বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরেই শুরু হয়েছে উধোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর নির্লজ্জ ও অপরাজনীতি। আর তাতে এবার প্রকাশ্যে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য! যে রাসায়নিক দ্রব্য থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা সাত বছর ধরে মজুদ ছিলো বন্দরের গুদামে। শুল্ক কর্মকর্তারা বারবার প্রশাসনের শীর্ষ মহলের কাছে তা সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বললেও সরকার সেই হুঁশিয়ারীতে কান দেয়নি!
বৈরুত বন্দরের ১২ নং গুদামে খোলামেলা ফেলে রাখা বিপুল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিলো ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। তখন বাতুমি থেকে রাসায়নিক বিস্ফোরকবাহী একটি জাহাজ আটক করা হয়। রুশ ব্যবসায়ী ইগর গ্রেচুশকিন তাতে ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জর্জিয়া থেকে মোজাম্বিকে পাঠাচ্ছিলেন। প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখাতে না পারায় লেবানন কর্তৃপক্ষ জাহাজটি বাজেয়াপ্ত করে। তবে ওটির রাসায়নিক দ্রব্যের নিরাপত্তার জন্যে নাবিকদেরকে জাহাজে থাকতে বাধ্য করা হয়। পরে তারা অনশন ধর্মঘট শুরু করলে, তাদের জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়।
তখন নাবিকরা লেবানন কর্তৃপক্ষকে জানান, মোটরবাইক ভক্ত গ্রেচুশকিন দেউলিয়া হয়ে গেছেন এবং তিনি জাহাজটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে গেছেন।
কিছুদিন বাদে জাহাজ থেকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো মারাত্মক বিস্ফোরক বন্দরের ১২ নং গুদামে নামিয়ে রাখা হয়। এর ক-মাস পর, ২০১৪ সালের ২৭শে জুন কার্গো সমস্যার সমাধান চেয়ে চিঠি পাঠান তৎকালীন লেবাননী শুল্ক দপ্তরের পরিচালক শফিক মেরহি। পরের তিন বছরে আরো পাঁচবার চিঠি পাঠিয়েছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। চিঠিতে তারা বাজেয়াপ্ত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ে সমস্যা সমাধানে তিনটি পথও বাতলে দিয়েছিলেন। প্রথমত, বাজেয়াপ্ত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রপ্তানি করা। দ্বিতীয়ত, দেশের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা। তৃতীয়ত, দেশের বেসরকারি বিস্ফোরক দ্রব্য উৎপাদক সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করা। কিন্তু কোনো জবাব আসেনি!
এক বছর বাদে শুল্ক দপ্তরের নতুন পরিচালক বাদ্রি দাহির ২০১৭ সালে ওপর মহলে এক চিঠি পাঠিয়ে কর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি! গত সাত বছর ধরে বিপজ্জনক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরের ঐ গুদামেই অরক্ষিত অবস্থায় ছিলো – যার সবশেষ ফলাফল ধ্বংসপ্রায় রাজধানী বৈরুত। প্রাণ গেছে শতাধিক মানুষের! আহত পাঁচ হাজারেরও বেশি! গৃহহারা তিন লাখ মানুষ!
সূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট।