একজন স্বপ্নচারী সিমেগনিউ বেকেলে
২০১৮ সালের ২৬ জুলাই, ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবার ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে সিমেগনিউ বেকেলের নিজের গাড়ি থেকে তার মৃত্যদেহ উদ্ধার করে ইথিওপিয়ান পুলিশ। গাড়ির মধ্যে তার মাথায় গুলিবিদ্ধ দেহের পাশেই অস্ত্র পড়েছিল। তার গাড়ির বাইরের অংশেও একটা গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। এই হত্যাকান্ডের পর ইথিওপিয়ার পুলিশ হেড জেনু জেমাল জানান— ‘এটা একটা আত্মহত্যা ছিল।’
সিমেগনিউ বেকেলে ছিলেন ইথিওপিয়ার ৪১ হাজার কোটি টাকার ‘গ্র্যান্ড রেনেসাঁস ড্যাম’ এর হেড প্রজেক্ট ম্যানেজার। এই গ্র্যান্ড রেনেসাঁস ড্যাম বা জিইআরডি হলো পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী নীলনদের অববাহিকায় অবস্থিত একটি বিশাল জল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বাঁধ।
ইথিওপিয়ার ৪১ হাজার কোটি টাকার ‘গ্র্যান্ড রেনেসাঁস ড্যাম’ এর হেড প্রজেক্ট ম্যানেজার সিমেগনিউ বেকেলে; Image Source: bloomberg.com
২০১১ সালে এই ড্যাম বা বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার পরে থেকেই মারাত্মক প্রেসারে ছিলেন বেকেলে। অজ্ঞাত শত্রুরা প্রতিনিয়ত তাকে প্রেসার দিচ্ছিল, ড্যামের কাজ যেন বিলম্বিত করে। কিন্তু বেকেল চাচ্ছিলেন ৬৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তৈরি এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে। ইথিওপিয়ান সরকারও চাচ্ছিল দ্রুত কাজ শেষ হোক।
ইথিওপিয়ান জনগণের স্বপ্নের এই ড্যাম তৈরি হলে দেশের ৯০% বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি, অন্য দেশেও বিদ্যুত রফতানি করতে পারবে। এ জন্যই নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার জন্য বেকেলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। মিডিয়াতে এ জন্য তিনি বেশ সক্রিয় ছিলেন, এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
সিমেগনিউ বেকলেকে হত্যা করা এই অজ্ঞাত শত্রু তাহলে কে? হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ইথিওপিয়ান সরকার আত্মহত্যা বললেও এটা যে স্পষ্ট হত্যাকান্ড তা যে কেউ বুঝতে পারবে। ড্যামের কাজ পেছানোর প্রেসারে বেকেলে আত্মহত্যা করতে চাইলে ব্যস্ত রাস্তায় কেন করবে? তাছাড়া তার গাড়ির বাইরে কেন গুলি চিহ্ন থাকবে?
এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ইথিওপিয়ান সরকার চুপ ছিল দেশের নিরাপত্তা ও মানসম্মানের কারণে। কারণ দেশের রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার লোক একটা পাবলিক ফিগারকে এইভাবে খুন করবে, তা প্রকাশ করলে রাষ্ট্রকে দুর্বল ভাববে। তাই বিষয়টা গোপন রাখে। পরে আরো তদন্ত করার পরে প্রকাশ হয়, বেকেলের পরিবারকেও ঐ অজ্ঞাত শত্রুরা প্রাণনাশের হুমকি দিত। হয়ত এজন্যই বেকেলে আরো বেশি চিন্তিত ছিলেন। বেকেলেকে তার পরিবার, সন্তান দিয়েই তারা ব্ল্যাকমেইল করতে চেয়েছিল।
হত্যা বা আত্মহত্যা যাই হোক, সিমেগনিউ বেকেলের হত্যার জন্যে ঐ অজ্ঞাত শত্রুই দায়ী। এই হত্যাকান্ডে অজ্ঞাত শত্রুর চেহারা তদন্তে ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। সেই অজ্ঞাত শত্রু হচ্ছে— মিশর। রেনেসাঁস ড্যামের শুরু থেকেই মিশর এই ড্যাম ঠেকাতে তৎপর ছিল। কুটনৈতিক চাপের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন দিয়ে স্যাবোটাসের মাধ্যমে যে কোন উপায়ে এই ড্যাম বা বাঁধের কার্যক্রম ঠেকাতে তৎপর ছিল মিশর।
সিমেগনিউ বেকেলে একজন স্বপ্নচারী ছিলেন। তিনি আশা দিতেন দেশের জনগণকে। তার দেশের জনগণের স্বপ্নের জন্য নিজের জীবন দিয়েছিলেন। জনগণের হিরো হয়েই আছে বেকেলে। ইথিওপিয়ান সরকারও বেকেলের স্বপ্ন পূরণের ব্যাপারে কোন ছাড় দিবে না। যে কোন মূল্যেই এই ড্যাম নির্মাণ করতে ডিটারমাইন।
ইথিওপিয়ার আশার আলো রেনেসাঁস ড্যাম
ইথিওপিয়া ২০১১ সালে ড্যামের কাজ শুরু করে। এই ড্যাম সুদান সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত এবং ইথিওপিয়া টানার লেকের পানি জমা করবে এখানে। টানা লেক থেকে ব্লু নীল নদী তৈরি হয়েছে। এই ব্লু নীল নদী সুদানে গিয়ে হোয়াইট নীল নদীর সাথে মিশেছে। হোয়াইট নীল নদীর উৎপত্তি হয়েছে উগান্ডা ও তাঞ্জানিয়ার ভিক্টোরিয়া লেক থেকে। এই ব্লু ও হোয়াইট নদী মিলে প্রবাহিত হয়েছে মিশরের নীল নদ নামে।
ম্যাপে হোয়াইট নীল নদ, ব্লু নীল নদ ও রেনেসাঁস ড্যামের অবস্থান দেখানো হয়েছে।
রেনেসাঁস ড্যাম আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ড্যাম। প্রজেক্ট কমপ্লিট হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২০২০ সালে প্রথম ধাপ, এবং ২০২২ সালে সম্পূর্ণ। চলুন টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
অফিসিয়াল নাম— গ্রান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁস ড্যাম।
ড্যাম ডিজাইন— ইটালীয় কোম্পানি।
ড্যাম ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার— সালিনা
প্রজেক্ট কস্ট— ৪১ হাজার কোটি টাকা।
ড্যাম ক্যাপাসিটি— ৫ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি লিটার পানি।
উৎপাদিত বিদ্যুৎ— ৬৪৫০ মেগাওয়াট
নির্মাণাধীন গ্রান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁস ড্যাম; Image Source: aljazeera.com
ড্যাম বা বাঁধ থেকে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়? ড্যামে মূলত পানি ধরে রাখা হয়, এবং দুই পাহাড়ের মাঝখানেই ড্যাম তৈরি হয়। এরপরে উপর থেকে এই পানির প্রবাহ সুনির্দিষ্টভাবে টার্বাইনের ব্লেডে ফেলে টার্বাইন ঘোরানো হবে। এর ফলে টার্বাইনের সাথে লাগানো অল্টারনেট ঘুরে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।
পানি দিয়ে এইভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করাকে হাউড্রোলিক প্রসেস বলে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ একেবারেই নগণ্য। ইউনিট প্রতি ১০ পয়সা মাত্র। শুধু প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্ট আর বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন লাইনের খরচটা একটু বেশি। অপারেশন খরচ একেবারেই নগণ্য। বাংলাদেশের রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে এই প্রসেসে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
২০২০ সালের জুলাই মাসেই এই ড্যামে পানি ভরা শুরু হওয়ার এবং আংশিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। ফুল ক্যাপাসিটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে ২০২২ সালে। ড্যামের ক্যাপাসিটি সাড়ে ৫ লক্ষ কোটি লিটার। এই বিশাল পানি ভরা শুরু করলে নদীর পানি প্রবাহ কিছুটা কমবে, এই জন্যই মিশর এত নড়াচড়া শুরু করেছে। তবে ড্যাম সম্পূর্ণ ভরে উঠলে নদীর পানির প্রভাব আগের মতোই থাকবে।
ইথিওপিয়ার জনগণের আশার প্রতীক কেন এই ড্যাম? ইথিওপিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ১১ কোটি এবং দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুৎ ৬৫০০ মেগাওয়াট। এই ড্যাম তৈরি হলে তাদের বিদুৎ চাহিদার প্রায় ৯০% পূরণ হবে। এছাড়া তারা সুদান, জিবুতি সহ আশেপাশের দেশে বিদ্যুৎ রফতানি করতে পারবে। ড্যাম থেকে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে ইথিওপিয়ান জিডিপি প্রায় ৪-৬% বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ড্যামের আশেপাশের এরিয়া টুরিস্ট স্পট হবে, যাতে প্রচুর পরিমাণ টুরিস্টের আগমন ঘটবে। টুরিস্ট রিলেটেড ব্যবসা, হোটেল, কর্মসংস্থান ইত্যাদি মিলিয়ে অনেক মানুষ এখান থেকে আয় করতে পারবে। এছাড়া এই ড্যাম থেকে বছরে প্রায় ৭ হাজার টন মাছ ধরতে পারবে।
ইথিওপিয়ার অর্থনীতকে বুস্ট করা এই ড্যাম আবার মিশরের গলার কাটা হবে? তাদের কি ইফেক্ট ফেলবে? কেনই-বা মিশর এই ড্যামের কাজ ঠেকাতে এত তৎপর?
রেনেসাঁস ড্যাম কেন মিশরের গলার কাটা?
মিশরের সভ্যতা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার একটি এবং এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নীল নদকে ঘিরে। মিশিরের পিরামিডের যে বড় বড় পাথর বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজে বোঝাই করে মিশরে আনা হয়েছে, তা এই নীল নদের উপর দিয়েই। বর্তমান মিশরেরও প্রায় ৮৫% মানুষ বসবাস করে নীল নদ এবং এর উপকূলের আশেপাশের এলাকায়।
নীল নদ হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম নদ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৮৫০ কি.মি। এর দুইটি উপনদ রয়েছে— হোয়াইট নীল ও ব্লু নীল নদ। হোয়াইট নীল নদের উৎস তাঞ্জানিয়ার ভিক্টোরিয়া লেক থেকে, আর ব্লু নীল নদের উৎপত্তি ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকেই। নীল নদের ৮৫% পানি প্রবাহিত হয় এই ব্লু নীল নদ থেকেই।
মিশরে অর্থনীতিতে নীল নদের গুরুত্ব অপরিসীম। মিশরের প্রাণ বলা যায় নীল নদকে। প্রাচীনকাল থেকেই মিশরীয়রা বিশ্বাস করে, মিশরের টিকে থাকার জন্য নীল নদের পানি স্থিতিশীল থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ, এবং এরা নীল নদের পানিকে পবিত্র বলে মনে করে। মিশর সুপেয় পানির ৯০% চাহিদা নীল নদের মাধ্যমেই পূরণ করে।
এছাড়া প্রতি বছর নীল নদের বন্যায় পলি পড়ে অতিমাত্রায় উর্বর হয়ে ওঠা দুই পাশের জমিতে প্রচুর ফসল ফলে। এর ফলে খালের সাহায্যে পানি নিয়ে নীল নদের দুই তীরের দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতেও চাষাবাদ ও পশু পালন করা হয়।
মিশরের নীল নদ; Image Source: apnews.com
মিশর ও ইথিওপিয়ার মূল দ্বন্দ্ব কোথায়? ইথিওপিয়ার রেনেসাঁস ড্যামের আয়তন ৭৪ হাজার বিলিয়ন লিটার। অর্থাৎ ড্যামটা সম্পূর্ণরূপে ভরতে এই বিশাল পরিমান পানি লাগবে। যেহেতু মিশর ভাটি অঞ্চলে অবস্থিত এবং নীল নদের ৮৫% পানি ইথিওপিয়ান ব্লু নীল নদ থেকেই আসে, তাই ড্যামে পানি ভরা শুরু করলে মিশরের নীল নদের পানির প্রবাহ কমে যাবে। ইথিওপিয়া চাচ্ছে ৫ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ ড্যাম পানি দিয়ে ভরিয়ে ফেলিতে। কিন্তু মিশর চাচ্ছে ১৫-২০ বছরের মধ্যে যেন ইথিওপিয়া ড্যামটা ভরে। মিশর ও ইথিওপিয়ান দ্বন্দ্বের এটাই মূল পয়েন্ট।
এছাড়া ড্যামে পানি ভরা শুরু করলে ডাউনস্ট্রিমে থাকা মিশর শুষ্ক মৌশুমে কম পানি পাবে। কৃষি, পশু পালন, খাওয়া পানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সৃষ্টি মুখে পড়বে মিশর। দেশটির নদীপথে পরিবহন ব্যবস্থাকেও হুমকির মুখে ফেলবে। এছাড়া পানির প্রবাহ কমে গেলে, মিশরের লেক নাসেরকে প্রভাবিত করবে। যার ফলে মিশরের আসওয়ান বাঁধে পানির প্রবাহ কমে যাবে, যেখান থেকে মিশরের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।
আর অন্য দিকে ৬৫% ইথিওপিয়ান এখন বিদুৎ ব্যবহার করতে পারে না। রেনেসাঁস ড্যাম থেকে উৎপাদিত বিদ্যু দিয়ে ইথিওপিয়া নিজেদের ৯০% চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অন্য দেশে রফতানিও করতে পারবে।
কাজেই কেউ কাউকে সহজে ছাড় দিবে না। এক্ষেত্রে আলোচনা ব্যর্থ হলে মিশর কি সামরিক অভিযান চালাবে? কী আলোচনা হচ্ছে? মিশর কি কি সামরিক এক্টিভিটি শুরু করেছে? হঠাৎ সুদানের দক্ষিণে কেন মিশর ঘাঁটি করতে চাচ্ছে? ইথিওপিয়াই-বা কি করবে?
রেনেসাঁস ড্যাম নিয়ে কি যুদ্ধ হবে?
২০১১ সালে যখন ইথিওপিয়া ড্যাম তৈরি শুরু করে তখন তার আগে থেকেই মূলত মিশর, ইথিওপিয়া ও সুদানের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। এই ড্যামে সুদানের পানির প্রবাহ তেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। মূলত মিশরই আলোচনায় দর কষাকষি করছে। মিশর, সুদান এবং ইথিওপিয়া মিলে চার বছর ধরে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোন অগ্রগতি হয়নি। ফলে ২০২০ সালে এসে এর মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এখনো সমাধান হয়নি।
ড্যামের কাজ শুরুর পর থেকেই মিশর ইথিওপিয়াতে তার গোয়েন্দা এক্টিভি বাড়িয়ে দেয়। এবং এই গোয়েন্দাদের ফুট হোল্ড ইথিওপিয়াতে কতটা শক্তিশালী তা ২০১৮ সালে ইথিওপিয়ার রাজধানীতে ড্যামের প্রধান ম্যানেজার সিমেগনিউ বেকেলেকে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রকাশ হয়। এছাড়া গোয়েন্দাদের দিয়ে আরো ছোটখাটো স্যাবোটাজের চেষ্টা চালায় ড্যাম প্রকল্পের আশেপাশে। কিন্তু কিছুতেই ড্যামের কাজের অগ্রগতি রোধ করতে পারেনি মিশর।
এই ড্যামের মেইন ডিজাইনসহ ইটালীয় একটি কোম্পানি ড্যামের প্রকল্পের কাজ করে। ফলে ইটালির গোয়েন্দারা ইথিওপিয়াকে সাহায্য করে বেশ কিছু স্যাবোটাজের পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়। আফ্রিকাতে ইটালি ও তুরস্কের গোয়েন্দারা কোলাবোরেশনে কাজ করে। আল শাবাবের হাতে আটক থাকা ইটালির মহিলা সাংবাদিক সিলভিয়া রোমানোকে এক বছর পরে উদ্ধার করা দুই দেশের গোয়েন্দাদের একসাথে কাজ করার সফল একটা উদাহরণ।
এই ড্যাম ঠেকাতে মিশর সামরিক এক্টিভিটির দিক থেকেও তৎপর। মিশরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ মুরসি প্রথম এই ড্যামের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি বলেন— ‘আলোচনায় সমাধান না হলে বোমা মেরে এই ড্যাম উড়িয়ে দেওয়া হবে’
এরপরে সিসি ক্ষমতা দখল করার পর আলোচনা ও সামরিক কার্যক্রম শুরু করে। মিশর থেকে ইথিওপিয়ান এই ড্যামের দূরত্ব প্রায় ২৫০০ কি.মি। এত দূরে থেকে বিমান হামলা করা আবার ফিরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। মাঝখানে রিফুয়েলিং করা যাবে, তখন তা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ। এজন্যেই মিশর সাম্প্রতি সুদানের দক্ষিণে দুইটা সামরিক ঘাঁটি তৈরির জন্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে এয়ার বেস হতে পারে।
এবার মিশর ও ইথিওপিয়ার সামরিক শক্তির দিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া যাক। আসলে এই দুই দেশের সামরিক শক্তির তুলনা করা বোকামি। পার্থক্য আকাশ পাতাল। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের বর্তমান র্যাংকি অনুযায়ী, মিশরের পজিশন ৯ আর ইথিওপিয়ার ৬০।
সামরিক খাতে মিশরের বছরে খরচ ১২ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের জিডিপির— ৩.৫%
অন্যদিকে ইথিওপিয়ার বছরে খরচ মাত্র ০.৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের জিডিপির— ০.৮%
সামরিক শক্তি: (মিশর/ইথিওপিয়া)
ম্যানপাওয়ার-৯.২ লক্ষ/১.৬২ লক্ষ
এক্টিভ সেনা- ৪.৪ লক্ষ/১.৬২ লক্ষ
রিজার্ভ সেনা-৪.৮ লক্ষ/ ০
ট্যাংক- ৪২৯৫ টি/ ৪০০ টি
এয়ারক্রাফট- ১০৫৪ টি/ ৮৬ টি
ফাইটাত জেট-২১৫/২৪
মিশর এখন কী করতে পারে? আলোচনা ব্যর্থ হলে মিশর চাইবে যে কোন উপায়ে এই ড্যাম ধ্বংস করতে। মিশর বিমান হামলা চালিয়ে ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু এতে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘকালীন যুদ্ধ শুরু হতে পারে। এজন্যে আগাম প্রস্তুতির জন্য মিশর সুদানে ঘাঁটি করতে চাইছে। এতে অবশ্য অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে সিসি-কে। তবে স্বৈরাচারের পক্ষে এই প্রেসার মোকাবিলা করা খুব কঠিন।
ইথিওপিয়া কী করবে? সামরিক শক্তিতে টিকে থাকা খুব কষ্ট হবে। এক্ষেত্রে ইথিওপিয়া মিশরের শত্রুদের সাথে সম্পর্ক করবে। ড্যাম যদি মিশর বিমান হামলা চালিয়ে ধবংস করে, তবে ইথিওপিয়া চাইবে যে কোন উপায়ে নীল নদের পানি আটকাতে চাইবে। এটা মোকাবিলা করার জন্যই মিশরের সুদানে ঘাটি করা।
সোমালিয়ার শান্তি রক্ষার জন্যে আফ্রিকা ইউনিয়নের হয়ে ইথিওপিয়ান সেনাবাহিনীর একটা ইউনিট আছে। ইথিওপিয়া চাইবে মিশরকে কুটনৈতিক প্রেসারে রাখতে। আমরা আশা করি আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হোক। যুদ্ধ হলে শুধু সাধারণ মানুষেরই ক্ষতি বেশি হয়।
তথ্যসূত্রঃ-
১. উইকিপিডিয়া।
২. water-technology.net
৩. spectrum.ieee.org
৪. আল জাজিরা ২৬/জুলাই/২০১৮
৫. রয়টার্স – ৭/সেপ্টেম্বর /২০১৮
প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন