সূচনাঃ এই পত্রটি শেখ, ইমাম, অনন্যসাধারণ, তত্ত্বাম্বেষী”, বাস্তবতার উন্মেষকারী,উম্মতের এবং দ্বীনেরপুনরুজ্জীবনদানকারী আবু আবদুল্লাহ মােহাম্মদ ইবনে আলি ইবনে
আরাবী তাঈ আন্দালুসী মাগরিবীর (আল্লাহ্ তাঁর আত্মাকে পবিত্র করুন) পক্ষ হতে
মহাজ্ঞানী, সম্পাদক, প্রজ্ঞাময়, দ্বীন ও উম্মতের গর্ব মােহাম্মদ ইবনে উমর খতিব রাযির (আল্লাহ্ তাঁকে প্রাচুর্য দিন এবং জান্নাতকে তাঁর আবাসস্থল করুন নিকট) প্রেরিত]। আল্লাহ্’র প্রশংসা এবং নবীর প্রতি সালাম। প্রশংসা আল্লাহ্’র এবং সালাম আল্লাহ্’র বিশেষভাবে পছন্দনীয় বান্দাদের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য (সালাম বর্ষিত হােক) আমার সাথী ফখরুদ্দিন মােহাম্মদের উপর, আল্লাহ্ তাঁর উচ্চবাসনাকে বৃদ্ধি করুন এবং তাঁর উপর রহমত ও বরকত দিয়ে ভরপুর করে দিন।
অতপরঃ তােমরা একে অপরকে সত্যের উপদেশ প্রদান করাে। আমি তােমার নিকট আল্লাহ্’র প্রশংসা করছি, যিনি ব্যতীত কোনাে ইলাহ নেই। আল্লাহ্’র রসূল (সা.) বলেছেন: “তােমাদের কেউ যখন তার ভাইকে ভালবাসে, সে যেন তাকে তা সম্পর্কে অবহিত করে।” আর আমি তােমাকে ভালবাসি। মহান আল্লাহ্ বলেন: “তােমরা একে অপরকে সত্যের উপদেশ দেও ”
আমি তােমার কিছু রচনাবলী পেয়েছি, আল্লাহ্ তােমার সৃষ্টিশীল মনন দ্বারা সেসবে সহায়তা করুন এবং সেসবে উন্নত চিন্তা ভরিয়ে দিন। নিজ হাতের অর্জিত জ্ঞান এবং আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞান যখন নফস তার নিজস্ব-অর্জন দ্বারা পরিপুষ্ট হয় তখন সেটা মহানুভবতা এবং অনুদানের স্বাদ আস্বাদন করে না। আর যে পায়ের নিচ থেকে আহার করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয় আর পুরুষতাে সে যে তার উপর হতে আহার করে। যেমনভাবে মহান আল্লাহ্ বলেন:
“যদি তারা তাওরাত ও ইনজিল এবং যা তাদের প্রভুর পক্ষ হতে তাদের উপর নাযিল হয়েছে তাকে প্রতিষ্ঠিত করতাে তবে তাদের উপরের আসমান এবং পায়ের নিচের জমিন থেকে আহার করানাে হতাে।”
পরিপূর্ণ-উত্তরাধিকার আমার সাথী, মহান-আল্লাহ্ তােমায় জ্ঞান দিন, তােমার জানা উচিত যে, পরিপূর্ণ-উত্তরাধিকার সকল দিক দিয়েই পূর্ণ হয়। যেটা আংশিকভাবে পূর্ণ থাকে (সেটা পরিপূর্ণ-উত্তরাধিকার) নয়। “জ্ঞানীরা নবীদের উত্তরাধিকার”। জ্ঞানীদের জন্য এটা আবশ্যক যে, তারা সকল দিক দিয়ে উত্তরাধিকার হওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চালাবে এবং অসম্পূর্ণ অভিলাষের দিকে ধাবিত হবে না।
সৌন্দর্য হচ্ছে মানবীয়-শ্রেষ্ঠত্ব-
আমার সাথী, মহান-আল্লাহ্ তােমায় জ্ঞান দিন, তুমি তাে জানাে যে: সৌন্দর্য হচ্ছে মানবীয়-শ্রেষ্ঠত্ব যেটা কেবলমাত্র ঐশ্বরিক-তত্ত্বজ্ঞান দ্বারা লাভ করা যায়।
অন্যদিকে কদর্যতা হচ্ছে এর সম্পূর্ন বিপরীত।
জীবনকে অযথা কাজে নষ্ট না করা-
উচ্চ-অভিলাষীদের জন্য এটা আবশ্যক যে, সে তার জীবনকে কেবল অনিত্য জিনিস এবং তা সংক্রান্ত বর্ণনার পিছনে (নিয়ােজিত করে) নষ্ট করবে না। এই কাজের দ্বারা সে তার প্রভু হতে প্রাপ্ত অংশকে নষ্ট করে। একইভাবে তার জন্য এটা আবশ্যক যে,সে তার সত্তাকে তার চিন্তাশীল-রাজ্য হতে অবমুক্ত করবে। কেননা চিন্তা কেবল তার উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে অবগত। কিন্তু সত্য যেটাকে তালাশ করা হচ্ছে তা এরূপ নয়।
কেননা আল্লাহ্’র-জ্ঞান আর আল্লাহর অস্তিত্বের-জ্ঞান ভিন্ন জিনিস।
নেতিবাচক পদ্ধতি এবং তার সীমাবদ্ধতা-
জ্ঞানীগন আল্লাহকে তাঁর অস্তিত্ববান-সত্তার দিক দিয়ে জানে আর সেটা নেতিবাচক পদ্ধতির মাধ্যমে (অর্জিত হয়) কিন্তু সেটা প্রতিষ্ঠাকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয় না। এইমতটি অধিকাংশ জ্ঞানীগুণী এবং ধর্মতত্ত্ববিদদের দল থেকে ভিন্ন।
এইক্ষেত্রে আমাদের নেতা আবু হামিদ, আল্লাহ্ তাঁর আত্মাকে পবিত্র করুন, ব্যতিক্রম যেহেতু এ ব্যাপারে তিনি আমাদের সাথে সহমত পােষণ করেন। চিন্তা-গবেষণা এবং চিন্তা-পর্যবেক্ষণের মাধ্যম দিয়ে বােধশক্তি আল্লাহকে জানবে, এই ধারণা থেকে মহান আল্লাহ্ থেকে অধিকতর মহিমাময়, মর্যাদাময় এবং সুউচ্চ।
আধ্যাত্মিক প্রত্যক্ষকরণ-
জ্ঞানীদের জন্য এটা আবশ্যক যে, আধ্যাত্মিক-প্রত্যক্ষকরণের দ্বারা যখন সে
মহান-আল্লাহ্’র তত্ত্বজ্ঞান লাভের ইচ্ছা করবে তখন সে তার অন্তরকে চিন্তা-গবেষণা হতে স্বাধীন করবে। উচ্চ-অভিলাষীদের জন্য আবশ্যক যে, সে কাল্পনিক জগতের দ্বারা এ বিষয়টির সামনে দাড়াবে না। (যেহেতু এ জগত) আলােকময় দেহ ধারণ করে। (এসব
আলােকময় দেহ) তাদের (বাহ্যিক-রূপের) ভিন্ন অর্থ প্রদান করে। কল্পনা জ্ঞানগর্ভ
অর্থকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অর্থে নামিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ জগতকে দুধের উপমায়,
কুরআনকে দড়ির উপমায় এবং দ্বীনকে শেকলের উপমায় (প্রকাশ করে, এসব তাদের বাহ্যিক রূপের বিপরীত)।
বৈশ্বিক সত্তা এবং ফকির শব্দটির আসল মানে-
উচ্চ-অভিলাষীদের জন্য এটা আবশ্যক নয় যে, বৈশ্বিক-সত্তা থেকে (তত্ত্ব-জ্ঞান) আহরণের ক্ষেত্রে তার শিক্ষক এবং প্রত্যক্ষকারী হবে মহিলা, যেমনিভাবে এটা তার জন্য আবশ্যক নয় যে: আহরণের ক্ষেত্রে সে নিজেকে এমন জিনিসের সাথে সম্পৃক্ত করবে যেটা সত্তাগতভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীলতার কারনে গরীব (অসহায়/দূর্বল )। যে জিনিসটি তার নিজ সত্তা ভিন্ন অপরের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় সে জিনিসটিই গরীব (অসহায় /দূর্বল)। মহান আল্লাহ্ ভিন্ন সমস্ত কিছুর অবস্থা হচ্ছে এরূপ।
আল্লাহ্ ব্যতীত কোনাে কর্ম সম্পাদনকারী নেই-
সেজন্য তুমি তােমার উচ্চ-অভিলাষকে এমনভাবে উপরে উন্নীত করাে যাতে তুমি কাশফের মাধ্যমে আল্লাহ্ হতে তত্ত্-জ্ঞান লাভ করাে। তত্ত্বান্বেষীদের কাছে আল্লাহ্ ব্যতীত কোনাে কর্ম-সম্পাদনকারী নেই। আর তাই তারা আল্লাহ্ হতে তত্ত্ব-জ্ঞান আহরণ করে বাঁধনের মাধ্যমে, উন্মােচনের মাধ্যমে নয়।
আল্লাহ্’র পরিজন-
চাক্ষুষ-নিশ্চয়তার দিকে মিলিত হওয়া ব্যতীত আল্লাহ্’র-পরিজনরা তাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছায় না।তাই (তারা নিজেদেরকে) জ্ঞানগত-নিশ্চয়তাতে আবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত রাখে।
চিন্তাগবেষণা এবং অন্ধ অনুসারী-
জেনােরাখাে, চিন্তা-গবেষণার লােকজন যখন চিন্তা-গবেষণার চূড়ান্ত উচ্চতায় পৌছে যায় তখন তাদের নিজস্ব চিন্তা-গবেষণা তাদেরকে শ্রবণশক্তিহীন অন্ধ অনুসারীতে পরিণত করে। (তত্বজ্ঞানের) এ ব্যাপারটা এতােই উচ্চ যে, চিন্তা-গবেষণা সেখানে আটকে যায়। যতক্ষণ চিন্তা-গবেষণা সেখানে বিদ্যমান থাকে ততক্ষণ এটা অসম্ভব যে, একজন তাতে প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি লাভ করবে চিন্তা-গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত কর্মতৎপরতাকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বােধশক্তির একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে, যেখানে সে আটকে যায়। এটার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটা মহান আল্লাহ্ যা প্রদান করে তা গ্রহণ করে নেয়। আর তাই উচ্চাভিলাষীদের জন্য এটা আবশ্যক যে, সে নিজেকে ঔদার্যময়- ঐশ্বরিক দমের মুখােমুখি করবে এবং নিজেকে তার চিন্তা-পর্যবেক্ষণ এবং তার অর্জিত জ্ঞানের শিকলে বন্দি করে রাখবে না। কেননা সেতাে এসবের জন্যই তার সন্দেহে পড়ে আছে।
রাযির দিশেহারা মানসিক অবস্থা-
তােমার সহকর্মী ভাইদের মাঝে একজন যাকে আমি বিশ্বাস করি, যে তােমার শুভাকাঙ্খীদের একজন আমাকে খবর দিয়েছে যে, একদিন সে তােমাকে কাদতে দেখেছে। সে এবং যারা সেখানে উপস্থিত ছিলাে তারা তােমার কান্না সম্পর্কে প্রশ্ন করে। তার উত্তরে তুমি বলেছিলে: “অমুক বিষয়ে ত্রিশ বছর যাবত আমি যা বিশ্বাস করেছিলাম একটি প্রমাণের মাধ্যমে আজ সেটা পরিষ্কার হয়েছে এবং আমার কাছে উদ্ভাসিত হয়েছে যে, এতদিন আমি যা বিশ্বাস করতাম বিষয়টি আসলে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই আমি ক্রন্দন করছি এবং বলছি, যেটা আমার কাছে এখন উদ্ভাসিত হয়েছে সেটাও যদি প্রথম বিশ্বাসের মতই হয়ে থাকে।” আর এটাই তােমার বক্তব্য।
কেবল যুক্তি দিয়ে আল্লাহকে পাওয়া যায় না-
এটা তত্ত্বজ্ঞানীর জন্য অসম্ভব যে, সে যুক্তিতর্ক এবং চিন্তা-গবেষণা দ্বারা প্রশান্তি এবং মুক্তি লাভ করবে, আর যদি সেটা বিশেষভাবে হয়ে থাকে মহান আল্লাহ্’র তত্ত্বজ্ঞান। এটা অসম্ভব যে, সে তাঁর (আল্লাহর) সত্তাকে চিন্তা-গবেষণা বা যুক্তি তর্কের রাস্তা দিয়ে জানবে।
তত্ত্বজ্ঞান লাভের পথ-
হে আমার ভাই! তুমি এই দুর্দশাতে আটকে আছাে এই জন্য যে, তুমি আধ্যাত্মিক-প্রচেষ্টা, আধ্যাত্মিক-সাধনা, অবমুক্তকরণের পথে প্রবেশ করছাে না।
যেটাকে আল্লাহ্র রসূল (সা.) নির্ধারন করেছেন। এর মাধ্যমে তুমিও তা পাবে যা সেই বান্দাটি পেয়েছেন। যেই বান্দা সম্পরকে মহান আল্লাহ্ বলেন:
“আমার বান্দাদের মাঝে একজন যাকে আমি আমার নিকট হতে রহমত প্রদান করেছি এবং তাকে আমার পক্ষ হতে তত্ত্বজ্ঞান শিক্ষা
দিয়েছি।
এই জন্য তােমার মতাে লােকের উচিত এই মর্যাদাময়, সুউচ্চ এবং সুমহান
কর্মের মুখােমুখি হওয়া।
কার্যকারণ ও তার বিভিন্ন দিক,তত্ত্বজ্ঞানীরা কার্যকারণের দিকে মনােযােগী নন-
আমার সাথী, মহান-আল্লাহ্ তােমায় জ্ঞান দিন, তােমার জানা উচিত প্রতিটি
অস্তিত্ববান জিনিসই একটি কার্যকারণের মাধ্যমে অস্তিত্বশীল আর এই কার্যকারণটি তার মতােই অনিত্য বা ধ্বংসশীল। এর দুটো দিক রয়েছে: একদিক হচ্ছে, যেটা কার্যকারণের দিকে দৃষ্টিপাত করে। অপর দিক হচ্ছে, যেটা দিয়ে তার অস্তিত্ব -প্রদানকারীর দিকে দৃষ্টিপাত করে,আর অস্তিত্ব-প্রদানকারীই হচ্ছেন আল্লাহ্। সমস্ত লােকজন এবং জ্ঞানীগুণী ও দার্শনিক সবাই অস্তিত্ববান হবার কার্যকারণের দিকে মনােযােগী। কিন্তু মহান আল্লাহ্’র -পরিজনদের মধ্যে তত্ত্ব-জ্ঞানীগন এই নিয়মের ব্যতিক্রম। যেমনভাবে নবী, আউলিয়া এবং ফেরেশতাগন, তাদের উপর সালাম বর্ষিত হােক, এই নিয়মের ব্যতিক্রম। কেননা তাঁরা অস্তিত্ববান হবার কার্যকারণকে অবগত হবার সাথে সাথে তারা অপর দিকেও সমানভাবে দৃষ্টি আবদ্ধ রাখেন (সে অপরদিকটা হচ্ছে) তাদের অস্তিত্ব -প্রদানকারীর দিক।
তত্ত্বজ্ঞানীদের মধ্যে দু’দল –
তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁর প্রতিপালককে তাঁর সত্তার দিক দিয়ে দৃষ্টিপাত না করে তাঁর কার্যকারণের দিক দিয়ে দৃষ্টিপাত করে। তাই তাঁরা বলে, আমাকে বর্ণনা করছে আমার অন্তর, আমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে”, অন্যজন যে পরিপূর্ণ সে বলে, আমাকে বর্ণনা করছে আমার প্রতিপালক।” এই কথার দিকেই আমাদের তত্ত্ব-জ্ঞানী সাথী ইশারা করছে: তা হলাে, “তোমরা তােমাদের জ্ঞানকে গ্রহণ করছো মৃত বাহক হতে মৃত বাহকের মাধ্যমে, আর আমরা আমাদের জ্ঞান গ্রহণ করছি প্রাণবান সত্তা হতে, যার কোনাে মৃত্যু নেই।” আর যার অস্তিত্ব নিজ সত্তা-ভিন্ন অন্যকিছু থেকে উৎসারিত তার ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত হলাে সেটা কোনাে জিনিসই না। আর তত্ত্বজ্ঞানীর জন্য নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কিছুতেই কোনাে আস্থা নেই।
আল্লাহ্’র বিভিন্ন নাম এবং তাদের ধরন-
অতঃপর আমার সাথী তােমার জানা উচিত যে, যদিও আল হক্ব বা পরম সত্য এক কিন্তু আমাদের কাছে নিশ্চিতভাবেই তাঁর ভিন্ন-ভিন্ন অনেক দিক রয়েছে। আর তাই এ আলােচনা হতে তুমি ঐশ্বরিকতার আগমন এবং তাঁর আত্মবিকিরণের ব্যাপারে সতর্ক হও। প্রতিপালকের দৃষ্টিকোন এবং সুরক্ষা -প্রদানকারীর দৃষ্টিকোন হতে পরম সত্য তােমার নিকট এক রকম নয়। ঠিক তেমনি দয়াময়ের দৃষ্টিকোন এবং প্রতিশােধ- গ্রহণকারীর দৃষ্টিকোন হতে পরম সত্য তােমার নিকট এক রকম নয়। এটা সকল নামসমূহের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য।
আল্লাহ্ নাম সকল নামকে ধারণ করে রাখে-
জেনাে রাখাে যে, ঐশ্বরিক দিক বা চেহারা বা ‘আল্লাহ্ নামটি অন্য সকল নামের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়, যেমন: প্রতিপালক, শক্তিশালী বা কৃতজ্ঞতাময় আর এই নামসমূহ মিলিতভাবে অনেকটা একক সত্তা বা যাতের মতাে যেটা একক সত্তার মধ্যের সমস্ত গুণাবলীকে ধারণ করে। ‘আল্লাহ নামটি সকল নামসমূহকে ধারণকারী এবং তারা (অন্যান্য নামসমূহ) এই (আল্লাহ্) নামটিকে প্রত্যক্ষকরণ হতে সংরক্ষণ করে। এজন্যই তুমি এই (আল্লাহ্) নামটিকে কখনাে প্রত্যক্ষ করতে পারবে না। যখন তিনি তােমাকে এই (আল্লাহ্) নামটি (যেটা সমস্তকিছুকে ধারণ করে) দ্বারা সম্বোধন করে তখন তুমি খেয়াল করাে, কী দ্বারা তােমাকে সম্বােধন করা হচ্ছে এবং আরাে খেয়াল করাে যে: সেই সম্বােধন কোন অবস্থা বা প্রত্যক্ষকরণকে নির্দিষ্ট করছে। খেয়াল করাে যে, ঐশ্বরিক নামসমূহের মাঝে কোন নামটি দিয়ে দৃষ্টপাত করা হয়েছে, তাহলে সেটাই হবে সে নাম যা দিয়ে তােমার সাথে কথা বলা হচ্ছে অথবা সে নাম যা তুমি প্রত্যক্ষ করেছে। এই বিষয়টা আকৃতির-বিবর্তনের মাধ্যমে বােধগম্যময় বা স্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, ডুবন্ত ব্যাক্তির ব্যাপারটি বিবেচনা করাে, যে চিৎকার করে বলে, “হে আল্লাহ্!” কিন্তু এর আসল মানে, “হে সাহায্যকারী!” অথবা “হে মুক্তিকারী!” অথবা “হে উদ্ধারকারী!”। ব্যাথাগ্রস্থ ব্যাক্তি যখন বলে: “হে আল্লাহ্!” তখন এর আসল মানে, “হে উপশনকারী।” অথবা “হে উদ্ধারকারী!”। এই রকম আরা অনেক উদাহরণ রয়েছে।
আকৃতির-বিবর্তন
আকৃতির-বিবর্তনের ব্যাপারে তােমার জন্য আমার বক্তব্য হচ্ছে এরূপ, যেমনটি মুসলিম তার সহিহ সংকলনে (সহিহ মুসলিম হাদিসগ্রন্থে) উল্লেখ করেছেন। মহিমাময় মহান (তাঁর) আত্মবিকিরণ প্রকাশ করবেন আর সেটা অস্বীকার করা হবে আর তা হতে পানাহ চাওয়া হবে। তাই তিনি তাদের চেনা রূপে তার আকৃতির -বিবর্তন ঘটাবেন। তখন তারা অস্বীকারের পর তাকে স্বীকার করবে।
এটাই হলাে এখানে মুশাহাদা বা প্রত্যক্ষকরণের মানে। মােনাজাত বা স্রষ্টার সাথে আন্তরিক-কথােপকথন এবং ঐশ্বরিক কথাবার্তারও একই মানে।
অপ্রয়ােজনীয় জ্ঞান এবং তার উদাহরণ-
জ্ঞানীদের জন্য এটা আবশ্যক যে, যে জ্ঞানের মাধ্যমে তার সত্তা পরিপূর্ণতা লাভ করে সে জ্ঞান ব্যতীত সে অন্য কোনাে জ্ঞান তালাশ করবে না। (সে জ্ঞান হবে এমন যে) সে সেখানে যায় জ্ঞানও যেনাে তার সঙ্গী হয়। এটা মহান আল্লাহর তত্ত্বজ্ঞান (যেটা প্রদান এবং প্রত্যক্ষকরণের মাধ্যমে অর্জিত হয়) ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়।