ভারতবর্ষে রেলওয়ের গোড়াপত্তন বেসরকারি উদ্যোগে। প্রচুর মুনফার লোভে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো ভারতবর্ষে রেলের ব্যবসা শুরু করে। বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এসব বেসরকারি উদ্যোগে পাতা রেললাইনগুলোকে এক করে সরকারি উদ্যোগে বড়ো রেল কোম্পানি গড়ে উঠে। উদ্দেশ্য ছিল সহজে সৈন্য পরিবহন। মোটকথা এ অঞ্চলে রেলের যাত্রা মুনফার কথা মাথায় রেখে।
১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ভারত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পথে অগ্রসর হওয়ার কারণে রেলওয়ের লক্ষ্য মুনফা না হয়ে সেবা হয়। কিন্তু কখনোই যেন রেল লোকসান না দেয় সেদিক ভারত সরকারের সর্বদা সজাগ দৃষ্টি ছিল। ফলে এতো বছরেও ভারতীয় রেলওয়ে লোকসানী প্রতিষ্ঠান হয়নি। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকারের অবশ্য এরকম কোন দর্শন ছিল না। পাকিস্তান আন্দোলনের সময় গ্রামের কৃষকদের বলা হত পাকিস্তান হাসিল হলে বিনা টিকেটে ট্রেনে চড়া যাবে। কারণ রেল তখন আর ব্রিটিশ সাহেবদের থাকবে না।
ফলে পাকিস্তান সৃষ্টির পর জনগণের ফ্রিতে ট্রেন চড়া শুরু হলো। রেলের লোকসান ঢাকতে ভারতের মতো পাকিস্তান রেলের কর্মকর্তারও বলতে লাগলেন, মুনফা নয় সেবাই লক্ষ্য। এই আপত্যবাক্য দিয়ে রেলওয়ে যেমন খুশি তেমন চলো নীতিতে চলতে লাগল। এরপর বাংলাদেশ হলো। সেই আপত্যবাক্যের জোরে এদেশে রেল এখনো লোকসান দিচ্ছে।
১৮৯৫ সালে দ্য বেঙ্গল প্রভিনশিয়াল রেলওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের একটা শেয়ার সার্টিফিকেট
আসলে ‘সেবাই লক্ষ্য’ কথাটি এসেছিল অন্যদৃষ্টিভঙ্গি থেকে। অর্থনীতিতে অনেকগুলো খাতের মধ্যে একটা খাত সেবা। পরিবহন সেবা খাত। সেবা খাত মানে যে লাভ করা যাবে না এমন কোন কথা নেই। যেমন টেলিকম খাত সেবা খাত। তারা কি লাভ করে না? ১৮৯৫ সালে দ্য বেঙ্গল প্রভিনশিয়াল রেলওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের একটা শেয়ার সার্টিফিকেটের ছবি দিলাম। ধনীরা রেলের শেয়ার কিনত। কারণ রেলে বিনিয়োগ মানে নিশ্চিত লাভ। লাভের পাশাপাশি তখনও রেল সর্বোত্তম সেবা দিত।
প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন