সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্কের অংশ হিসাবে পাকিস্তানকে অত্যাধুনিক টাইপ-০৫৪ এ/পি ক্লাস ফ্রিগেটের ৪টি যুদ্ধ জাহাজ দিচ্ছে চীন। রোববার এর প্রথমটি হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৩টি ২০২১ সালের ভেতরে হস্তান্তরের কথা রয়েছে। যে কোনো দেশের জন্যে এটি চীনের তৈরি সবচেয়ে বড় ও উন্নত জঙ্গীজাহাজ।
উল্লেখ্য, পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চীন সফরের দিন দুয়েকের মাঝেই এ যুদ্ধজাহাজ প্রকাশ্যে এলো। ৪০০০ টন লোড ডিসপ্লেসমেন্টের ক্ষমতাসম্পন্ন এ জাহাজে আছে অত্যাধুনিক রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। পাশাপাশি এতে সোনার সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে। জাহাজটিতে ১৬৫ জন নাবিক অবস্থান করতে পারবেন।
পাকিস্তান নৌবাহিনী জানিয়েছে, জাহাজগুলোতে ভূমিতে, পানির নীচে ও আকাশে নিক্ষেপযোগ্য অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত করা হয়েছে। এতে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এটি থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ভূমিতেও আক্রমণ করা যাবে। তাছাড়া, এতে অত্যাধুনিক সেন্সর ও যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিও সংযুক্ত রয়েছে। এটি পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্যে অত্যাধুনিক ফ্রিগেট নির্মাণের বড় মাইলফলক। এ জাহাজগুলো আমাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শান্তি ও সুরক্ষা বজায় রাখতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
বিবৃতিতে জাহাজের ব্যয়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে, প্রতিটির জন্যে ৩৫ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি খরচ হয়েছে। জাহাজগুলো পাকিস্তান নৌবাহিনীর বহরের সবচেয়ে বড় এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সংযোজন হবে এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় তাদের সক্ষমতা বাড়াবে।
চীনা নির্মাতা আশা করছেন – ২০২১ সালের ভেতরে তারা ৪টি জাহাজই পাকিস্তানে পৌঁছে দিতে পারবেন – যা চীনা গণমাধ্যমের খবর মোতাবেক, পাক নৌবাহিনীর যুদ্ধ ক্ষমতা ‘দ্বিগুণ’ করে দেবে। ২০১৭ সালে ইসলামাবাদ চায়না শিপবিল্ডিং ট্রেডিং কোম্পানীর (সিএসটিসি) সাথে ২টি টাইপ-০৫৪ এ/পি রণতরী এবং পরের বছর তেমনি আরো ২টি রণতরী নির্মাণের চুক্তি করে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পাকিস্তানের নৌবাহিনী প্রধান কমোডর আফজার হুমায়ুন একে ‘প্রতিরক্ষা খাতে পাকিস্তান-চীনের নতুন যুগ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ভেতরেও নির্মাণ চালিয়ে যাওয়ায় নির্মাতা কোম্পানীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।
সামরিক বিশ্লেষকরা ভাবছেন – পাকিস্তানের জন্যে চীনের এতো আয়োজন মূলত চীর প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ঠেকাতে। একদিকে, পাকিস্তানের সাথে ভারতের কাশ্মীর সমস্যা – অন্যদিকে ভারতীয় সীমান্তে চীনের ব্যাপক উপস্থিতি। ইতোমধ্যে আবার নেপালের ভূমি দাবি। সব মিলিয়ে ভূরাজনৈতিক দিক দিয়ে বেশ চাপে রয়েছে ভারত।
বেইংজিয়ের সাথে অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা খাতের অন্যতম অংশীদার ইসলামাবাদ ২০১৬ সালে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিতে ৮টি চীনা ইয়ান শ্রেণীর টাইপ-০৪১ ডিজেল সাবমেরিন কিনতে ৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে – যা ২০২৮ সাল নাগাদ পাকিস্তানের হাতে পৌঁছাবে।
সূত্র: ইয়েনি শাফাক ও ভযেস অব আমেরিকা।
পছন্দের আরো লেখা