সংযুক্ত আরব আমিরাত ফিলিস্তিনী জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয়ার পর, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট এবং ফিলিস্তিনীর ইসলামী প্রতিরোধ সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে তাদের কঠোর প্রতিবাদের কথা জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন: ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক করে সংযুক্ত আরব আমিরাত জেরুজালেম ও আল-আকসা মসজিদের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ ইসরাইল-আমিরাত চুক্তি ফিলিস্তিনী জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন।
ফিলিস্তিনী টিভিতে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনাহ এক বিবৃতিতে বলেন: এ পদক্ষেপকে আরব শান্তি উদ্যোগ এবং আরব ও ইসলামিক সম্মেলনে নেয়া সিদ্ধান্তের প্রতি আঘাত; একই সঙ্গে ফিলিস্তিনী জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবেই দেখছে ফিলিস্তিনী নেতৃত্ব।
বিবৃতির বরাতে ‘লজ্জাজনক এ চুক্তি’ থেকে আমিরাতকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ওয়াফা বলেছে – ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব বলেছে, আমিরাত যা করছে, সেটা ফিলিস্তিনী নেতৃত্ব প্রত্যাখ্যান করছে এবং এটাকে জেরুজালেম, আল-আকসা মসজিদ ও ফিলিস্তিনিদের স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছে। অবৈধভাবে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ড দখলের ইসরায়েলী পরিকল্পনা স্থগিত রাখার সঙ্গে আমিরাত কিংবা কোনো দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যোগসূত্র টানার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনী নেতৃত্ব। যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে ভ্রাতৃপ্রতিম আরব দেশগুলোর নতিস্বীকার, আমিরাতের পদাঙ্ক অনুসরণ এবং ফিলিস্তিনিদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমিরাত কিংবা অন্য কোনো পক্ষের ফিলিস্তিনীদের হয়ে কথা বলার কোনো অধিকার নেই। ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ অথবা নিজেদের মাতৃভূমিতে তাদের বৈধ অধিকার নিয়ে তাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করবে না ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব। এমন মারাত্মক পরিস্থিতিতে ইসরাইল-আমিরাত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করতে আরব লীগ ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসির জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন: এ সমঝোতা ফিলিস্তিনি জাতির স্বার্থ রক্ষা করবে না। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও ফিলিস্তিনবিরোধী অপরাধযজ্ঞের ‘প্রতিদান’ হিসেবে তেল আবিবের সঙ্গে এ সমঝোতায় পৌঁছেছে।
হামাসের আরেক মুখপাত্র ফাউজি বারহুম বলেছেন: তেলআবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ফিলিস্তিনি জাতির পিঠে ছুরি বসিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করবে।
ফিলিস্তিনের ইসলামী জিহাদ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা দাউদ শিহাব বলেছেন: এ সমঝোতার মাধ্যমে ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নেতানিয়াহুর মন্ত্রীসভাকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছে। আরব আমিরাত এ সিদ্ধান্ত নিয়ে ইসরাইলের মোকাবিলায় নতজানু নীতি গ্রহণ করেছে এবং এর ফলে তেলআবিবের ফিলিস্তিন বিদ্বেষী তৎপরতা আরো জোরদার হবে।
হামাসের পলিটব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও ইসলামী জিহাদ আন্দোলনের মহাসচিব জিয়াদ আন-নাখালা এক টেলিফোনালাপে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমঝোতা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
ওদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন – সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে তেলআবিবের সাম্প্রতিক সমঝোতার ফলে মধ্যপ্রাচ্য উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। আমিরাতের এ পদক্ষেপের পর আরো বহু মুসলিম ও আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এগিয়ে আসবে বলে আমি আশাবাদী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরলস প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সম্মত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। শিগগিরই আরব আমিরাত ও ইসরাইলি কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে সই করবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স ও পার্সটুডে।