বাছা! আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুক এবং এতে অটল রাখুক। আমি তোমাকে কিছু ওসিয়ত করবো। এগুলো মনে রাখলে ও মেনে চললে, আশা করি ইন শা আল্লাহ, তুমি আখেরাতে ও দুনিয়ায় কামিয়াব হবে:
০১। তাক্বওয়া হচ্ছে, আল্লাহুতা’লার ভয়ে তোমার অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো যাবতীয় গুণাহ থেকে হেফাজত করবে এবং তাঁরই ইবাদত-বন্দেগীর জন্যে তাঁর হুকুম-আহকাম পালনে অবিচল থাকবে।
০২। যে এলেম তোমার দরকার – তা থেকে গাফেল থাকবে না।
০৩। আখেরাত ও দুনিয়ার প্রয়োজন ছাড়া করো সাথে মেলামেশা করবে না।
০৪। অপরের প্রতি ইনসাফ করবে। আর জরুরি না হলে, নিজের বেলায় ইনসাফ আশা করবে না।
০৫। কোনো মুসলিম বা জিম্মির (দারুল ইসলামের অমুসলিম বাসিন্দার) সাথে দুশমনি করবে না।
০৬। আল্লাহ তোমাকে যে সম্পদ ও সম্মান দিয়েছেন – তাতে তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে।
০৭। তোমার কাছে যা রয়েছে – তার সদ্ব্যবহার করবে। তাহলে, তুমি লোকজন থেকে অমুখাপেক্ষী থাকবে।
০৮। লোকজনের কাছে নিজেকে ছোট করবে না।
০৯। অর্থহীন কাজকারবার থেকে বিরত থাকবে।
১০। লোকজনের সাথে দেখা হলে প্রথমে সালাম দেবে, বিনয়ের সাথে কথা বলবে, শুভাকাঙ্খীদের সাথে মহব্বত রাখবে এবং মন্দলোকদের সাথে সামাজিকতা বজায় রাখবে।
১১। বেশি বেশি করে আল্লাহুতা’লার যিকির এবং তাঁর রাসূলের (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শানে দরূদ পেশ করবে।
১২। সব সময়ে সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পড়বে। আর তা হলো, নবীজী (‘আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) ফরমান:
الهم انت ربى لا إله إلا انت خلقتنى وانا عبدك وانا على عهدك ووعدك ما استطعت اعوذ بك من شر ما صنعت ابوء لك بنعمتك على وابوء بذنبى فاغفرلى فإنه لا يغفرالذنوب إلا انت 0
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আন্তা রব্বী লা ইলাহা ইল্লা আন্তা খলাক্বতানী ওয়া আনা ’আব্দুকা ওয়া আনা ’আলা ’আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্ব’য়তু আ’ঊযুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা ’আলাইয়্যা ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু। আপনি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। আপনি আমায় সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দা এবং আমি আপনার প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞার উপরে যথাসম্ভব অটল রয়েছি। যেসব গুণাহ আমি করেছি – সেসবের খারাবি থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই। আর আপনার কাছে আমার প্রতি আপনার নেয়ামত ও আমার গুণাহ স্বীকার করছি। সুতরাং আমায় ক্ষমা করুন। কেননা, আপনি ছাড়া আর কেউ গুণাহ মাফ করবেন না।
ফজিলত: কেউ সন্ধ্যায় এ ইস্তিগফার পড়ে ঐ রাতে মারা গেলে, সে বেহেশতে যাবে। আর কেউ সকালে এ ইস্তিগফার পড়ে ঐ দিন মারা গেলে, সেও বেহেশতে যাবে।
হযরত আবূ দারদা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বর্ণনা করেন, তাঁকে যখন বলা হলো যে, আপনার বাড়ী পুড়ে গেছে – তখন তিনি বললেন: না, পুড়েনি। আমি আল্লাহর রাসূলের (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে যে দোয়া শুনেছি – তা পড়েছি বলেই আমার বাড়ী পুড়েনি। কেউ তা দিনের শুরুতে পড়লে, সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং দিনের শেষে পড়লে, সকাল পর্যন্ত সে বিপদে পড়বে না। দোয়াটি হচ্ছে,
الهم انت ربى لا إله إلا انت عليك توكلت وانت رب العرش العظيم ما شاء الله كان وما لم يشأ لم يكن لاحول ولا قوة إلا بالله العلى العظيم اعلم ان الله على كل شئ قدير وان الله قد احاط بكل شئ عليما – اللهم إنى اعوذ بك من شر نفسى ومن شر كل ذى شر ومن شر كل دابة انت اخذ بناصيتها إن ربى على صراط مستقيم 0
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আন্তা রব্বী লা ইলাহা ইল্লা আন্তা ’আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আন্তা রব্বুল ’আরশিল ’আযীমি মা শা আল্লাহু কানা ওয়া মা লাম ইয়াশা লাম ইয়াকুন লা ’হাওলা ওয়া লা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল ’আলিইল ’আযীম আ’লামু আন্নাল্লাহা ’আলা কুল্লি শায়্যিন ক্বদীর ওয়া আন্নাল্লাহা ক্বদ আ’হাত্বা বিকুল্লি শাইয়্যিন ’আলীমা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’ঊযু বিকা মিন শাররি নাফসী ওয়া মিন শাররি কুল্লি যিই শাররি ওয়া মিন শাররি কুল্লি দাব্বাতিন আন্তা আখিযযু বিনাসিয়াতিহা ইন্না রব্বী ’আলা সিলাত্বি মুস্তাক্বীম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু। আপনি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। আপনার প্রতিই ভরসা করলাম। আপনি মহা আরশের প্রভু। আল্লাহর ইচ্ছায় সবই হয়। তিনি যা চান না – তা হয় না। মহামহিম আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি-সামর্থ্য নেই। আমি জানি যে, আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের উপরেই ক্ষমতাবান এবং তিনি সব কিছুই ঘিরে রয়েছেন। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার আওতাধীন আমার রিপুর খারাবি, প্রতিটি খারাবির হোতার খারাবি এবং জন্তু-জানোয়ারের খারাবি থেকে পানাহ চাই। আর আমার প্রভু তো সঠিক অবস্থানেই রয়েছেন।
১৩। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে কুরআন তেলাওয়াত করবে এবং এর সওয়াব আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তোমার মা-বাবা, শিক্ষকবৃন্দ ও সকল মুসলিমের উদ্দেশে হাদিয়া দেবে।
১৪। তোমার শত্রুদের চেয়ে তোমার বন্ধু-বান্ধবের ব্যাপারে বেশি সচেতন থাকবে। কেননা, লোকজনের মাঝে ফেতনা-ফ্যাসাদ বেড়ে গেছে। ফলে, তোমার শত্রুরা তোমার বন্ধু-বান্ধব থেকে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করবে।
১৫। তোমার গোপনীয় বিষয়, তোমার সোনাদানা, তোমার মাযহাব এবং তোমার সফরের কথা গোপন রাখবে।
১৬। প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করবে এবং তাদের তরফ থেকে কোনো কষ্ট পেলে, সবর করবে।
১৭। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মাযহাব আঁকড়ে থাকবে। আর অজ্ঞতা ও গোমরাহীর অনুসারীদের থেকে দূরে থাকবে।
১৮। প্রতিটি কাজে সৎ নিয়ত করবে এবং সব সময়ে হালাল খাবে।
১৯। পাঁচটি হাদীছ আমল করবে। এগুলো আমি পাঁচ লাখ হাদীছ থেকে বাছাই করেছি:
(ক) আমলগুলো নিয়ত অনুসারেই হয়ে থাকে। আর প্রত্যেকে তার নিয়ত অনুসারেই ফল পাবে।
(খ) ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে, অনর্থক কথা ও কাজ ছেড়ে দেয়া।
(গ) তোমাদের কেউ ততোক্ষণ ঈমানদার হতে পারবে না – যতোক্ষণ সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করবে – অন্যের জন্যেও তা পছন্দ না করবে।
(ঘ) হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে সন্দেহজনক জিনিসগুলো সম্পর্কে অধিকাংশ লোকই জানে না। সুতরাং যে এসব সন্দেহজনক জিনিস বর্জন করে – সে তার ধর্ম ও সম্মান সুরক্ষা করে। আর যে এসব সন্দেহজনক জিনিসে লিপ্ত হয় – সে হারামে লিপ্ত হয়! যেমন- কোনো রাখাল তার মেষপাল কোনো সংরক্ষিত এলাকার আশেপাশে চরালে – সেখানে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা থাকে। জেনে রেখো, প্রত্যেক মালিকের একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রেখো, আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে, তিনি যেসব হারাম করেছেন। এটিও জেনে রাখো, দেহে একটি গোশতের টুকরা রয়েছে। ওটা সংশোধিত হলে, সারা দেহ সংশোধিত হয়ে যায় এবং ওটা খারাপ হয়ে গেলে, সারা দেহ খারাপ হয়ে যায়। আর ওটা হলো, হৃদয়।
(ঙ) মুসলিম হচ্ছে, যার জবান ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদে থাকে।
২০। সুস্থ অবস্থায় ভয় ও আশার মাঝে থাকবে। আল্লাহর প্রতি সুধারণা এবং প্রশান্ত হৃদয়ের প্রবল আশা নিয়ে মারা যাবে। আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও দয়াময়।
(সূত্র: ওয়াসায়া আল-ইমামুল আযম)