“দিরিলিশঃ আরতুরুল” সিরিজের মাধ্যমে কাইয় গোষ্ঠীর IYI প্রতীকটি যেমনি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তেমনি এর মূল অর্থ এবং উদ্ভব-রহস্য নিয়ে দিরিলিশ-প্রেমীদের মাঝে কৌতুহলের শেষ নেই। ইতিহাসবিদগণ এই অদ্ভূত প্রতীকের রহস্যভেদ করেছেন, যা বাংলা ভাষায়ও সুলভ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। তাই তুর্কী ভাষার উৎস থেকে অনুবাদ করে কাইয় গোষ্ঠীর প্রতীকের রহস্য সংক্ষেপে উল্লেখ করছি।
এ প্রতীকটি যে শুরু থেকেই দেখতে এমন ছিলো, তা কিন্তু নয়। বরং যুগ যুগ ধরে এর বিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। ঐতিহাসিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে,
১ নং প্রতীকের ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন ব্যক্তি তার দুই হাতে দুটি শিশুকে কোলে নিয়েছেন। এই ব্যক্তিটি হলেন কাইয় গোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ, ওয়ুয খায়ান এবং তার কোলে তার দুই শিশুপুত্র বোযোখ ও উচোখ। [১] [২]
একসময় বোযোখ ও উচোখ প্রাপ্তবয়স্ক হয় এবং গোষ্ঠীর হাল ধরে। একসময় এ দুইজনের নেতৃত্বে গোষ্ঠীর বাসিন্দারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্ব ও পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ে। তখন এই দুই গোষ্ঠীর ঐক্যের আশায় প্রতীকে পরিবর্তন আসে। ২ নং প্রতীকের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ওয়ুয খায়ানের দু’পাশে প্রাপ্তবয়স্ক বোযোখ এবং উচোখ দাঁড়ানো এবং মাঝে, তাদের পিতা ওয়ুয খায়ান দুদিকে হাত প্রসারিত করে দুই ছেলে তথা গোষ্ঠী দু’টির ঐক্যের জন্য প্রার্থনারত। [২]
এরপর বহুযুগ এবং শতাব্দীকাল গত হয়। বোযোখ এবং উচোখের গোষ্ঠীগুলো একতার পরিবর্তে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীকালে, এ গোষ্ঠীগুলোর মাঝেও আরও বিভাজন দেখা দেয়। বোযোখ এবং উচোখ উভয়েরই তিনটি করে ছেলে নিজ নিজ লোকদের নিয়ে আলাদা গোষ্ঠী গঠন করে এবং এদের প্রত্যেকের আরও চারটি করে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়।
ইতিমধ্যে কাইয় গোষ্ঠী প্রতীকটিকে আরও সরলীকরণ করে ব্যবহার করতে থাকে, যার ফল দেখা যায় ৩ নং প্রতীকে। এই প্রতীকটি অনুসারে, কাইয় গোষ্ঠী আকাংক্ষা করতে থাকে যে, বোযোখ এবং উচোখের উত্তরসূরী বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীগুলো ঐক্য গড়ে তুলবে। তাই ৩ নং প্রতীকে মাঝের স্তম্ভটি দ্বারা ওয়ুয খায়ান এবং পাশের স্তম্ভ দুটি দ্বারা বোযোখ এবং উচোখের উত্তরসূরী দুটি পৃথক বংশকে বুঝাতো। [২]
সুলেয়মান শাহ ও আরতুরুল গাযীর সময় এবং এমনকি পরবর্তীকালেও, কাইয় গোষ্ঠী এই ৩ নং প্রতীকটিই ব্যবহার করতো, যা তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র এবং অন্যান্য দ্রব্যাদিতে দেখা যায়। [৩]
ইতিহাসবিদগণের মতে, ওয়ুয গোষ্ঠীগুলো তাদের সার্বভৌমত্ব প্রকাশ করতে তীর ও ধনুকের প্রতীক ব্যবহার করতো। তাই অনেকে মনে করেন, ৩ নং প্রতীকের মাঝের স্তম্ভটি মূলত একটি উল্টো অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির ধনুক এবং পাশের স্তম্ভ দু’টি দ্বারা দু’টো তীর নির্দেশ করা হয়েছে, যা ৪ নং প্রতীকের ছবিতে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কাশগরের (বর্তমানে চীনের অন্তর্ভুক্ত) বিখ্যাত অভিধান লেখক মাহমুদ ইবনে হুসাইন আল-কাশগরী (১০০৫-১১০২ খৃঃ) রচিত “দিওয়ান লুগাতুত্ তুর্ক” গ্রন্থে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, কাইয় গোষ্ঠী অনেকক্ষেত্রে ৫ নং প্রতীকটিও ব্যবহার করতো। [৪]
তবে সেলজুক সাম্রাজ্যের সময় সংকলিত ইতিহাস গ্রন্থ অনুসারে, কাইয় গোষ্ঠীর প্রতীকটি দেখতে ছিলো ৬ নং প্রতীকটির মতো। [৪]
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বুলগেরিয়ার একটি গোষ্ঠীর প্রতীকের সাথে কাইয় গোষ্ঠীর প্রতীকের অদ্ভূত মিল পাওয়া যায়। বুলগেরিয়ার একটি নেতৃত্বদানকারী গোষ্ঠী, “দুলো” এই প্রতীকটি ব্যবহার করতো। [৫] ইতিহাসবিদগণের মতে, দুলো গোষ্ঠীঢ় আবির্ভাব হয়েছে পশ্চিম তুর্কী খাগান এবং হানদের থেকে, যেখান থেকে ওয়ুযদেরও আবির্ভাব হয়েছে। কাজেই এরকম মিল বিদ্যমান থাকা স্বাভাবিক বৈকি।
প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন