কান টানলে মাথা আসে, আর চেইন টানলে ট্রেন থামে। কিন্তু চেইন বা শিকলের সঙ্গে ট্রেনের সম্পর্ক কী? কিভাবে চেইনের টানে ট্রেন থামে? এটা জানার আগে জানতে হবে ট্রেনের ব্রেক সিস্টেম সম্পর্কে। ব্রেক সিস্টেমটা বেশ জটিল। কেন জটিল? নিউটনের প্রথম সূত্রে আমরা দেখেছি— ‘স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় চলতে থাকবে।’
ফলে হুট করে একটা ট্রেনের কোন ক্যারেজ বা ওয়াগন থামিয়ে দিলে ভীষণ বিপদ। পেছনের বগিগুলো গতিজড়তার কারণে তিব্র বেগে তাকে ধাক্কা দেবে। আর সামনের গুলো একে টেনে নিয়ে বা ফেলে চলে যাবে। তাই কোন ট্রেন যদি থামাতে হয়ে প্রত্যেকটি বগি ও ইঞ্জিন থামাতে হবে এক সঙ্গে।
এই জটিল কাজটি রেলের ইঞ্জিনিয়াররা খুব সহজে করার একটা বুদ্ধি বের করেছে বাতাস দিয়ে। ধরুন একটা টিউবের ভেতরে একটা পিস্টন রাখা গেল। টিউবটা খালি থাকলে সেটা উপরের দিকে উঠে থাকবে। আর বাতাসে ভর্তি হলে, বাতাসের চাপে নিচে নেমে আসবে। বাতাসের চাপ দিয়ে এই পিস্টন নামানো-উঠানোর বুদ্ধি দিয়ে ট্রেনের ব্রেক সিস্টেম গড়ে ওঠে। এটাও আবার দুই ধরনের আছে। শুধু মূল নীতিটি এখন বলা যাক।
এই পিস্টনের আরেক মাথায় লাগিয়ে রাখা হয় ব্রেক ব্লক। বাতাস ঢোকানো বা বের করার মাধ্যমে এই ব্রেক ব্লক চাকার গোড়ায় গিয়ে লাগে। ঘুর্ণায়মান চাকাকে আটকে আটকে ফেলে। দেখবেন প্রতিটি ট্রেনের ক্যারেজ একটি পাইপের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। তাকে রেলের লোকরা হোস পাইপ হলে। এই পাইপের মাধ্যমে আসলে প্রত্যেকটি ক্যারেজ ও ইঞ্জিনের ব্রেক ইন্টারলিংকড বা পরস্পর সংযুক্ত করে রাখা হয়। যেকোন একটি অংশ থেকে বাতাস বের হলে বা ঢুকলে সঙ্গে প্রত্যেকটি ক্যারেজ ও ইঞ্জিনের ব্রেকে এর সমান প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে ট্রেনের সবগুলো চাকা ঘোরা বন্ধ হয়ে যায়। ট্রেন থেমে যায়।
আমরা যে ট্রেনের শিকল বা চেইন টানি, তার আরেক মাথা আসলে ব্রেকের বাতাসের পাইপের কোন একটা ভাল্বের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আমরা সজোরে টানলে সেই ভাল্ব খুলে গিয়ে বাতাস ঢোকা বা বের করার ব্যবস্থা করে দেয়। সঙ্গে ফিসসস… একটা শব্দ করে ট্রেন থেমে যায়। এই শব্দটা আসলে বাতাসের।
প্রতিটি ট্রেনের ইঞ্জিন ও শেষের কামরায় ব্রেক ভ্যানে একটি বাতাসের প্রেশার মাপার মেশিন থাকে। তা দেখে ড্রাইভার বা গার্ড সহজে বুঝতে পারেন তার ট্রেনের কোথাও ব্রেক করা হয়েছে বা বাতাস বের বা ঢুকেছে কিনা।
এখন কিভাবে বাতাস বের ও ঢোকার মাধ্যমে ব্রেক কাজ করে পরে তা নিয়ে লিখব। বাতাস ঢোকার মাধ্যমে যে ব্রেক কাজ করে তাকে ভ্যাকুয়াম আর বের করার মাধ্যমে যে ব্রেক কাজ করে তাকে এয়ার ব্রেক বলে এটা শুধু আগে জানিয়ে গেলাম।
প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন
পছন্দের আরো লেখা