কয়েক ডজন মানুষ বৈরুতের পার্লামেন্টের কাছে প্রতিবাদ করেছিল; Image Source: bbc.com
ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর, সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে। সংসদ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সংসদে প্রবেশের চেষ্টা করলে এ ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
দেশটির সংসদ ভবনের কাছে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়েছে পুলিশ। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে নিরাপত্তাবাহিনী। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বৈরুতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যায়। তারা বলছে, সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর অবহেলার কারণেই এমন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তারা রাস্তায় আগুন ধরিয়েছে এবং দোকান ভাঙচুর করেছে। ইতোমধ্যে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছে।
মঙ্গলবার বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৫৭ জন নিহত এবং প্রায় পাঁচ হাজার আহত হয়েছেন। তখন থেকেই ক্ষোভে ফুসছে লেবাননবাসী। এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে অনুসন্ধান চলছে। সরকার বলছে, গুদামে মজুত ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয়ে মারাত্মক ঐ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার জের ধরে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।
আগামী চারদিনের ভেতরে বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর আদালতের বিচারক ফাদি আকিকি বলেছেন: অন্তত ১৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অধিকাংশই বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তা। ১৬ জনকে আটক দেখানো হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
বিস্ফোরণের পর থেকে দুজন কর্মকর্তা ও একজন সাংসদ পদত্যাগ করেছেন। জর্দানে লেবাননের রাষ্ট্রদূতও পদত্যাগ করেন। তখন তিনি মন্তব্য করেন – এ বিপর্যয় বুঝিয়ে দিয়েছে যে, নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন।
বন্দর প্রধান এবং কাস্টমস বিভাগের প্রধান বলেছেন: আমরা বিচার বিভাগের কাছে একাধিকবার এ রাসায়নিক দ্রব্য বিদেশে রপ্তানির বা বন্দর থেকে সরাতে আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছি।
বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার হাসান কোরায়তেম ওটিভি’কে বলেন: মজুদ মালামাল বিপজ্জনক। তবে তা যে এতোটা বিপজ্জনক, তা আমাদের জানা ছিলো না।
ফরাসী রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রন, লেবাননের বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের বিধ্বস্ত স্থান পরিদর্শন করেছেন। Image Source: apnews.com
পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে গতকাল লেবানন সফরে যান ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুলে ম্যাক্রোঁ। বিস্ফোরণের পর, বিদেশী নেতাদের মাঝে তিনিই প্রথম বৈরুত সফরে গেলেন। সেখানে পৌঁছেই বিস্ফোরণস্থলসহ বিধ্বস্ত রাস্তা-ঘাট ঘুরে দেখেন তিনি। তখন নিজ দেশের নেতৃত্বকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে এ শোষণ অবসানের দাবিতে স্লোগান দেন লেবাননী জনগণ। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে লেবাননকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন: আমি মনে করি, লেবানন একা নয়। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় আক্রান্ত লেবানন গভীর অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে দেশটিতে সংস্কার আনা না হলে, এ সংকট আরও তীব্র হতে পারে।
আহতদের চিকিৎসায় খোলা হয়েছে অস্থায়ী হাসপাতাল। বিভিন্ন দেশ থেকে আসতে শুরু করেছে সহায়তা। ইতোমধ্যে তুরস্ক, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ জরুরি ওষুধ ও খাবার পাঠিয়েছে। এছাড়া, উদ্ধার কাজে দমকলবাহিনীর টিম পাঠিয়েছে ইতালি।
সূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি ও সিএনএন।
প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন