1. zobairahmed461@gmail.com : Zobair : Zobair Ahammad
  2. adrienne.edmonds@banknews.online : adrienneedmonds :
  3. annette.farber@ukbanksnews.club : annettefarber :
  4. camelliaubq5zu@mail.com : arnider :
  5. patsymillington@hidebox.org : bennystenhouse :
  6. steeseejep2235@inbox.ru : bobbye34t0314102 :
  7. nikitakars7j@myrambler.ru : carljac :
  8. celina_marchant44@ukbanksnews.club : celinamarchant5 :
  9. sk.sehd.gn.l7@gmail.com : charitygrattan :
  10. clarencecremor@mvn.warboardplace.com : clarencef96 :
  11. dawnyoh@sengined.com : dawnyoh :
  12. oralia@b.thailandmovers.com : debraboucicault :
  13. chebotarenko.2022@mail.ru : dorastrode5 :
  14. lawanasummerall120@yahoo.com : eltonvonstieglit :
  15. tonsomotoconni401@yahoo.com : fmajeff171888 :
  16. anneliese@a.skincareproductoffers.com : gabrielladavisso :
  17. gennieleija62@awer.blastzane.com : gennieleija6 :
  18. judileta@partcafe.com : gildastirling98 :
  19. katharinafaithfull9919@hidebox.org : isabellhollins :
  20. padsveva3337@bk.ru : janidqm31288238 :
  21. alec@c.razore100.fans : kay18k8921906557 :
  22. michaovdm8@mail.com : latmar :
  23. malinde@b.roofvent.xyz : lauranadeau097 :
  24. adorne@g.makeup.blue : madie2307391724 :
  25. mahmudCBF@gmail.com : Mahmudul Hasan : Mahmudul Hasan
  26. marti_vaughan@banknews.live : martivaughan6 :
  27. crawkewanombtradven749@yahoo.com : marvinv379457 :
  28. deirexerivesubt571@yahoo.com : meridithlefebvre :
  29. ivan.ivanovnewwww@gmail.com : ninetuabtoo :
  30. lecatalitocktec961@yahoo.com : normanposey6 :
  31. guscervantes@hidebox.org : ophelia62h :
  32. clint@g.1000welectricscooter.com : orvilleweigel :
  33. margarite@i.shavers.skin : pilargouin7 :
  34. gracielafitzgibbon5270@hidebox.org : princelithgow52 :
  35. randi-blythe78@mobile-ru.info : randiblythe :
  36. lyssa@g.makeup.blue : rochellchabrilla :
  37. berrygaffney@hidebox.org : rose25e8563833 :
  38. incolanona1190@mail.ru : sibyl83l32 :
  39. pennylcdgh@mail.com : siribret :
  40. ulkahsamewheel@beach-drontistmeda.sa.com : ulkahsamewheel :
  41. harmony@bestdrones.store : velmap38871998 :
  42. karleengjkla@mail.com : weibad :
  43. whitfeed@sengined.com : whitfeed :
  44. basil@b.roofvent.xyz : williemae8041 :
  45. arnoldpeter933@yahoo.com : wilsonroach486 :
  46. dhhbew0zt@esiix.com : wpuser_nugeaqouzxup :
যাকাতের গুরুত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল
রবিবার, ১৯ মার্চ ২০২৩, ১২:২০ পূর্বাহ্ন

যাকাতের গুরুত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল

সাইফুল ইসলাম রুবাইয়াৎ
  • আপডেট সময় : রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০২০
  • ৬১১ বার পড়া হয়েছে

যাকাত এক রকম ফরজ সদকা – যা ইসলাম ধর্মের ৫টি স্তম্ভের অন্যতম। কোনো দুনিয়াবী স্বার্থে নয়, বরং মহান আল্লাহপাক ও মহানবীর (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) সন্তুষ্টি পেতে যেসব মুসলিমের যেমন সম্পদের যে নেসাব এক চান্দ্র-বছর থাকলে, এর নির্ধারিত অংশ হকদারকে দেয়া ফরজ, ঐ দেয় অংশকে ‘যাকাত’ বলে। যাকাত অস্বীকারকারী অভিশপ্ত, কাফের ও মুরতাদ এবং ইসলামী সরকারের কাছে হত্যার যোগ্য! আর তা তরককারী ফাসেক (মহাপাপী) এবং অকারণে তা দিতে বিলম্বকারী গুণাহগার ও সাক্ষীর অযোগ্য।

 

আল্লাহুতা’লা যাকাত দেয়াকে সফল ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য (২৩: ১ ও ৪) এবং তা না দেয়াকে মুশরিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে ঘোষণা করেছেন (৪১:৭)। তিনি আরও বলেছেন যে, তাঁর সন্তুষ্টি পেতে যারা যাকাত দেবে, তিনি তাদের সম্পদে বরকত দেবেন (৩০:৩৯)। তিনি আল-কুরআনের বহু জায়গায় নামাজ কায়েমের সঙ্গে সঙ্গে যাকাত দিতেও হুকুম দিয়েছেন।

 

হুজুরে পুরনূর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান: যাকাত হলো,

দলিল (ইবনে মাজা ও নাসাঈ), ইসলামের সেতু (তাবারানী ও বায়হাকী),  সম্পদের ক্ষতি-দূরকারক (ইবনে খুঝাইমা ও তাবারানী) ও পবিত্রকারী (আহমাদ)।  তোমাদের যাকাত দেয়ার মাঝে ইসলামের পূর্ণতা রয়েছে (বাঝঝার)।

 

আল্লাহ্ দারিদ্র দূর, অন্নহীনের অন্নের ও বস্ত্রহীনের বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে ধনী মুসলিমদের উপর সাধ্য মতো যাকাত দেয়া ফরজ করেছেন। তাই, সাবধান! আল্লাহ্ তাদের (যাকাত তরককারীদের) কঠোর হিসেব নেবেন এবং কঠিন সাজা দেবেন (তাবারানী)।

আল্লাহ্ তোমাদের বাকি সম্পদ পবিত্র করতে যাকাত ফরজ করেছেন এবং তোমাদের উত্তরসূরিদের ঐ সম্পদের মালিক বানাতে মীরাছ (উত্তরাধিকার) ফরজ করেছেন (আবু দাউদ ও হাকীম)।

যে সম্পদের যাকাত দেয়া হয়, তা কুক্ষিগত নয় (মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, মালিক, বুখারী ও ইবনে মাজা)।

সাত জমিনের নিচের সম্পদের যাকাত দেয়া হলে, তা কুক্ষিগত নয়। আর দৃশ্যমান সম্পদের যাকাত দেয়া না হলে, তা কুক্ষিগত (তাবারানী)।

যে জাতি যাকাত দেয় না, আল্লাহুতা’লা তাদের উপর দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেন বা বৃষ্টি বন্ধ করে দেন (তাবারানী, হাকীম ও বায়হাকী)।

যাকাত না দিলে স্থলে ও সমুদ্র পথে সম্পদ বিনষ্ট হয় (তাবারানী)।

যে যাকাত দেয় না, সে রোজ হাশরে জাহান্নামে যাবে (তাবারানী)।

এমন কোনো সোনা-রূপার মালিক নেই যে যাকাত না দিলে, রোজ হাশরে বান্দাদের হিসেব-নিকেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার জন্যে আগুনের পাত বানিয়ে পঞ্চাশ হাজার বছর ধরে দিনভর অনবরত জাহান্নামের আগুনে সেসব গরম করে তার আশেপাশে, কপালে ও পেটে দাগানো না হবে! এরপর এরা জান্নাত বা জাহান্নামের দিকে যার যার রাস্তা দেখবে (মুসলিম ও আবু দাউদ)।

 

আল্লাহ্ কাউকে ধনী বানালে এবং সে এর যাকাত না দিলে, তা রোজ হাশরে দু’ চোখে দু’টি কালো তিলধারী ও দু’ বাবরীওয়ালা নেড়া মাথার বিষধর সাপ হয়ে তার কাছে আসবে। তখন সে পালাতে থাকবে এবং বলবে: তুমি কে? সাপটি বলবে: আমি তোমার সম্পদ! আমি তোমার কুক্ষিগত সম্পদ – যা তুমি ব্যয় করতে না! যখন সে দেখবে যে, সাপটি তাকে কিছুতেই ছাড়বে না, তখন সে হাত দিয়ে বাধা দেবে। কিন্তু সাপটি তার হাত মুখে পুরে আঙুলগুলো লোকমা বানিয়ে চাবাতে থাকবে – যেভাবে ষাঁড় (খাবার) চাবায় এবং তার গলা ও দু’ চোয়াল পেঁচিয়ে তার সারা শরীরে কামড়াতে থাকবে

(মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, মালিক, আহমাদ, বুখারী, ইবনে মাজা, নাসাঈ, বাঝঝার, ইবনে খুঝাইমা, তাবারানী ও ইবনে হিব্বান)!

 

নবীজীর ওফাতের পর, আবু বকর সিদ্দীক খলীফা হলেন। তখন গাতফান, হাওয়াঝিন, তাঈ, ফানযারাহ, সুলাইম ইত্যাদি আরব গোত্র মুরতাদ হয়ে গেলে, খলীফা এদের বিরুদ্ধে রিদ্দার যুদ্ধ ঘোষণা করেন!

এতে উমর ইবনুল খাত্তাব তাঁকে (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুমা) বললেন: আপনি ওদের বিরুদ্ধে কিকরে যুদ্ধ করবেন? আল্লাহর রাসুল (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো বলেছেন: “মানুষেরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ না বলা পর্যন্ত আমাকে ওদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছে।” কাজেই, যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে, সে তো আমার কাছ থেকে তার জান-মালের নিরাপত্তা পেয়েছে। এখন তার হক ও হিসেব (আমল) তো আল্লাহ’র জিম্মায়?

খলীফা বললেন: আল্লাহ’র শপথ! আমি তার বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করবো – যে নামাজ ও যাকাতে (ফরজ হওয়ার ব্যাপারে) পার্থক্য করে। কেননা, যাকাত হচ্ছে, সম্পদের হক। আল্লাহ’র শপথ! সে ছাগলের বাচ্চাও (যাকাত) না দিলে, আমি তার বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করবো – যা আল্লাহ’র রাসুলও দিতেন।

উমর বললেন: আল্লাহ’র শপথ! আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম যে, আল্লাহ্ ঐ যুদ্ধের জন্যে আবু বকরের বুককে প্রশস্ত করে দিয়েছেন। তাই, আমি বুঝলাম যে, এ যুদ্ধ হক। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও অন্যান্য)

হযরত উছমান (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বলেন: এটি (রমজান) যাকাত দেয়ার মাস। কাজেই, যার ঋণ রয়েছে, সে যেনো ঋণ শোধ করে বাকি সম্পদের যাকাত দেয় (মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ও মালিক)।

মওলা আলী (কাররামাল্লাহুতা’লা ওয়াজহাহুল কারীম) বলেন: সদাকা (যাকাত) অস্বীকারকারীকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে (তিরমিযী)।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বলেন: যাকাত না দিলে, হালাল সম্পদ হারাম হয়ে যায়! আর হারাম সম্পদের যাকাত দিলেও তা হালাল হয় না (তাবারানী)।

 

যাকাতের কিছু জরুরি মাসয়ালা

যাকাত দেয়ার শর্ত হচ্ছে, নিয়ত করা। যাকাতের মাল আলাদা করার বা যাকাত দেয়ার সময়ে নিয়ত করতে হবে। কী দিচ্ছেন? – প্রশ্ন করলে, যাকাতদাতা যেনো নির্দ্বিধায় বলতে পারে: যাকাত দিচ্ছি।

বছরের শেষ পর্যন্ত যা দেবো, সবই যাকাত অথবা কোনো কিছু দান করে বললো: যা দিয়েছি, তা যাকাত – এভাবে নিয়ত করলে হবে না।

প্রতিনিধিকে দিয়ে যাকাত দিলে, তাকে যাকাতের মাল দেয়ার সময়ে কিংবা প্রতিনিধি হকদারকে যাকাত দেয়ার সময়ে যাকাতদাতা নিয়ত করলেই চলবে। প্রতিনিধির নিয়ত বিবেচ্য নয়।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলী:

১। মুসলিম হতে হবে। কাফের ও মুরতাদের উপর যাকাত দেয়া ফরজ নয়। মুসলিম মুরতাদ হলে, তার যাকাত রহিত হয়ে যাবে। কাফের বা মুরতাদ মুসলিম হলে, তাকে বিগত বছরগুলোর যাকাত দিতে হবে না।

২। আজাদ হতে হবে। দাসের উপর যাকাত ফরজ নয়।

৩। বয়স্ক (বালেগ) হতে হবে। নাবালকের উপর যাকাত দেয়া ফরজ নয়।

৪। বুঝমান হতে হবে। পাগল ও বধিরের উপর যাকাত দেয়া ফরজ নয়। তবে বছরের শুরুতে বা শেষে কিছু সময়ে পাগল থাকলে বা বধির মাঝে মাঝে সুস্থ হলে, তাদের উপর তা ফরজ। বেহুঁশ লোকের উপর যাকাত দেয়া ফরজ; বছর জুড়ে বেহুঁশ থাকলেও! হুঁশ এলেই যাকাত দিতে হবে।

৫। নির্ধারিত সম্পদের নেসাবের মালিক হতে হবে; যথা- সোনা-রূপার অলংকার, ব্যবসার পণ্য ও সায়িমা পশু।

উট, গরু ও ছাগল বা এ জাতীয় গৃহপালিত বয়স্ক পশু দুধ ও শাবক (বংশবৃদ্ধি) উৎপাদন করতে কিংবা মোটা-তাজা করে বিক্রির উদ্দেশে বছরের অধিকাংশ সময়ে মুক্তভাবে মাঠে-ময়দানে চরিয়ে পোষা হলে, ওগুলোকে সায়িমা পশু বলে। মহিষ, ভেড়া ও দুম্বাও সায়িমা হতে পারে। ঘরে রেখে বা ছ’ মাস করে ঘরে রেখে ও মাঠে চরিয়ে পোষা হলেও তা সায়িমা হবে না। গোশত খাওয়া, বহন, বাহন, কৃষিকাজ ইত্যাদির উদ্দেশে ঐসব পশু যেভাবেই পোষা হোক, তা সায়িমা হবে না। ঘোড়া, গাধা, খচ্চর, খরগোশ ইত্যাদি সায়িমা হয় না।

 

সোনার ও রূপার অলংকারের নেসাব হচ্ছে, যথাক্রমে সাড়ে সাত ভরি ও সাড়ে বায়ান্ন ভরি। তখন এর ২.৫০% যাকাত দিতে হবে। ব্যবসার পণ্যের নেসাব হচ্ছে, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার বিক্রয় মূল্যের সমমানের পণ্য। তখন ২.৫০% হারে যাকাত দিতে হবে। সায়িমা পশুর নেসাব আর বর্ণনা করলাম না।

হীরা, মণি, মুক্তা, চুনি, পান্না, ইমিটেশন ইত্যাদির অলংকার যতোই থাক – এসবের যাকাত নেই। কিন্তু ওগুলো ব্যবসার পণ্য ও দাম সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার বিক্রয় মূল্যের সমান হলে, ওগুলোর ২.৫০% যাকাত দিতে হবে।

সায়িমা না হলেও যেসব পশু-পাখী বেচা-কেনা করা হালাল, ওগুলো ব্যবসার উদ্দেশে পুষলে এবং দাম সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার বিক্রয় মূল্যের সমান হলে, ওগুলোর ২.৫০% যাকাত দিতে হবে।

ঐ সম্পদগুলো কারো আছে। কিন্তু কোনোটির নেসাব নেই। তখন দু’ রকম সম্পদের দাম যোগ করে নেসাব হলে, যাকাত দিতে হবে। যেমন- ৭ ভরি সোনার ও ৫ ভরি রূপার অলংকার বা কিছু ব্যবসার পণ্য থাকলে এবং এগুলোর দাম সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার বিক্রয় মূল্যের সমান হলে, যাকাত দিতে হবে।

৬। সম্পদ মালিকের পুরো আয়ত্তে থাকতে হবে। এমন জায়গায় সম্পদ থাকতে হবে যেনো সহজে পাওয়া যায়; যেমন- চেক, ড্রাফট, পে-অর্ডার, মানি-অর্ডার, পোস্টাল অর্ডার, শেয়ার সার্টিফিকেট, কোম্পানির শেয়ার, ডিও লেটার, সঞ্চয়পত্র, সিকিউরিটি মানি, জামানত, প্রাইজ বন্ড, ট্রেজারী বন্ড ইত্যাদি। ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা আমনত; যেমন- বীমা, এফডিআর, ডিপিএস, ফিক্সড ডিপোজিট, পোস্টাল সেভিংস, বিশেষ সঞ্চয়, পেনশন স্কীম, প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদি। এসবের যাকাত দিতে হবে। তবে, কোনো কারণে এসবের টাকা সহজে তোলা না গেলে, তা পাওয়ার পর, বিগত বছরগুলোর হিসেব করে যাকাত দিতে হবে।

ঋণ সহজে ফেরত পাবার আশা থাকলে, দাতাকে এর যাকাত দিতে হবে। আর প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ঋণ সহজে পাবার আশা না থাকলে, যখন পাওয়া যাবে – তখন বিগত বছরগুলোর যাকাত দাতাকে দিতে হবে। আর প্রমাণ না থাকলে বা নষ্ট হয়ে গেলে এবং ঐ ঋণ কখনও ফেরত পেলে, বিগত বছরগুলোর যাকাত দিতে হবে না।

সম্পদ এমন কোথাও বা কারো কাছে আছে যে, পাবে কিনা – সন্দেহ আছে। তাহলে, তা না পাওয়া পর্যন্ত বিগত বছরগুলোর যাকাত দিতে হবে না। বন্ধকী মালের যাকাত বন্ধকদাতা বা গ্রহীতা – কাউকে দিতে হবে না। বন্ধক মুক্ত হলেও বিগত বছরগুলোর যাকাত দিতে হবে না।

যৌথ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অর্থের মালিক বা শেয়ার হোল্ডারদের যার যার অংশের নেসাব বছর জুড়ে থাকলে এবং তা সহজে তোলার সুযোগ থাকলে, তাদের উপর যাকাত দেয়া ফরজ। নইলে, ঐ অর্থ হাতে আসার পর, বিগত বছরগুলোর যাকাত দিতে হবে। কিন্তু টাকা সহজে তোলা না গেলে এবং প্রতিষ্ঠানটি কখনও দেউলিয়া হয়ে গেলে, কাউকে ঐ সম্পদের যাকাত দিতে হবে না।

৭। নেসাব ঋণমুক্ত হতে হবে। সাধারণ ঋণ নিয়ে সারা বছর নেসাব থাকলেও ওখান থেকে ঋণ বাদ দিলে সম্পদ নেসাবের চেয়ে কমে গেলে, ঋণগ্রহীতাকে যাকাত দিতে হবে না। কিন্তু মেয়াদী ঋণ নিয়ে সারা বছর নেসাব থাকলে যাকাত দিতে হবে। যেমন- দু’ বছরে পরিশোধের শর্তে ত্রিশ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বছর জুড়ে নেসাব থাকলে, ঋণগ্রহীতাকে যাকাত দিতে হবে। তেমনি, কিস্তিতে শোধযোগ্য ঋণের নির্ধারিত কিস্তি শোধের পর, বছর জুড়ে নেসাব থাকলে, ঋণগ্রহীতাকে যাকাত দিতে হবে। যেমন- নির্ধারিত কিস্তিতে নির্দিষ্ট টাকা দশ বছরে পরিশোধের শর্তে এক কোটি টাকা ধার নিয়ে কেউ একটি ফ্ল্যাট বা হিনো বাস কিনলো। এখন বছরের কিস্তি শোধের পরেও ঐ বছর জুড়ে নেসাব থাকলে, তাকে যাকাত দিতে হবে। ঋণগ্রহীতা ও এর জিম্মাদারের একই হুকুম।

৮। নেসাব দরকারি জিনিসপত্র থেকে মুক্ত হতে হবে। বসবাসের বাড়ীঘর, শীত-গ্রীষ্মের কাপড়-চোপড়, ঘরের আসবাবপত্র, যান-বাহন, যুদ্ধাস্ত্র, পেশাজীবীদের হাতিয়ার, বিদ্বান লোকদের কিতাবাদি, খাবার-দাবার ইত্যাদির যাকাত নেই। তাই, এগুলো বাদ দিয়ে বাকি সম্পদের নেসাব থাকতে হবে।

বাড়ী-ঘর, দালান-কোঠা, প্লট, জমি, যান-বাহন ইত্যাদি ব্যবহার করলে কিংবা ব্যবসার কাজে লাগালে অথবা এমনি ফেলে রাখলে এসবের কোনো যাকাত নেই; যতোই থাকুক। তবে এসব ভাড়া দিলে এবং প্রাপ্ত ভাড়ার নেসাব বছর জুড়ে থাকলে, যাকাত দিতে হবে। তবে, এসব কেনা-বেচার ব্যবসা করলে, বছর-শেষে সেগুলোর মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে; এমন কি, বেচার নিয়তে এসব বানিয়ে বা কিনে বেচার আগ পর্যন্ত ব্যবহার করলে বা ফেলে রাখলে কিংবা ভাড়া দিলেও।

 

৯। নেসাবের সম্পদ বর্ধিষ্ণু হতে হবে। অর্থাৎ তা যেনো সহজে বাড়ানো যায়। যেমন- ব্যবসায়িক পণ্য ও সায়িমা পশু। সোনা-রূপা দিয়েও সহজে অন্য বস্তু কেনা যায় বা সোনা-রূপাকে নানা অলংকারে সহজে পরিবর্তন করা যায় কিংবা আরও ভরে এসব বাড়ানো যায়।

১০। নেসাব এক চান্দ্র-বছর অতিবাহিত হতে হবে। নেসাব বছরের শুরুতে ও শেষে থাকলে এবং মাঝখানে কমে গেলেও যাকাত রহিত হবে না। নেসাব ঠিক থাকলে, যাকাতযোগ্য সম্পদ একটি আরেকটিতে রূপান্তর করলেও বছরের হেরফের হবে না। যেমন- সোনা বেচে রূপা বা রূপা বেচে সোনা কিংবা এর কোনোটি বেচে ব্যবসার পণ্য বা ব্যবসার পণ্য বেচে সোনা বা রূপা কিনলে অথবা ওগুলো বেচে টাকায় পরিণত করলে কিংবা টাকা দিয়ে ওগুলো কিনলে নেসাব বজায় থাকলে, বছরও বহাল থাকবে। বছরের মাঝে এমন আরও সম্পদ যোগ হলে, সেসব নেসাবের মিলিয়েই বছর-শেষে যাকাতের হিসেব করতে হবে। যাকাত অগ্রিমও দেয়া যায়।

যাকাতের হকদার: এখন আর যাকাত, ফেতরা, সদকা, দান-খয়রাত, জিয়াফত, কাঙালি ভোজ, লোঙ্গরখানা বা কোনো অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতে গিয়ে বাছ-বিচার করা হয় না! অসৎ বা দুনিয়াদার লোক ধনী, গরীব, আত্মীয়, পর – যে-ই হোক, এদের দান-খয়রাত করলে বা খাওয়ালে সওয়াব আসলে কতোটা হয়?

ধার্মিকতার (তাকওয়ার) দাবি হচ্ছে, দ্বীনদার লোক বুঝে দান-খয়রাত করা ও খাওয়ানো। কেননা, মহানবী (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) বলেছেন: ঈমানদার ছাড়া কারো সাথী হইও না এবং পরহেজগার ছাড়া তোমার খাবার যেনো কেউ না খায় (আবু দাউদ ও তিরমিযী)। তাই, এ ব্যাপারে যথাসম্ভব সচেতন হতে হবে।

 


যাকাতের হকদার বা খাত:

১। ফকীর বা গরীব: যার কিছু সম্পদ থাকলেও যাকাতযোগ্য বা অপ্রয়োজনীয় সম্পদের নেসাব (সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার বিক্রয় মূল্যের সমমান) নেই এবং অন্যের কাছে হাত পাতাও বৈধ নয়। যাকাতযোগ্য সম্পদ হচ্ছে, মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত বর্ধিষ্ণু সম্পদ। আর অপ্রয়োজনীয় সম্পদ হলো, বিদ্বান বা চিকিৎসকের দরকারি কিতাবের অতিরিক্ত কপি, নাহু, সরফ, জ্যোতিষশাস্ত্র, নাটক, উপন্যাস, গল্প, কবিতা, গোয়েন্দা কাহিনী ইত্যাদির কিতাব। এসরের দাম নেসাবের সমান হলে, মালিক যাকাত খেতে পারবে না।

২। মিসকীন: যার কোনো সম্পদ নেই এবং থাকতে, খেতে ও পরতে অন্যের কাছে হাত পাতা বৈধ।

৩। আমেল: ইসলামী সরকার বা শাসক যাকে যাকাত উশুলে নিয়োগ করে।

৪। রিকাব: যে গোলাম মুক্তিপণের বিনিময়ে আজাদ হতে পারবে।

৫। ঋণগ্রস্ত: সাধারণ ঋণ বাদ দিলে, যার যাকাতযোগ্য ও দরকারের অতিরিক্ত বর্ধিষ্ণু সম্পদের নেসাব থাকে না।

৬। আল্লাহ’র পথের পথিক: যে দারিদ্রের কারণে জিহাদে বা হজে যেতে কিংবা দ্বীনি এলেম শিখতে পারছে না।

৭। মুসাফির: যে তার সম্পদের নেসাব থেকে দূরে রয়েছে।

সাধারণত এ সাত রকম মুসলিম যাকাতের হকদার। কিন্তু তারা হাশেমী, আপন দাদা-দাদী, নানা-নানী ও তাঁদের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গ, নিজ সন্তান, নাতি-নাতনি, দৌহিত্র-দৌহিত্রী ও তাদের অধস্তন ব্যক্তিবর্গ এবং স্বামী ও স্ত্রী হলে যাকাত খেতে পারবে না। তালাকের পর ইদ্দতরত স্ত্রী ও স্বামী – কেউ কাউকে যাকাত দিতে পারবে না; ইদ্দত শেষ হলে পারবে। নিজের বীর্য থেকে বা জেনায় জন্ম নেয়া জারজ সন্তানকে নিজের বলে স্বীকার করলে, তাকেও যাকাত দেয়া বা তার থেকে তা নেয়া যাবে না। অবশ্য তা স্বীকার না করলে, দেয়া বা নেয়া যাবে।

 

মালদার হাশেমীগণও যাকাত-ফেতরা দেবেন। কিন্তু তাঁদের কোনোভাবেই যাকাত, ফেতরা, কাফফারা, নামাজ-রোজার ফিদিয়া ইত্যাদি আবশিক সদাকা দেয়া যাবে না। তবে তাঁরা মুস্তাহাব সদকা বা দান-খয়রাত খেতে পারবেন।

হাশেমী মানে, আমির হামজা, আব্বাস, হারিছ ইবনে আব্দিল মুত্তালিব, আলী, জাফর ও আকীল (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) ইবনে আবি তালিবের বংশধর। কিন্তু যারা নবীজীকে (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) সাহায্য করেনি; যেমন- আবু লাহাবের বংশধর। এরা মুসলমান হলেও হাশেমী বলে গণ্য হবে না এবং যাকাত-ফেতরা খেতে পারবে। যার মা হাশেমী কিন্তু বাবা তা নয় – সে হাশেমী নয়।

 

যাকাত ব্যক্তিকে দিতে হবে; প্রতিষ্ঠানকে নয়। তবে যাকাত সংগ্রহ করে হকদারদের বিলিকারী প্রতিষ্ঠানকে যাকাত দেয়া যাবে। তবে প্রতিষ্ঠানটি যতোক্ষণ তা হকদারকে না দেবে, ততোক্ষণ তা আদায় হবে না। যেখানে ইসলামী সরকার নেই, ওখানকার এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সন্দেহজনক! যেনো দুর্নীতির আখড়া। তাই, এসব ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। পছন্দসই হকদার না পেলে, যাকাত দিতে দেরি করা যাবে।

 

উত্তম হচ্ছে, যাকাত প্রথমে নিজের ভাই-বোন, এরপর তাদের সন্তান-সন্ততি, এরপর চাচা-ফুফু, এরপর তাদের সন্তান-সন্ততি, এরপর মামা-খালা, এরপর তাদের সন্তান-সন্ততি, এরপর রক্তের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন, এরপর প্রতিবেশী, এরপর আশেপাশের পরিচিতজন, এরপর নিজের শহরবাসী বা গ্রামবাসীকে দেয়া। তবে, ভালো-মন্দ লোক বুঝে যাকাত-ফেতরা দেয়া উচিত। কাছের লোক দুনিয়াদার আর দূরের লোক দ্বীনদার হলে, দূরের লোক হকদার। কোনো অমুসলিম বা বদ-আকীদার অনুসারীকে যাকাত-ফেতরা দিলে, তা আদায় হবে না।

 

লক্ষ্য রাখতে হবে:

১। যাকাত-ফেতরা পেয়ে গ্রহীতা যেনো নেসাবের মালিক হয়ে না যায়। নইলে, তা আদায় হবে না।

২। হকদার ততোক্ষণ যাকাত-ফেতরা নিতে পারবে – যতোক্ষণ সে নেসাবের মালিক না হবে।

৩। যাকাত-ফেতরার টাকা দিয়ে হকদারকে খাবার খাওয়ালে তা আদায় হবে না, বরং হকদারকে পুরো মালিক বানিয়ে দিতে হবে। নগদ টাকা, জামা-কাপড়, বই-খাতা-কলম ইত্যাদি দিয়ে যাকাত দেয়া যায়। চাল-ডাল-গম-আটা ইত্যাদিও দেয়া যাবে যেনো হকদার সহজে সেসব বিক্রি করে অন্য কিছু করতে পারে। যাকাতের টাকা দিয়ে কিছু কিনে ওয়াকফ করলে কিংবা মসজিদ-এতীমখানা-শিক্ষালয়-সড়ক-সেতু-বাঁধ নির্মাণ, নদী-খাল-কূপ খনন, কারো দাফন-কাফন বা মৃতের ঋণ শোধ ইত্যাদি কাজে যাকাত দিলে, তা আদায় হবে না।

৪। যাকাত দেয়ার সময়ে নিয়তই যথেষ্ট। ‘যাকাত দিলাম’ না বললেও চলবে, বরং ঈদ করতে দিলাম, তোমার বিয়েতে দিলাম, তোমায় লেখাপড়া করতে দিলাম ইত্যাদি বলেও তা দেয়া যায়। কিছু না বললেও চলবে। হকদারের বিয়ে, আকীকা, খাতনা ইত্যাদি অনুষ্ঠানেও উপহার হিসেবে যাকাত-ফেতরা দেয়া যায়।

৫। কোনো দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিল করতে কিংবা নিজের অধীনস্থ কাজের লোক, কর্মচারী, গৃহশিক্ষক প্রমুখের বেতন হিসেবে যাকাত-ফেতরা দেয়া যাবে না। ধন্যবাদ।

 

 


প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন

লেখাটি শেয়ার করুন 

এই বিভাগের আরো লেখা

Useful Links

Thanks

দিন রাত্রি’তে বিজ্ঞাপন দিন

© All rights reserved 2020 By  DinRatri.net

Theme Customized BY LatestNews