আফ্রিকার ‘নীলনদ’ ও ‘কঙ্গো নদী’ যথাক্রমে সবচেয়ে দীর্ঘ ও গভীর নদী বটে। কিন্তু দ্বিতীয় দীর্ঘ নদী হলেও দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদের আয়তন আফ্রিকীয় ঐ দু নদীর সম্মিলিত আয়তনের চেয়েও বেশি!
আমাজন নদের অববাহিকার আয়তন ২৭ লাখ বর্গমাইল – যা ভারতের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। এ বিশাল এলাকার ২১ লাখ বর্গমাইল হচ্ছে, সবচেয়ে বড় বনাঞ্চল ‘আমাজন রেইন ফরেস্ট’ (বৃষ্টিপ্রধান জঙ্গল) – যা গোটা পৃথিবীর সকল রেইন ফরেস্টের অর্ধেক! এটি আয়াতনে বাংলাদেশের প্রায় ৩৭ গুণ এবং ভারতের দেড় গুণের চেয়েও বড়! এখান থেকে সারা দুনিয়ার ২০% অক্সিজেন উৎপন্ন হয় বলে এটিকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলা হয়। তাই, জীবনের তাগিদেই আমাজন জঙ্গলের সুরক্ষা বিশ্ববাসীর প্রধানতম দায়িত্ব।
আমাজন বনাঞ্চলের প্রায় ৬০% ব্রাজিলে, প্রায় ১৩% পেরুতে, প্রায় ১০% কলম্বিয়ায় এবং বাকি ১৭% ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়েনা, সুরিনাম ও ফরাসী উপনিবেশ গায়েনায় পড়েছে।
যাহোক, মঙ্গলবার আমাজন দেশগুলোর মাঝে হওয়া লেটিসিয়া চুক্তির অংশীদার ৭টি দেশের বৈঠকে আমাজন জঙ্গলে আগুনের অস্তিত্বের কথা বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই অস্বীকার করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারো। হাজারো অগ্নিকাণ্ডে বনটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগকে মিথ্যা আখ্যায়িত করেন তিনি! দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তাঁদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন: তারা বনের ভেতর কোনো আগুন খুঁজে পাবেন না। এক সিঁকি হেক্টর বনও উজাড় হয়েছে বলে তারা বলতে পারবেন না। আমাজনে অগ্নিকাণ্ড বাড়ছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা মিথ্যা। কাজেই, সঠিক সংখ্যা দিয়ে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমাজনের উপর দিয়ে বিমানে করে দূরের শহর বোয়া ভিস্টা থেকে মানোস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেও কেউ একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও দেখতে পাবেন না। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এ বনাঞ্চলে আগুন ধরে না। আগুন ও বন নিধনের বিরুদ্ধে আমরা সর্বাত্মক লড়াই করছি। কিন্তু তারপরও আমাদের সমালোচনা করা হচ্ছে।
কিন্তু ব্রাজিল সরকারের প্রকাশিত উপাত্ত থেকে জানা গেছে, অঞ্চলজুড়ে অগ্নিকাণ্ড বাড়ছে। গত বছরও আমাজনে আগুনের কথা অস্বীকার করেছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। এ নিয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনসহ অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গে তিনি বিতণ্ডায়ও জড়িয়ে পড়েন। মঙ্গলবার বোলসোনারো যখন অগ্নিকাণ্ডের কথা অস্বীকার করেন, তখন বিচ্ছিন্ন আমাজন শহর আপুইতে দিনের বেলায় আগুনের কুণ্ডলী আকাশের দিকে উঠতে দেখা গেছে!
২০১৯ সালের আগস্টে জঙ্গলটিতে অগ্নিকাণ্ড বেড়ে যায়। চলতি মাসে তা আরও খারাপের দিকে গেছে। আগস্টের প্রথম ১০ দিনে এক হাজারের বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে – যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭% বেশি।