উমারি মসজিদ, ফিলিস্তিনে উছমানীয় খেলাফত আমলের শাসক জাহির আল আল-উমার আল-জায়দানি উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিবরিয়ায় নিজের নামে মসজিদ নির্মাণ করেন, Image Source: en.wikipedia.org/wiki/Zahir_al-Umar
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতির আশপাশে অবস্থিত মসজিদগুলোকে বার, সিনাগগ এবং অন্য কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করছে ইসরায়েলি।
ফিলিস্তিনে উছমানীয় খেলাফত আমলের শাসক জাহির আল আল-উমার আল-জায়দানি উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিবরিয়ায় নিজের নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন ১৭৪৩ সালে। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত মসজিদটিতে নামাজ আদায়ে যেতেন মুসল্লীরা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে তাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলো উমারি মসজিদ। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের বাড়ীঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সেই ধ্বংসস্তূপে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর, মসজিদটি পরিত্যক্ত হয়।
তিবরিয়ার এ ঐতিহাসিক স্থাপনটি জায়দানি মসজিদ নামেও পরিচিত ছিলো। মামলুক স্থাপত্যে তৈরি মসজিদটির একটি বিশাল গম্বুজ ও একটি মিনারও ছিলো।
ইসরাইলে আরব নাগরিকদের হাই ফলোআপ কমিটির কামাল খতিব বলেন: নাকবার পর, অধিকাংশ ফিলিস্তিনির মতোই তিবরিয়ার বাসিন্দারা সিরিয়া ও লেবাননে পালিয়ে যান। আর জায়দানির পরিবার নাসিরাত শহরের কাছে চলে যায়। উমারি মসজিদটি সংস্কার করতে ইসরাইলের কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন জায়দানির পরিবার। তিবরিয়া পৌরসভা তাদের সেই অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু এ পুরো সময়টিতে মসজিদটি বন্ধ রাখা হয়েছে। মুসল্লীদের সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। কেউ মসজিদটিতে প্রবেশ করতেও পারেননি। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ অন্তত ১৫টি মসজিদকে সিনাগগে রূপান্তরিত করেন। এছাড়া, ৪০টি মসজিদ হয় ধ্বংস করা হয়েছে নয়তো বন্ধ কিংবা পরিত্যক্ত করে রাখা হয়েছে। আর ১৭টি মসজিদকে গোলাবাড়ী, বার, রেস্তোরাঁ ও জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলীয় শহর সাফেদের আল-আহমার মসজিদ, যা এখন নাইটক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। Image Source: middleeastmonitor.com
উত্তরাঞ্চলীয় শহর সাফেদের আল-আহমার মসজিদকে কনসার্ট হল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর কিসারিয়া শহরের আল-জাদিদ মসজিদকে বারে রূপান্তরিত করা হয়েছে। হাইফা অঞ্চলে আইন হাউদ মসজিদ, জাফ্ফায় আল-সিকসিক মজজিদকেও একই ভাগ্য বরণ করতে হয়। নাকবার পরে ৫৩৯টি ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করা হয়েছে। মসজিদসহ সব ধরনের ফিলিস্তিনি অবকাঠামো ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের ধ্বংসযজ্ঞের সহজ শিকার ছিলো। নাকবার (১৯৪৮ সালে সংঘটিত যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনি আরবদের দেশত্যাগ) আগে ফিলিস্তিনি মসজিদগুলো মুসল্লীতে ভরে যেতো। এরপরে সেই মসজিদগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বহু মসজিদ সিনাগগ, বার, জাদুঘর, ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ বানিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। মুসলমানদের অনুভূতিতে সামান্য সম্মান দেখায়নি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। আল জাফফা এলাকায় মুসলমানদের একটি গোরস্তান মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও স্থানীয় লোকজন এ কাজের ব্যাপক বিরোধিতা করেছেন।
তবে মসজিদকে ইবাদত ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে ইসরাইল। ২০১৫ সালের অক্টোবরে ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন: ইসরাইলে ৪০০ মসজিদ আছে। গত ২৫ বছরে মুসল্লিদের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কিন্তু কামাল খতিব বলেন: ইসরাইলের ইতিহাসে কোনো মসজিদ বানানোর মতো ঘটনা ঘটেনি।
সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর ও
আনাদলুর এজেন্সি।
প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন