আগের পর্ব: দুর্ধর্ষ চেঙ্গিস খান ও মঙ্গোল সাম্রাজ্যের উত্থান
মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে চেঙ্গিস খানের আঞ্চলিক আধিপত্য দ্রুতই বৃদ্ধি পেতে থাকলো। প্রতিদ্বন্দ্বী গোত্রগুলো দেখলো জামুইকার পর তাদের আশির্বাদ দেওয়ার মত আর কেউ নেই, তাই অধিকাংশই চেঙ্গিস খানের আধিপত্য মেনে নিলো, আর যারা মানতে অস্বীকার করলো তারা দেখতে পেলো মানব ইতিহাসের হিংস্রতা কাকে বলে। মনে রাখতে হবে, নেতা হিসেবে খাগান মঙ্গোলের গোত্রগুলো ব্যতীত অন্যেরা ভালবাসার চাইতে ভয় কিংবা ভবিষ্যৎ প্রাপ্তির আশায় চেঙ্গিসের দলে যোগদান করেছিল।
চেঙ্গিস খানের সবচেয়ে বড় গুণ বলতে আমার কাছে যেটি মনে হয়েছে, তা হচ্ছে মানুষকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করতে পারা। তাতারিদের উপর ১১৯৭ সালে আক্রমণ করার পর ইচ্ছা করলেই তাদের উপর ধ্বংসলীলা চালিয়ে দিতে পারতো, কিন্তু তা না করে বরং তাতার যোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন করেছিল বলেই জামুইকার সাথে যুদ্ধ জয় তাদের জন্য সহজ হয়েছে। তাতারিরা মধ্য-এশিয় তুর্কি ব্লাড লাইন হওয়ায় ন্যাচারালী এক যোদ্ধা জাতি হিসেবেই পৃথিবী বিখ্যাত। এই বিখ্যাত যোদ্ধাদের কারণেই মঙ্গোলদের মঙ্গোল নামের চাইতেও তাতার হিসেবে বেশি পরিচিতি লাভ হয়।
যাইহোক, বিশ্বে প্রথম জেনারেল হিসেবে ডেসিম্যাল সিস্টেমে সেনা সাজানোর কার্যকরি সিস্টেম মনে হয় চেঙ্গিস খানের বড় অবদান রয়েছে। সেনাদের সুযোগ সুবিধাও যেমন বেশি ছিল, তেমনি নিয়ম পালনেও ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। দশ জনের সেকশনে একজন অপরাধ করেছে মানে অন্য নয়জনের কল্লা এমনিতেই গেছে। এর ফলে দেখা গেছে প্রতি সেকশনেই কেউ উল্টা-নীতি চাইলেও নয়জনের কারণে আর পারেনি।
চেঙ্গিস খান খান হওয়ার দিন তিনি কথা দিয়েছিলেন, মঙ্গোলদের বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দিয়ে যাবেন, তাই এবার বিশ্ব জয়ের পালা। রাষ্ট্র হিসেবে এই পালা পর্বনের প্রথম স্বীকার হল ‘শি শিয়া ডাইনেস্টি’। পার্শ্ববর্তি চাইনিজ জিনদের সাথে মঙ্গোলদের দ্বন্দটা বেশ পুরনো। যখন জিনরাও চায়নার দেয়ালের বাইরে ছোট্ট এক রাষ্ট্র চালাত তখন থেকেই লিয়াও জিন দ্বন্দ্ব সংঘাত লেগেই আছে, আর খাগান মঙ্গোলদের পরাজিত করতে তাতাদের সরাসরি সাহায্য সহযোগিতার ইতিহাস তো রয়েছেই।
পরবর্তীতে সংদের দক্ষিণে হটিয়ে উত্তর চীন দখলে নিয়ে ফুলে ফেপে ভালই স্বাস্থবান হয়েছে। এমন যৌবনা কুমারীকে চেঙ্গিস খান ছেড়ে দিলে সম্পদ ও প্রতিশোধ উভয়টাই হাতছাড়া হতে বাধ্য। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুউচ্চ এক দেয়াল। দেয়াল ভেদ করে মঙ্গোল স্টাইলে বাপ দাদারা সেই ট্যাং ডাইনেষ্টির সময় থেকেই হামলা করে দেয়ালে মাথা কুটে মরেছে। সরাসরি আক্রমণ মানেই হচ্ছে চেঙ্গিস খানেরও নিরন্তন এক মাথা কুটে মরা। তার চাইতে বরং আরেকটা কাজ করা যায়, যদি শি শিয়া দখল করে নেয়া যায় তবে কয়েকটা লাভ তার হবে। যেমন:
—জিন সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শিয়াদের সাহায্য পাওয়া যাবে।
—যেহেতু শিয়া সাম্রাজ্যের পরেই জিন সাম্রাজ্যের গ্রেট ওয়ালের শুরু তাহলে অবশ্যই সেখানে কোন না কোন একটা রাস্তা পাওয়া যেতেই পারে।
—যেহেতু শিয়া রাজ্যের ভিতর দিয়েই সিল্করোড গিয়েছে এতে কিছুটা হলেও জিনদের চাপে রাখা যাবে।
—সারা জীবন পাহাড়, উপত্যকায় যুদ্ধ করলেও আধুনিক সভ্য জগতে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই, জিনদের শক্তিশালী আর্মির বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতা ছাড়া যুদ্ধে যাওয়া আর আত্মহত্যা করা দুইটাই সমানে সমান।
তাই অবশেষে তিন দফা আক্রমণের পর ১২০৯ সালে শি শিয়া চেঙ্গিস খানের দখলে আসে। চেঙ্গিস খানের কাছে সংবাদ আসে যে, শিয়া সাম্রাজ্যের একেবারে শেষে জিংছিংয়ের পাশে ভূমিকম্পে আরও অনেক আগেই দেয়ালের কিছু অংশ ভাঙ্গা আছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দেয়ালের অপর পাশেই থাকে চাইনিজ মার্সেনারি আর্মি আর এপাশে বিস্তির্ণ গোবি মরুভূমি। চেঙ্গিস এক উভয় সংকটে পরে যায়।
এদিকে শি শিয়ার পতনের সংবাদ জিন রাজার কানে পৌছালেও কানে পানি তেমন ঢুকেনি। ও্যাইয়্যান ইয়ুনচি বিষয়টিকে তেমন গুরুত্বের সাথে নেয়নি। কারণ সে ভাল করেই জানত চেঙ্গিসের পক্ষে সরাসরি দেয়াল পার হয়ে আসার উপায় নেই, গোবি পার হয়ে আসলেও সেই জিংসিং পাসের ৫০,০০০ মার্সেনারি সৈনিকই যথেষ্ট। তাই রিলাক্স মুডে বিষয়টিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বরং দক্ষিণের সং সাম্রাজ্য কিভাবে দখন করা যায় সে চিন্তায় বিভোর হয়ে রইল।
অনেক চিন্তা, ভাবনা ও পরিকল্পনার পর ১২১১ সালে সকল জেনারেলদের ডেকে ঘোষণা দিল আমরা জিন সাম্রাজ্যের উপর আক্রমণ করছি। জানতে চাইল কোন পথে? মানচিত্রে আঙ্গুল দিয়ে সর্বাপেক্ষা কঠিন পথ গোবি পার হয়েই হামলা করব। জেনারেলরা জানের ভয়ে কিছু বলতে না পারলেও বলল মরু পারি দিব কি করে? চেঙ্গিস ফর্মুলা বলে দিল প্রত্যেকেই কয়েকটা করে ঘোড়া নিবে, এক ঘোড়া ক্লান্ত হয়ে গেলে তাকে ফেলে আরেকটায় আরোহন করবে। শুরু হলো ইতিহাসের এক কঠিনতম যুদ্ধ যাত্রা।
গোবি মরুভূমি, মঙ্গোলিয়া Image Source: qantas.com
চেঙ্গিস খান যাত্রা করেছে, গোয়েন্দা মারফত সংবাদ পাওয়ার পরও জিন সাম্রাজ্য প্রস্তুতি না নিয়ে ইয়ুংছি চিঠি পাঠায়— ‘জিন সাম্রাজ্য বিশাল এক সমুদ্রের মত, সে তুলনায় তুমি নিতান্তই একমুঠো বালুকণা ব্যাতীত কিছুই না, কি করে তুমি এ সাম্রাজ্য দখল করবে? আর আমরা তোমাকে দেখে ভয় পাবই বা কেন?’
সেই সাথে নিজের মূল ফোর্স না পাঠিয়ে সীমান্তের যাযাবর গোষ্ঠীর প্রায় ৫০,০০০ সৈন্যের মার্সেনারি ফোর্স গঠন করে জিংসিংয়ের পাস রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করে। সম্রাটের ভাবা উচিৎ ছিল, অধিকাংশ যাযাবর গোষ্ঠীগুলো কোন না কোনভাবে মঙ্গোল বংশোদ্ধুত, তাছাড়া তারা টাকার জন্য যুদ্ধ করে, চেঙ্গিস খান টাকা বেশি দিলে তার পক্ষে চলে যেতে পারে। এই কাজ না করে পিছনের দূর্গগুলোতে নিজ সেনা মোতায়েন করে তাদের উপর চেঙ্গিস ঠেকানোর দায়িত্ব দেয়া হয়। আরেকটি সমস্যাও প্রকটভাবে দেখা যায়, তা হচ্ছে দেয়াল যেমন চীনকে সুরক্ষা দিচ্ছে ঠিক, তেমনি দেয়াল সুরক্ষার জন্যেও বাহিনীর বিশাল এক অংশকে নিয়োজিত রাখতে হচ্ছে। এছাড়াও দক্ষিণের সংদের সাথে রক্তাক্ত সম্পর্কের কারণে আরেকটা বাহিনী সে সীমান্তে নিয়োজিত রাখতে হয়েছে।
এত কিছুর পরও বলতে হবে জিন সাম্রাজ্যের অতি মাত্রায় আত্মতুষ্টি, প্রজাদের সাথে রাজনৈতিক গোলযোগ, আভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীগুলোর সাথে চলা মনস্তাত্বিক দ্বন্দ জিনদের বাহিরের বাঘের খোলসের আড়ালে বিড়াল বানিয়ে রেখেছিল। সেই সাথে অহংকারের আগুন তাদের পুড়িয়েছে।
এদিকে গোবি পারি দিয়ে ক্লান্ত চেঙ্গিস বাহিনী চীন সীমান্তে হাজির। বহু সেনা ও ঘোড়া মরুর বুকে হারিয়ে সীমান্তে এসেই যদি দেখে প্রায় ৫০,০০০ সেনা তাদের উত্তম মধ্যম স্বাগতম জানাতে দাঁড়িয়ে আছে কেমন লাগবে? অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, এই সময়ে যে কোন হামলা মোকাবেলায় চেঙ্গিস যথেষ্ট প্রস্তুত কিংবা সাবলীল কোনটাই ছিলেন না। কিন্তু এত দিন দিয়ে আসা হিটলারের মত জাতীয়তাবাদী ভাষণ যে মোঙ্গল জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করছে তা তো জানা ছিল না। প্রতিরোধকারী মার্সেনারী সেনাপ্রধান চেঙ্গিস খানের কাছে আত্মসমর্পন করে বসলো এবং চীনে আক্রমণে দেয়ালের ওপাশের সমগ্র তথ্যই চেঙ্গিস খানকে দিয়ে দিলো।
মঙ্গোল – জিন যুদ্ধ
আর যায় কোথায়, চেঙ্গিস বাহিনী যেন লম্বা সফরের ক্লান্তি ভুলে গেলো। পুরাতন ৫০,০০০ এর সাথে নতুন ৫০,০০০ যোগে হামলে পড়লো চীনের বুকে। নিকটবর্তী গ্রাম আর শহরগুলো দেখলো মঙ্গোল হিংস্রতা কাকে বলে। আমরা আরাকানের হিংস্রতা দেখে কেঁদেছি, একবার ভাবুন তো চেঙ্গিসীয় বর্বরতা কেমন ছিল? জিন সাম্রাজ্যের কাছে যখন সংবাদ আসলো তখন আর কিছুই করার নেই। এবার তারা শুধু রাজধানী সংদো/জংদো (বেইজিং) বাঁচাবার চেষ্টা করতে পারে। আর রাজ্য-জুড়ে প্রতিরোধের ডাক দেয়া ছাড়া কিছুই করার রইল না।
চেঙ্গিস খান তার মূল বাহিনী নিয়ে রাজধানী অভিমুখে এগিয়ে চললো, রেয়ার সাইট নিরাপত্তার দায়িত্ব দিলো ৩য় ছেলে ওগেদাই খানকে। ওগেদাই সীমান্তবর্তী শিজিং দূর্গে আক্রমণ করায় পিছন থেকে চেঙ্গিস খান নিরাপদ থেকে যায়। চেঙ্গিস খানের টার্গেট ছিল ঝেংচিয়াকাউ হয়ে আক্রমণ করবে। কিন্তু ইয়োলিং এসেই দেখে ওনয়িয়ান লিয়াং চেঙ্গো বিশাল জিন বাহিনী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। পাহাড়ে এক চিলতে ছোট পাসের জন্য উভয় পক্ষই অবস্থান নিয়ে বসে থাকে। একদিকে যেমন চেঙ্গিস খান এমন সরু পাহাড়ি রাস্তা ধরে অশ্বারোহী বাহিনী পরিচালনা করতে পারছিল না, ঠিক একইভাবে জিন আর্মিও এগোতে পারছিলনা। তবে জিন আর্মির কিছুটা এডভান্টেজ ছিল তবে তা কতটুকু এফেক্টিভ হত যেহেতু কাজে লাগানো হয়নি তাই আর বলা যাচ্ছে না।
চেঙ্গিস খানের সাথে আলোচনার জন্য চেঙ্গো ‘শিমো মিং কে পাঠায়। মিং ছিল খিতানের কোন এক গোত্রের। ফলাফল আগের মতই তার মাঝে মঙ্গোল জাতীয়তাবাদ জেগে উঠায় চেঙ্গিস খানকে জিন আর্মির সকল তথ্যই দিয়ে দেয়। পরের দিন চেঙ্গিস খান সুবুতাই আর জেবে কে নির্দেশ দেয় যেন উসা দূর্গ আক্রমণ করে। এই দূর্গে আসতেও পাহাড় ডিঙ্গিয়ে আসতে হয়েছে। দূর্গ দখল করে মঙ্গোল রক্ত নিত্যে তারা সেজেছে।
দখল শেষে আবারো তারা মূল বাহিনীতে যোগ দেয়, শীমু মিংয়ের তথ্যানুসারে জেবে জিনদের মধ্যবর্তী অংশে আক্রমণ করে, হঠাত আক্রমণে দিশেহারা জিন সাম্রাজ্যের বাহিনী কিছু বুঝে উঠার আগেই জেবে বাহিনী নিয়ে পিছিয়ে আসে, জেবেকে ধরতে জিন রেয়ার উইং ছোটে আসে। কিন্তু পরিকল্পিত পলায়নের ফাঁদে পরে আবারো সাবুতাই ও জেবের হাতে জিন ধ্বংসলীলা চলতে থাকে। এদিকে রিয়ার উইং এবং সেন্ট্রাল ডিফেন্স না থাকায় চেঙ্গো একটু পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয় আর এই সুযোগে চেঙ্গিস ও মুকালী আক্রমণ করে জিন বাহিনীকে তছনছ করে দেয়।
লম্বা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে না আসায় চেঙ্গিস খান শীত আসার সাথে সাথেই সরে আসতে বাধ্য হয়। তবে আসার পথেও ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে থাকে, এভাবেই শিজিং এসে চেঙ্গিস খান নিজেই তীরের আঘাতে আহত হলে ১২১১ সালের চীন যাত্রার সমাপ্তি ঘটে।
চেঙ্গিস যে ধ্বংস সাধন করে গেছে তা মেরামত করাও ছিল সময় সাপেক্ষ এবং পরের বছর আক্রমণ না করায় জিনরা হয়তো ভেবেছিল আর আসবে না। তাদের এই ঢিলেঢালা ভাব চলাকালীন সময় ১২১৩ সালে চেঙ্গিস পুনরায় আক্রমণ করে বসে। তাদের পথ চেয়ে থাকা ইয়োলিং কে পাশ কাটিয়ে সরাসরি তিনটি ভাগে, তথা— ওগেদাই খানকে ঊসায়, জেবে ও মুকালি মাঞ্চুরিয়ায় আর চেঙ্গিস নিজে সেন্ট্রালে থেকে একে একে জিনদের সকল ডিফেন্সলাইন ধ্বংস করে জংদো অবরোধ করেন, এবং বাইরে থেকে যে কোন ধরণের সাহায্য, খাদ্য ও পানিয় সাপ্লাই বন্ধ করে দেন।
দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে, মঙ্গোলিয়রা সাহসি ও উদ্যোমি হলেও সুসভ্য চাইনিজদের হাতে নিজেরাও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হয়। ভিতর থেকে আসা আগ্নেয় গোলার মিনজানিকের আঘাতে মঙ্গোল বাহিনী প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকলে চেঙ্গিস খান আদেশ দেয় যেন আশপাশ থেকে বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যা-ই পাওয়া যায় সব ধরে যেন নিয়ে আসে। এই পর্যায়ে এসে চেঙ্গিস বুঝতে পারে সবাই হত্যা করলে চলবে না, নিজের প্রয়োজনেই কতগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এবার চেঙ্গিস খানও মিনজানিক আক্রমণ শুরু করলে তা বেইজিংকে কঠিন পরিস্থিতির মাঝে ফেলে দেয়। অবশেষে বেইজিংয়ের পতন ও মাসব্যাপী ধ্বংসলীলা সাধিত হয়।
বেইজিং বিজয় করার সাথে সাথেই সকল শিক্ষিত জনতাকে ধরে নিয়ে গিয়ে মঙ্গোল রাজধানী কারাকুরামকে নতুন মঙ্গোল রাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষণা করা হয়। মঙ্গোল জনতার কাছে কারাকুরামকে রাজধানী করায় হিরো চেঙ্গিস খান বনে যান। এরপর সিল্করোড বেইজিং থেকে কারাকুরামে স্থানান্তরিত করা হয়।
বেইজিংয়ের পতনের পর জেনা. হুসাহু রাজা ইয়োংজিকে হত্যা করে তার ভাতিজা শোয়াংযংকে রাজা হিসেবে ঘোষণা করে। এ রাজাও বেশি দিন টিকতে না পারায় আইযংকে রাজা বানানো হয়। আইজং আর জেনা. যোহু গাওকি নতুন রাজধানী স্থাপন করে সাবেক সং রাজধানী কেইফেংকে। কিন্তু অল্প দিনেই তা মঙ্গোলদের হাতে চলে আসে। এদিকে মাঞ্চুরিয়াতে জেবে ও মাকুলীর ধোলাই চলতেই থাকে একেবারে প্রায় সমগ্র কোরিয়া দখল পর্যন্ত।
ফলাফল এমন দাঁড়ায় যে, সাগর-সম বড় জিন সাম্রাজ্য এখন পূর্ব, উত্তর ও মধ্য চীনে তিন চিলতেতে পরিণত হয়। ১২১৭ সালে শুধু পূর্বের জিনদের ধ্বংস করতে মাকুলিকে রেখে চেঙ্গিস খান পশ্চিম দুনিয়ায় অগ্রসর হয়। জিনরা শান্তি ও সস্তি পায়। যেহেতু রাজ্য হারিয়েছে তাই নতুন করে রাজ্য করতে গাওকি সংদের উপর আক্রমণ করে বসে, এতদিন মঙ্গল ধোলাইয়ের পর এবার সং ধোলাইয়ে জিনরা আর কোলিয়ে উঠতে পারেনি। ১২২৪ সালে চেঙ্গিস ফিরে এসে বাকী জিন অঞ্চল দখলে আদেশ দিলে জিনদের কফিনের শেষ পেরেকটি যেন মেরে দেয়া হয়, এবং ১২৩২ সালের মাঝেই পৃথিবীর বুক থেকে জিন সাম্রাজ্য চিরতরে হারিয়ে যায়।
পরের পর্ব: চীনের পশ্চিমাঞ্চলে চেঙ্গিস খানের অভিযান ও নৃশংসতা