কুরবানির পশুর চামড়া নিয়ে কী করবেন? কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে সে টাকা গরিবকে দান করা যাবে না? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১. আপনার রুচি হলে বা রন্ধনপদ্ধতি জানলে কুরবানির পশুর চামড়া খেতে পারেন।
২. কুরবানির পশুর চামড়া দাবাগত করে ব্যবহার করতে পারেন, যেমন চামড়া দিয়ে জুতা, মশক বা অন্য কোন প্রয়োজনীয় বস্তু বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
সাবেকি যমানায় শিল্পের বিশেষায়নের আগে বহু মানুষ চামড়া দাবাগত করা বা শরিয়াহসম্মত উপায়ে ব্যবহারউপযোগি করার পদ্ধতি জানতো। তাই ফিকহের বইগুলোতে দাবাগত করার আলোচনা পাওয়া যায়। শিল্পের বিশেষায়নের যুগে দাবাগতের নিয়মকানুন চর্মবণিক ব্যতীত অন্যরা জানে না বললেই চলে। তাই কুরবানির পশুর চামড়া কাউকে ব্যবহার করতে দেখা যায় না।
৩. কুরবানির চামড়া গরিবদেরকে দান করে দিতে পারেন।
৪. কুরবানির চামড়ার বিক্রিলব্ধ অর্থ কিছুতেই নিজে ব্যবহার করতে পারবেন না, এটি জায়েজ নয়।
৫. বাকি রইল কুরবানির চামড়া বিক্রি করে সে টাকা গরিবদের দান করার মাসয়ালা। এটিই আমাদের সমাজে ব্যাপকহারে প্রচলিত।
আমাদের সমাজের এই প্রচলনের ভিত্তি কোন ভুঁইফোড় অভিমত নয়। এটি হানাফি মাযহাবের অভিমত। তাছাড়া ইমাম ইসহাক (রাহ) ও ইমাম আহমদ (রাহ) হতে এমন অভিমত বর্ণিত হয়েছে। সম্মানিত ইমামগণের এই অভিমত স্বকপোলকল্পিত নয়। ইবন উমার হতে বর্ণিত, তিনি গরুর চামড়া বিক্রি করে তার মূল্য সাদাকা করে দিয়েছিলন।
কিন্তু লক্ষ্য করলাম, একজন বা দুয়েকজন শায়েখ মাসয়ালা দিচ্ছেন যে, কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে সে টাকা গরিবদেরকে দেয়া যাবে না। দিতে চাইলে চামড়াই দিতে হবে। এই বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত রয়েছে যে, এতদিন ধরে আমাদের সমাজে প্রচলিত আমলটি ভুল ছিল। কিন্তু একটু আগে আমরা দেখেছি কুরবানির চামড়া বিক্রি করে তার মূল্য দান করার বিষয়টি দলিলশূন্য আমল নয়।
না, আমি বলছি না, একজন বা দুয়েকজন শায়েখ যা বলছেন, তা ভুল। জুমহুর আলিম তো সেটাই বলেছেন যে, কুরবানির চামড়া বিক্রি করা যাবে না, যদি কুরবানিদাতা ব্যবহার না করে তবে দান করে দেবে।
আমি এটাও বলতে চাই না, হানাফি মাযহাবের অনুসারিদের সমাজে ভিন্ন মাসয়ালা দেয়া যাবে না। কোন মুহাক্কিক আলিমের কাছে যদি মনে হয়, প্রচলিত আমলের চেয়ে অপর অভিমতটি অধিক শক্তিশালী, তবে তিনি সেটি উল্লেখ করতে পারেন। কিন্তু ব্যাপক জনগোষ্ঠীর আমলের বিপরীত আমলটিকে একমাত্র অভিমত হিসেবে উল্লেখ করতে পারবেন না। এটি মহা ভুল বার্তা দেয়।
কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে তার মূল্য দান করে দেয়া, একটি গ্রহণযোগ্য অভিমত, এর স্বপক্ষে কয়েকজন ইমামের রায় ও ইবন ‘উমার (রা)-এর আমল পাওয়া যায়। এ আমলটি আমাদের সমাজে ব্যাপকহারে প্রচলিত। তাই ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগে এই অভিমত একেবারে চেপে যাওয়া কিছুতেই উচিত হবে না। আপনি ভিন্নমত উল্লেখ করতে পারেন। প্রচলিত আমলটিও দলিলসম্মত, এটাও আপনাকে উল্লেখ করতে হবে। মহান আল্লাহ সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।
লেখক: ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক,
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।