১. তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ১০৭১ সালের মালাজগীর্দ যুদ্ধ-জয়ী সেলজুক সুলতান আল্প আরসালানকে নিয়ে একটা ভিডিও করেন। ভিডিওতে তুরস্কের সেলজুক থেকে ওসমানীয় এরপরে ১ম বিশ্বযুদ্ধের সেনা থেকে বর্তমান তুরস্কের সেনাবাহিনীকে হাইলাইট করা হয়েছে। মালাজগীর্দ যুদ্ধ জয়ের একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার। কারণ এই যুদ্ধের পরপরই আনাতলিয়া অঞ্চলে তুর্কী গোত্রদের বসতি প্রসারিত হয়। এরপরে এখান থেকেই ওসমানীয় সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়। এরদোয়ান সরকারের প্ল্যান হচ্ছে, তুরস্কের পুনর্জাগরণ। তুরস্ককে একটা মুসলিম দেশ হিসাবে পরাশক্তিতে পরিণত করার প্ল্যানিং নিয়েই এগোচ্ছে এরদোয়ান। তুর্কীরা ১ম শক্তিশালী হয়েছিল সেলজুক সাম্রাজ্যে। এই সাম্রাজ্য প্রায় ২০০ বছর টিকে ছিল। এরপরে এই সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়লে ওসমানীয় সাম্রাজ্য গঠন করে পরাশক্তি হিসাবে তিনিটা মহাদেশ শাসন করে প্রায় ৬০০ বছর।
২. সুলতান আল্প আরসালান ছিলেন ২য় সেলজুক সুলতান। তার আসল নাম ছিল মুহাম্মদ বেগ বিন দাউদ চাঘরাই। তিনি সামরিক দক্ষতা, বীরত্ব এবং লড়াইয়ে এতটাই পারদর্শিতার ছিলেন যে, তাকে আল্প আরসালান উপাধি দেওয়া হয়। যার অর্থ—বীর সিংহ সৈনিক বা সেনা। ১০৭১ সালে ২৬ আগস্ট মালাজগির্দ নামক স্থানে সেলজুক সাম্রাজ্য ও বাইজন্টাইন সাম্রাজ্যের মধ্যে এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যুদ্ধে ৩০ হাজার সেলজুক সেনার নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন সুলতান আল্প আরসালান ও ৭০ হাজার বাইজন্টাইন সেনার নেতৃত্বে ছিল সম্রাট রোমানোস। যুদ্ধে বাইজেন্টাইনরা পরাজিত হয় এবং সম্রাট চতুর্থ রোমানোস বন্দী হয়। বন্দি সম্রাটকে সুলতান আল্প আরসালানের সামনে আনা হয়। এরপরে সুলতান সম্রাটকে প্রশ্ন করেন— যদি আমাকে আপনার সামনে বন্দী হিসেবে আনা হত তবে আপনি কী করতেন?’ রোমানোস বললো— ‘হয়তো আমি আপনাকে হত্যা করতাম, অথবা কন্সটান্টিনোপলের রাস্তায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতাম।’ এরপর আল্প আরসালান বললেন— ‘আমার শাস্তি এর চেয়েও কঠিন। আমি আপনাকে ক্ষমা করলাম এবং আপনাকে মুক্ত করে দিলাম।’
৩. এই যুদ্ধ জয়ের ফলে আনাতলিয়াতে তুর্কী গোত্রগুলোর বসতি প্রসারিত হয়। এরপর সেলজুক সুলতানরা শিয়া ফাতেমি সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে। আব্বাসী সাম্রাজ্য তখন দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল। এরপরে মঙ্গল দস্যুদের আক্রমণ শুরু হয়। সেলজুক সাম্রাজ্য দুর্বল হতে থাকে, মঙ্গলদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে তুর্কী বসতিগুলো বাইজন্টাইন সাম্রাজ্যের সীমান্তের দিকে যেতে থাকে। কায়ী গোত্রের আরতুরুল গাজীসহ অনেক গোত্র মঙ্গলদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাইজন্টাইন সীমান্তের দিকে যেতে থাকে। এরপর মঙ্গলদের অত্যাচারে তুর্কী গোত্রগুলোকে একত্রিত করে কায়ী গোত্রের নেতা ওসমান, এবং বাইজন্টাইন সাম্রাজ্যসহ আনাতলিয়াতে উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্টা করেন। ওসমান এই সাম্রাজ্যের ১ম সুলতান হন।