সহিহ হাদিস এবং কুরআনুল কারিমে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন’র কতগুলো নাম পাওয়া যায়? ৯৯টি। এটা আমরা সবাই জানি। নামগুলো অনেকের মোবাইলেও আছে। ওয়ালমেট হয়ে ঝুলছে অনেকের ঘরে । দেয়ালের সৌন্দর্য বর্ধন করছে। আবার অনেকেই নিশ্চয় টাইমলাইনেও রেখে দিয়েছি। যেভাবেই হোক, কখনো কি পড়েছি গুনবাচক নামগুলোর অর্থ? যদি না পড়ে থাকি, আমাদের উচিত আজকে, এখনই পড়ে নেওয়া। গুগলে গিয়ে, ‘আল্লাহ্র ৯৯ নাম’ লিখে সার্চ দিলেই হবে। ৯৯ নামের মধ্যে অধিকাংশ নামই আপনাকে কোন না কোন ভাবে আশ্বাস্ত করবে যে, আপনি পূর্ণ নিরাপদে আছেন। ভয়ের কোন কারণই নেই এবং স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ রব্বুল আলামিন আপনাকে কতটা ভালবাসেন। কিছু নাম পড়লে মনের মধ্যে ভয় সঞ্চার হতেই পারে। তবে পাশাপাশি প্রশান্তিও দেবে। একচেটিয়া ভয় পাবেন এমন নাম ‘আমার মতে’ কেবল একটিই পাবেন। সেটা হচ্ছে, কাহহার (কঠোর)।
যেদিন প্রথম আল্লাহ তায়ালা’র নাম গুলো দেখলাম সেদিন একটাই প্রশ্ন মাথায় ঘুর-পাক দিচ্ছিল। আর সেটা হল, ৯৯টি নামের মধ্যে কেবল একটি নামেই কেন আল্লাহ তায়ালার প্রতি পরিপূর্ণ ভয় সঞ্চার হয়? কয়েকোটি নামে কেন ভয়ের সাথে সাথে প্রশান্তিও থাকে? আবার বেশিরভাগ নামগুলো কেন কেবলই ভালবাসার অনুভূতি দেয়? এর উত্তর হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের যতটানা ভয় দেখিয়েছেন, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি স্নেহ, সোহাগ বিলিয়েছেন। তাই তো সৃষ্টির কাজ যখন শেষ হল, জান্নাত-জাহান্নাম , ভালবাসা-ভয় সব, সবকিছু যখন বানানো শেষ হল। তখন আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর লিখে দিলেন, “নিশ্চয় আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল।“ (মুসলিম শরিফঃ ২৭৫১, হাদিসের মানঃ সহিহ)
কখনো ভেবেছেন, কোন মুসলিম নামধারী অভিনেত্রীর কথা। যে কিনা, অল্প কিছু টাকা এবং সামান্য খ্যাতি অর্জন করতে গিয়ে তার যৌবনকে মানুষের কাছে বিলিয়ে দিয়েছে। ছোট পোশাকেই সে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। আমাদের ঘরের ছেলেদের কাছে সে, স্বপ্নপুরীর রাজকন্যা। আর মেয়েদের কাছে সে নিশ্চয় অনুকরণীয় একজন। এই অভিনেত্রী যখন মৃত্যু বরণ করে আমাদের কি উচিত ছিল না, বেঁচে থাকতে যে কাপড় পরিধান করতে সে গর্ববোধ এবং স্বাচ্ছনদবোধ করত, মৃত্যুর পরেও তাকে সেই কাপড়ে রেখে দেওয়া? বিবেগ বা আমাদের মস্তিস্ক কিন্তু এটাই বলে। কিন্তু বিবেগ বা বুদ্ধির নামতো ইসলাম না। ইসলামতো ভালবাসার নাম। বিশ্বাসের নাম। আর বিশ্বাস যে খালি চোখে দেখা যায় না?
আল্লাহ তায়ালা আমাদের এত ভালবাসেন যে, আমাদের আকল যখন বলছে যে, সেই অভিনেত্রীকে ঐ পোষাকেই পুতে দেওয়া হোক, বেঁচে থাকতে যে পোশাক সে পছন্দ করত। তখন আল্লাহ তায়ালা বিধান করে দিয়েছেন যে, আজ আল্লাহর এই বান্দিনির শেষ যাত্রা। মৃত্যুর আগে উলঙ্গ থাকাকে সে যতই পছন্দ করুকনা কেন, আজ তাকে ঢেকে দেওয়া হোক। আগে যতই পুরুষের সামনে নিজেকে মেলে ধরুক না কেন, আজ নতুন যাত্রায় সম্মানের সাথে তার চারি দিকে পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হোক। সে হয়তো, ইসলামকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু ইসলাম যে তাকে কখনোই ছাড়ে নি। সে যেমনই হোক, নিজেকে যে মুসলিম হিশেবে সে ঘোষণা করেছিল। তাই শেষ যাত্রায় এই সম্মানটুকু আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য একটা তোহফা। আর এটাই ইসলাম।
মনে পড়ে , বনী ইসরাইলের যুগের সেই পতিতার কথা? শুধু তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি খাওয়ানোর ফলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছিল(বুখারি শরিফঃ ৩৩২১, মুসলিম শরিফঃ ২২৪৫)। বিশ্বাস হয়? সামান্য পানি পান করানোর ফলে একজন ‘বনী ইসরাইলের’ যুগের পতিতাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে! ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ্য জাতি হিশেবেই বনি ইসরাইলদের বিবেচনা করা হয়। তাদের জন্য যদি এই নে’মত থাকে, আমরা তো শ্রেষ্ট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র শ্রেষ্ট উম্মত। কোন মৃতব্যক্তি সারা জীবন পাপ করতে করতে তার ইমান চলে গিয়েছে, নাকি কোন একটা ছোট্ট নেক আমলের কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, সেটাতো আমরা কেউই জানিনা। তাই তার শেষ যাত্রায় তাকে সম্মানের সাথে রেখে আসাটাই আল্লাহ তায়ালা’র পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কর্তব্য। সে মৃত ব্যক্তি গুনাহগার নাকি ক্ষমাপ্রাপ্ত তা নিশ্চয় জানিনা। তবে, এটা অবশ্যই জানি যে, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুই করতে পারেন(সুরা হাজ্জঃ৬)।
পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে এর চেয়ে বেশি ভরসার বাণী আমাদের কে শোনাবে? এতটা ভালবাসা আমাদের কে দেবে? সারাজীবনের অবাধ্য হয়ে থাকা স্বত্বেও নিমিষেই, এক মুহূর্তেই ক্ষমা পেয়ে যাচ্ছি। আমার খেয়ে, আমার পড়ে, আমাকে কষ্ট দেওয়া মানুষকে আমি কখনোই এত জলদি ক্ষমা করতে পারবনা। আমরা পারবো না ঠিক , তবে, আল্লাহ তায়ালা পারবেন। কেননা, তিনি আমাদেরকে বড় ভালবেসেই সৃষ্টি করেছেন। তিনিই পারবেন, কেননা, যার উম্মত হওয়ার জন্য নবীগণ দুয়া করেছিলেন, আল্লাহ তায়ালা বড্ড মায়া করেই সেই প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উম্মত হিশেবে আমাদেরকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। এই ভালবাসার ঋণ শোধ করাতো সম্ভবই না। তবে, ভেবে দেখতে পারি, শুকরিয়া স্বরুপ আমরা কী দিতে পেরেছি, অবাধ্যতা ছাড়া?
প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন