কলোনিজম শুরু হওয়ার পরে ইন্দোনেশিয়াকে ডাচরা (নেদারল্যান্ড) দখল করে ১৪২ বছর শাসন করে। ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে অক্ষশক্তির জাপানী সেনাবাহিনী ইন্দোনেশিয়া আক্রমণ করে ১৯৪২ সালে এবং ডাচদের কাছে থেকে দেশটির পশ্চিম উপকূলের প্রায় ৮০% এলাকা দখল করে নেয়।
২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে সুকর্ণের নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে ১৯৪৫ সালের ১৭ আগস্ট। কিন্তু পূর্ব ইন্দোনেশিয়া নিয়ন্ত্রণে থাকা ডাচরা এই স্বাধীনতার দাবী প্রত্যাখান করে।
এরপর সুকর্নের নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়ার জনগম স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করে।
বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পতনের পরে ১৯৪৫ সালের আগস্টের শেষের দিকে ব্রিটিশ বাহিনী ভারতীয় কিছু সেনা ব্রিগেড ইন্দোনেশিয়াতে প্রেরণ করে স্পেশাল মিশনে।
এরমধ্যে তিনটা মুসলিম ব্রিগেড ছিল। মুসলিম ব্রিগেড পাঠানোর সময় মুসলিম কমান্ডারদের বলা হয়, জাপানি সেনাদের অস্ত্র হস্তান্তর এবং গ্রেফতার করাই এই মিশনের লক্ষ্য।
কিন্তু ইন্দোনেশিয়াতে এসে মুসলিম সেনারা দেখে, ডাচ সেনাবাহিনী ইন্দোনেশিয়ার সাধারণ মুসলিমদের দাসে পরিনত করে অমানবিক নির্যাতন করছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ “আল্লাহু আকবার” বলে কান্নাকাটি করছে।
গোলাম আলী ছিল ৩২ ডিভিশনের কমান্ডার। গোলাম আলী তার বিশ্বত্ব সেনা গোলাম রসুল ও ৭ জন সেনার সাথে একটা গোপন বৈঠক করে। এরপরে তাদের ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা যোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ করে। তাদের যোগাযোগের কোড ছিল “আসসালামু আলাইকুম”।
এরপরে গোলাম আলীর নেতৃত্বে ৬০০ মুসলিম সেনা ব্রিটিশ বাহিনী ত্যাগ করে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা যোদ্ধাদের সাথে যোগ দেয়। প্রশিক্ষিত এই মুসলিম সেনারা সাহসীকতার সাথে যুদ্ধ করে, ডাচ-ব্রিটিশ যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে।
আগস্ট ১৯৪৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে। এরপরে ডাচরা ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার সীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
ভারতীয়-পাকিস্থানী ঐ ৬০০ মুসলিম সেনাদের মধ্যে মাত্র ৭০ জন বেচে ছিল। ইন্দোনেশিয়া স্বাধীন হলে কেউ কেউ ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।
এখানেই বিয়ে করে স্থায়ী হয়। কিছু সেনা ইন্দোনেশিয়ার পাকিস্থান এম্বাসিতে যোগ দেয়। ইন্দোনেশিয়ার সরকার ও জনগণে অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা হিসাবে গোলাম আলীকে ১৯৬৩ সালে ইয়ানাওতুমা এওয়ার্ড দেওয়া হয়।
ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধে এইসব মুসলিম সেনাদের কথা উল্লেখ্য করলাম বর্তমান মুসলিম শাসকদের কথা মনে করে। একটা বিষয়, দেখেন ব্রিটিশদের অধীনে থাকা এই ৬০০ সেনা স্রোতের প্রতিকূলে শুধু মাত্র নির্যাতিত মুসলিম ভাই বোনদের সাহায্য করা জন্যে নিজেদের অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন।
আর এখন মুসলিম দেশের শাসকরা কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, রোহিংগা, উইঘুর, চেচনিয়াতে নির্যাতিত মুসলিম ভাই বোনদের কান্নার শব্দ শুনতে পায় না। ক্ষমতা ও ব্যবসায়ীক স্বার্থ ওদের কানকে বধির করে দিয়েছে, চোখকে অন্ধ করেছে।
ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মুসলিম বসবাস করে। ইন্দোনেশিয়া সামরিক ও অর্থনৈতিকভাব্র এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৩০ সালে ইন্দোনেশিয়া ৪র্থ শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশে পরিনত হবে।
প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন