৪ঠা আগস্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতের সমুদ্রবন্দরে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে দেড় শতাধিক প্রাণহানি, ৫ হাজারের মতো আহত এবং বহু লোক নিখোঁজের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে এবং সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন ঐ দেশবাসী; যার ফলশ্রুতিতে দেশকে ১০ বছরের জন্যে ফ্রান্সের হাতে তুলে দেয়ার দাবিতে একটি পিটিশনে সই করেছেন এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার লেবাননী!
আর সরকারের বিরুদ্ধে দেশবাসীর ক্ষোভের ভেতরেই গতকাল (শনিবার) লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল ওউন সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেছেন – মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পিছনে বাইরের কোনো শক্তির ভূমিকা থাকতে পারে। তিনি বলেন: ‘বাইরে থেকে নাশকতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। হয়তো রকেট ছোড়া হয়েছিলো; হয়তোবা বোমা বা অন্য কিছু।
এদিকে, রাজনীতিবিদদের প্রতি তীব্র অনাস্থা জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন লেবাননীরা। পিটিশনে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ফরাসী শাসন কার্যকরের দাবি জানাচ্ছে তারা। তবে তাদের এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো। তিনি বলেছেন: ফ্রান্স আর লেবানন পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চায় না। এটা সম্ভব নয়। এটা কোনোভাবেই সমস্যার সমাধানও নয়।
বিস্ফোরণের দুদিন পর, প্রথম কোনো বিদেশী নেতা হিসেবে বৈরুত সফরে আসেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট। ত্রাণ ও উদ্ধারকারী বাহিনীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈরুতে পৌঁছেই বিস্ফোরণস্থলসহ ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাস্তাঘাট ঘুরে দেখেন তিনি। তারপরই পপুলার পিটিশনে দস্তখত শুরু হয়। এতে বলা হয় – রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় লেবাননের শাসকরা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও বিদ্রোহী সংকটে পর্যুদস্ত দেশটি ধ্বংসের কিনারে দাঁড়িয়েছে। আমাদের বিশ্বাস স্বচ্ছ ও স্থায়ী সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে লেবাননের উচিৎ ফরাসী শাসনে ফিরে যাওয়া।
পরদিন (শুক্রবার) লেবাননের প্রেসিডেন্ট আউনের সঙ্গে বৈঠক করেন ম্যাক্রো। বৈঠকে আউনকে সতর্কবার্তা দিয়ে ম্যাক্রো বলেন: লেবাননের নেতৃত্বে রদবদল না হলে দেশটি ডুবতেই থাকবে। লেবাননের পাশে আমার দেশ ছিলো; থাকবে। ক্ষমতার কাঠামোয় বদল না এলে আর একটি টাকা সাহায্য নিয়েও এগিয়ে আসবে না ফ্রান্স।
উল্লেখ্য, প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে উছমানীয় সালতানাতের পতন হলে, ফ্রান্স লেবানন দখল করে নিয়ে সেখানে ঔপনিবেশিক শাসন শুরু করে। এর আগে প্রায় ৪০০ বছর ধরে অঞ্চলটি উছমানীয় সালতানাতের অংশ ছিলো। ১৯৪৫ সালের ১লা জানুয়ারী লেবানন পুরো স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ঐ বছরই জাতিসংঘের সদস্য হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষে ১৯৪৬ সালের ১৭ই এপ্রিল ফরাসী সেনাদের শেষ দলটি লেবানন ত্যাগ করে। সূত্র: মিডিল ইস্ট মনিটর, এপি ও অন্যান্য।