্কের জন্যে পর্যাপ্ত ধৈর্য তাঁর নেই। তাছাড়া, এরদোয়ানের শাসনামলে ভিন্ন মতের লোকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং সরকারের সমালোচকদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র: ইয়াহু নিউজ। Feature Image Source: iuvmpress.com