1. zobairahmed461@gmail.com : Zobair : Zobair Ahammad
  2. adrienne.edmonds@banknews.online : adrienneedmonds :
  3. annette.farber@ukbanksnews.club : annettefarber :
  4. camelliaubq5zu@mail.com : arnider :
  5. patsymillington@hidebox.org : bennystenhouse :
  6. steeseejep2235@inbox.ru : bobbye34t0314102 :
  7. nikitakars7j@myrambler.ru : carljac :
  8. celina_marchant44@ukbanksnews.club : celinamarchant5 :
  9. sk.sehd.gn.l7@gmail.com : charitygrattan :
  10. clarencecremor@mvn.warboardplace.com : clarencef96 :
  11. dawnyoh@sengined.com : dawnyoh :
  12. oralia@b.thailandmovers.com : debraboucicault :
  13. chebotarenko.2022@mail.ru : dorastrode5 :
  14. lawanasummerall120@yahoo.com : eltonvonstieglit :
  15. tonsomotoconni401@yahoo.com : fmajeff171888 :
  16. anneliese@a.skincareproductoffers.com : gabrielladavisso :
  17. gennieleija62@awer.blastzane.com : gennieleija6 :
  18. judileta@partcafe.com : gildastirling98 :
  19. katharinafaithfull9919@hidebox.org : isabellhollins :
  20. padsveva3337@bk.ru : janidqm31288238 :
  21. alec@c.razore100.fans : kay18k8921906557 :
  22. michaovdm8@mail.com : latmar :
  23. malinde@b.roofvent.xyz : lauranadeau097 :
  24. adorne@g.makeup.blue : madie2307391724 :
  25. mahmudCBF@gmail.com : Mahmudul Hasan : Mahmudul Hasan
  26. marti_vaughan@banknews.live : martivaughan6 :
  27. crawkewanombtradven749@yahoo.com : marvinv379457 :
  28. deirexerivesubt571@yahoo.com : meridithlefebvre :
  29. ivan.ivanovnewwww@gmail.com : ninetuabtoo :
  30. lecatalitocktec961@yahoo.com : normanposey6 :
  31. guscervantes@hidebox.org : ophelia62h :
  32. clint@g.1000welectricscooter.com : orvilleweigel :
  33. margarite@i.shavers.skin : pilargouin7 :
  34. gracielafitzgibbon5270@hidebox.org : princelithgow52 :
  35. randi-blythe78@mobile-ru.info : randiblythe :
  36. lyssa@g.makeup.blue : rochellchabrilla :
  37. berrygaffney@hidebox.org : rose25e8563833 :
  38. incolanona1190@mail.ru : sibyl83l32 :
  39. pennylcdgh@mail.com : siribret :
  40. ulkahsamewheel@beach-drontistmeda.sa.com : ulkahsamewheel :
  41. harmony@bestdrones.store : velmap38871998 :
  42. karleengjkla@mail.com : weibad :
  43. whitfeed@sengined.com : whitfeed :
  44. basil@b.roofvent.xyz : williemae8041 :
  45. arnoldpeter933@yahoo.com : wilsonroach486 :
  46. dhhbew0zt@esiix.com : wpuser_nugeaqouzxup :
নূসূস, শরীআ ও তারীখ: আয়া সুফিয়ার মসজিদে রূপান্তর কেন?
বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৭:১১ পূর্বাহ্ন

নূসূস, শরীআ ও তারীখ: আয়া সুফিয়ার মসজিদে রূপান্তর কেন?

ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক
  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০
  • ৫৯৬ বার পড়া হয়েছে
আয়া সোফিয়া, Image Source: middleeastmonitor.com

নূসুস মানে কুরআন ও হাদীসের মূল টেক্সট যা শরীআর মূল উৎস, শরীআ মানে নূসুসের আলোকে সাহাবী ও পরবর্তী বিশিষ্ট আলিমদের দেখানো পদ্ধতি যার বৈধতা স্বয়ং নূসুস সাব্যস্ত করেছে, তারীখ মানে ইতিহাস যা বাস্তবে ঘটেছিলো। আয়া সুফিয়ার মসজিদে রূপান্তর সিদ্ধান্ত কী নসূস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছিলো? সে ইতিহাসটা-ই এখানে তারীখ বলছি।

নূসুস অন্যন্য ধর্মালম্বীদের উপাসনালয় নিয়ে কী বলে?

এক.
পবিত্র কুরআনের সূরা হজ্জের ৪০ নং আয়াতে বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের উপসনালয় সম্পর্কে একটি নির্দেশনা পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন,

‘আল্লাহ যদি মানুষদের এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে যেখানে আল্লাহর নাম বেশী করে স্মরণ করা হয় সেসব আশ্রম (১), গীর্জা (২), ইবাদতখানা (৩) ও মসজিদ (৪) বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। আর নিশ্চয় আল্লাহ্ তাকে সাহায্য করেন যে আল্লাহকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিশালী পরাক্রান্ত। (আল-কুরআন, ২২:৪০)

আয়াতে বিধৃত (১) صَوَامِعُ এ শব্দটি صَوْمَعَةٌ এর বহুবচন যাতে খ্রীস্টানদের পাদ্রী, যোগী, সন্নাসী, সংসার বিরাগী সাধুুরা থাকেন। (২) আর بِيَعٌ শব্দটি بِيْعَةٌ এর বহুবচন যা সাধারণ খ্রীস্টানদের গীৰ্জা। (৩) ইয়াহুদীদের ইবাদাতখানাকে صَلَوَاتٌ বলা হয় যা আরামীয় শব্দ। অনেকের ধারণা শব্দটি ল্যাটিন হয়ে ইংরেজিতে Salute ও Salutation এর রূপ পেয়েছে। (৪) সর্বশেষ مَسَاجِدُ শব্দটি مسجد শব্দের বহুবচন যা মুসলিমদের ইবাদাতখানাকে বলা হয় (মূফতি শফী, মাআরিফুল কুরআন)।

আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যুগে যুগে নবীদের উপর কাফেরদের সাথে যুদ্ধ ও জিহাদের আদেশ নাযিল না হলে কোন যুগেই আল্লাহর দ্বীনের নিরাপত্তা থাকত না। মূসার (আ.) আমলে صَلَوَاتٌ, ঈসার (আ.) আমলে صَوَامِعُ ও بِيَعٌ এবং নবীজীর (সা.) আমলে মসজিদ সমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। এ আয়াতে কেবল বিগত যামানায় যত শরীআতের ভিত্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং ওহীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সে সমস্ত শরীআতের ইবাদত গৃহ সমূহের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। স্ব-স্ব যামানায় তাদের ইবাদাত গৃহ সমূহের সম্মান ও সংরক্ষণ ফরয ছিল। বর্তমানে সেসব ইবাদতস্থানের সম্মান করার নিয়ম রহিত হয়ে গেছে (আল-কুরতুবী, আহকামুল কুরআন)

এ আয়াতের তাফসীরে ব্যাখ্যাকারগণ সূরা বাকারার ২৫১ নং আয়াতটি উল্লেখ করেছেন যেখানে বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহ্‌ যদি মানুষের এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ সৃষ্টিকুলের প্রতি অনুগ্রহশীল।’ (আল-কুরআন, ২:২৫১)।

সুতরাং আয়াতটির অর্থ দাড়াঁচ্ছে আল্লাহ কোনো একটি গোত্র বা জাতিকে স্থায়ী কর্তৃত্ব প্রদান করেননি; বরং বিভিন্ন সময় দুনিয়ায় একটি দলকে দিয়ে তিনি অন্য একটি দলকে প্রতিহত করতে থেকেছেন। নয়তো কোনো একটি নির্দিষ্ট দল যদি কোথাও স্থায়ী কর্তৃত্ব লাভ করতো তাহলে শুধু দূর্গ, প্রাসাদ এবং রাজনীতি, শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস করে দেয়া হতো না; বরং ইবাদতস্থল গুলোও বিধ্বস্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেতো না।

এটাই এ আয়াতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা।

তবুও এ আয়াত থেকে প্রচ্ছন্ন একটি নির্দেশনা মুসলিমরা লাভ করতে পারে যে, অন্য ধর্মালম্বীদের উপসনালয়গত মর্যাদা ইসলামে আছে। তবে প্রকাশ থাকে যে, উম্মাহর আলিমদের কোনো স্তরে এ আয়াতকে অন্য ধর্মালম্বীদের উপাসনালয় সম্পর্কিত বিধানের সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয়নি।

যায় সোফিয়ার ভেতরের দৃশ্য, image source: shafaqna.com

দুই.
নূসূসের দ্বিতীয় প্রকার হাদীস পর্যালোচনা করা যাক। প্রথমত নবীজীর (সা.) কর্ম সংক্রান্ত হাদীসগুলো উল্লেখ করছি:

(ক) নবীজী (সা.) কর্তৃক ঘোষিত মদীনা সনদের ধারা বলে বিশেষত ২৭-৩৭ নং ধারার বলে (দেখুন: ড. আকরাম জিয়া আল-উমরি, আল-মুজতামাউল মাদানী, ১১৯-১২২) মদীনার আভ্যন্তরীণ ইহুদী গোত্রগুলো সন্ধির মাধ্যমে তাদের ভূমি, ধর্ম-কর্ম ও সিনাগগগুলোর নিরাপত্তা লাভ করে। কিন্তু চুক্তি ভঙ্গ করায় তারা মদীনা থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পর তাদের দূর্গ ও উপসনালয় ধ্বংস করা হয়। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণে আলিমগণ বলেন, কোনো শহরের চুক্তিবদ্ধ অধিবাসী যদি তা ভঙ্গ করে এবং তাদের মধ্যে কেউ-ই চুক্তির অধীনে না থাকে, তখন তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও উপসনালয় মুসলিমদের গণিমত হিসেবে ধর্তব্য হবে। কারণ চুক্তিভঙ্গ যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ। (ইবন কায়্যিম, আহকামু আহলিয যিম্মাহ, ৩/১১৯২)

(খ) নবীজী (সা.) নজরান অধিবাসীদের সাথে চুক্তি করেছিলেন যে, তারা তাদের অধিকৃত অঞ্চলে নতুন কোনো উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা করবে না। (ইবন কুদামা, আল-মুগনী, ১০/৬০৯)

(গ) কাইস ইবন তালাক তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমরা একটি কাফিলায় নবীজীর (সা.) উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা তাঁর নিকট বাইআত করলাম এবং তাঁর সাথে সালাত পড়লাম। আমরা তাঁকে অবহিত করলাম যে, আমাদের এলাকায় আমাদের একটি গীর্জা আছে। আমরা তাঁর কাছে তার পবিত্রতার বিষয় সমপর্ণ করলাম। তিনি পানি চাইলেন এবং অযূ করলেন। তারপর তিনি কুলি করলেন এবং একটি পাত্রে পানিগুলো ঢেলে রাখলেন। তারপর আমাদের নির্দেশ দিলেন— ‘তোমরা তোমাদের দেশে গিয়ে তোমাদের গির্জাকে ভাঙ্গবে; এবং স্থানটিকে এ পানি দ্বারা পরিষ্কার করবে এবং স্থানটিতে মসজিদ বানাবে’। আমরা বললাম, আমাদের দেশ অনেক দূর, শুষ্ক মওসুম, গরম অনেক বেশি, এ পানি শুকিয়ে যাবে। তখন নবীজী (সা.) বলেন— ‘তোমরা এর সাথে আরও পানি বাড়াও তা তার সুঘ্রাণকেই বৃদ্ধি করবে। আমরা বের হলাম এবং আমাদের দেশে এসে আমাদের গীর্জাকে ভেঙ্গে দিলাম। তারপর তার স্থানে পানি ছিটিয়ে দিলাম এবং তাকে আমরা মসজিদ বানালাম। তারপর আমরা মসজিদে আযান দিলাম। আযান শুনে পাদ্রী, যিনি ত্বাই বংশের এক লোক ছিলেন, বললো, ‘হকের দাওয়াত, তারপর সে আমাদের টিলাসমূহ হতে একটি টিলার দিকে চলে গেলো, আমরা তারপর থেকে তাকে আর কোন দিন দেখিনি। (নাসাঈ, আস-সুনান, হা. ৭৮০)

দ্বিতীয়ত নবীজীর (সা.) বার্তা সংক্রান্ত হাদীসগুলো উল্লেখ করছি:

(ঘ) উসমান ইবন আবিল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা.) তাকে তায়িফ মসজিদটি সে স্থানে প্রতিষ্ঠার আদেশ করেছেন যেখানে তাদের দেবতাগুলো স্থাপিত ছিলো। (আবূ দাউদ, আস-সুনান, হা. ৪৫০)

(ঙ) ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা.) বলেন, ইসলামে না যৌনহীন করা অনুমতি নেই, আর কোনো গির্জা স্থাপনের অনুমতি নেই। (আল-বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা, হা. ১৯৫৭৮)

(চ) উমার ইবন খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা) বলেছেন: ইনশাআল্লাহ আমি জীবিত থাকলে ইহুদি-খ্রীষ্টানদের অবশ্যই আরব উপদ্বীপ হতে বের করে দেবো। (তিরমিজী, আস-সুনান , হা. ১৬০৬)

(ছ) উমার ইবন আবদুল আযীয (র.) থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা.) সর্বশেষ কথা যা বলেছেন তাতে ছিল, আল্লাহ তা‘আলা ইহুদি ও খ্রীস্টানদেরকে ধ্বংস করুন। তারা নিজেদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। আরবের মাটিতে দুই ধর্ম একত্র হতে পারবে না। (মুসলিম, আস-সহীহ, হা. ৫২৯)

(জ) ইবন শিহাব উদ্ধৃত করেন, নবীজী (সা.) বলেন, জাজিরাতুল আরবে দু’টি দ্বীন একসাথে চলবে না। (মালিক, মুআত্তা, হা. ১৫৮৪)

এ সকল নূসুসের আলোকে সাহাবীদের নিকট অন্য ধর্মালম্বীদের উপাসনালয়ের বিষয়ে নিম্নোক্ত কর্মপন্থা স্পষ্ট হয়ে যায়:
১. আরব উপদ্বীপ অন্য ধর্মীয় উপাসনালয় মুক্ত থাকবে
২. নতুন নির্মিত শহরেও তা প্রযোজ্য হবে
৩. কোনো অঞ্চলের মানুষ ইসলাম গ্রহণ করলে তারা নিজেদের উপাসনালয় মসজিদে রূপান্তরিত করতে পারবে
৪. বিজিত অঞ্চলে চুক্তির মাধ্যমে বিজয় হলে চুক্তি অনুসরণ অপরিহার্য
৫. যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হলে মুসলিমরা সিদ্ধান্ত নিবে।

সাহাবীগণ কী করেছিলেন?
এখানে তিনটি উদাহরণ আলোচনা করবো:
প্রথম. আবু বকর (রা.) এর শাসনামলে ৬৩৩ খ্রীস্টাব্দে ইরাকের তৎকালীন রাজধানী ‘আল হিরা’ মুসলমানদের অধীনে আসে। এ সময় খলীফার পক্ষ থেকে একটি আদেশ জারি করা হয়, যেখানে চুক্তির মাধ্যমে জয়ী হওয়া এ এলাকায় অমুসলিমদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের ফেরত দেয়া হয়।

দ্বিতীয়. জেরুজালিমে খ্রীস্টান গীর্জায় প্রবেশ না করার বিষয়ে উমর (রা.) পাদ্রীদের অনেককে বলেছেন— ‘আমরা তোমাদের গির্জা প্রবেশ করতে পারি না কারণ, তোমাদের গির্জায় মানুষের আকৃতির মূর্তি রয়েছে।’ (আল-বুখারী, আস-সহীহ, হা. ৪৩৪) তিনি চুক্তির মাধ্যমে জেরুজালেম বিজিত হওয়ায় সে খ্রীস্টান গীর্জায় সালাত আদায়ে সর্তকতা অবলম্বন করেছেন। পরবর্তীতে কেউ যাতে ভুল বুঝে গীর্জাটিকে মসজিদে রূপান্তর না করে। (কেউ কেউ গীর্জা ও বাইতুল মাকদিসকে গুলিয়ে ফেলেন!)

তৃতীয়. খলিফা উমরের সময় আমর ইবন আল-আস (রা.) মিশর বিজয় করে নতুন রাজধানী গড়ার প্রয়োজন অনুভুত হলে ফুসতাত নগরীর পত্তন করেন। সেখানে কোনো ভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি ছিলো না। অনুরূপভাবে সাহাবীদের যুগে বসরার গোড়াপত্তন হয়। তাতেও একই বিধান অনুসরণ করা হয়।

ইতিহাস কী বলছে?
এখানে সাহাবীদের যুগে শুরু হওয়া ও তাবিঈ যুগের নিষ্পত্তি হওয়া একটি ঐতিহাসিক ঘটনা উদ্ধৃত করবো যা নুসূস সমুহের সামগ্রিক বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলবে।

সিরিয়ার বর্তমান জামি আল-উমভীর কথা বলছি, যা দামিস্কের উমাইয়া মসজিদ নামে বিখ্যাত। রোমান রাজত্ব কালে এখানে খ্রীস্টানদের একটি গীর্জা ছিলো। তাকে ‘কানিসা ইউহান্না’ বলা হতো। উমরের (রা.) সময়ে সাহাবীগণ যখন দামিস্ক আক্রমণ করে তখন তার অর্ধেক শহর যুদ্ধের মাধ্যমে বিজিত হয়। শহরবাসীরা পরাজয় নিশ্চিত জেনে অস্ত্র সমর্পণ করে। ফলে বাকী অর্ধেক শহর চুক্তির মাধ্যমে জয় হয়। ঘটনাচক্রে ঐ গীর্জার অর্ধাংশ যুদ্ধ ও অর্ধাংশ সন্ধির মাধ্যমে জয় হয়। যে অংশ যুদ্ধের মাধ্যমে জয় হয়, সে অংশে মুসলিমরা মসজিদ নির্মাণ করেন। বাকী অংশ চুক্তির শর্তানুপাতে গীর্জারূপে রেখে দেওয়া হয়।

দামিস্ক বিজয়ের অনেক বছর পর্যন্ত এখানে মসজিদ ও গীর্জা একসাথে অবস্থান করে। ওলীদ ইবন আবদুল মালিক সালাত আদায়কারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মসজিদ প্রশ্বস্ত করার প্রয়োজন মনে করেন। অপরদিকে মসজিদ ও গীর্জার সামনাসামনি অবস্থান এক ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি করছিলো। খ্রীষ্টান প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করে তিনি চারগুণ জায়গা দেওয়া কিংবা তাদের ইচ্ছামত মূল্য পরিশোধের প্রস্তাব করেন। কিন্তু তারা তাতে ও সন্তুষ্ট ছিলেন না। এতটুকু পর্যন্ত ইতিহাসের বর্ণনায় ঐক্যমত রয়েছে। কারো মতে তিনি মুসলিমদের যুদ্ধ দ্বারা বিজিত অঞ্চলের গীর্জাগুলো ধবংস করে দিতে চাইলে তারা এ স্থান ছাড়তে রাজি হয়। আবার কারো মতে তিনি জোরপূর্বক ঐ অংশটি দখল করে নেন।

পরে উমর ইবন আব্দুল আযীয় খলীফা নিয়োজিত হলে খ্রীস্টানগণ তার নিকট জবরদস্তির অভিযোগ নিয়ে আসে। তিনি খ্রীস্টানদের প্রতি রায় দিয়ে মসজিদের সে অংশটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। তখন দামেস্কের গভর্ণর খ্রীস্টাদের দাবী অনুযায়ী বিনিময় দিতে রাজি করান। তখন তারাও সন্তুষ্ট মনে এ অংশটি ছেড়ে যান। (ত্বকী উসমানী, জাহানে দিদাহ)

আশা করি ইতিহাস থেকে বিজিত এলাকার উপাসনালয় নীতি স্পষ্ট হয়েছে।

এবার প্রশ্ন নিজেকে করুন যুদ্ধের মাধ্যমে বিজিত ইস্তাম্বুল নগরী ও তাতে অবস্থিত আয়া সুফিয়ার বিষয়ে মুহাম্মদ আল-ফাতিহ কী সঠিক সিদ্ধান্ত নেন নি?
অবশ্য-ই তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মুহাম্মদ আল-ফাতিহ কী সে প্রতিশ্রুত বিজয়ী নয়?
আমার একটি পোস্টে একজন কিয়ামতের আলামত সংক্রান্ত একটি হাদীস দিয়ে ইস্তাম্বুল এখনো বিজয় হয়নি মত প্রকাশ করেছেন! আমি প্রায়শ স্বীকার করি, মালহামা কালীন তুর্কীর অবস্থান কোন স্বার্থে যাবে আমি নিজে এখনো আচঁ করতে পারছি না। হাদীসের ‘তুর্ক’ বলে একটি জনপদের কথা আছে এবং তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। আমি নিশ্চিত নয় এরা কারা! কিন্তু আমি শতভাগ নিশ্চিত নবীজীর (সা.) ইস্তাম্বুল বিজয়ের যে আমীর ও সেনাবাহিনীর কথা বলেছিলেন তা ‘মুহাম্মদ আল-ফাতিহের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে।

Istanbul,Image Source: hurriyetdailynews.com

আমি দেখতে পাই, শতাব্দীর পর শতাব্দীর লড়াইয়ে ক্লান্ত বিপ্লবীদের নেতৃত্বে একুুশ বছরের এক তরুণ বসবরাসের পশ্চিম তীর থেকে জাহাজ তুলে ঘোরা পথে পাহাড়ী বন্ধুর অসমতল ১০ মাইল স্থল পথ পাড়ি দিয়ে গোর্ল্ডেন হর্ণের দক্ষিণ তীরে কোনো এক রাতে পৌঁছে গেছেন। তারপর খুব ভোরে ফজরের পর সাথীদের যোহর সালাত আয়া সুফিয়া আদায়ের ভবিষ্যত বাণী শুনাতে শুনাতে ইয়ানিচারী নামক বিশেষ বাহিনীর মাত্র ত্রিশ সদস্যকে নিয়ে সেন্ট রোমানের [আজকের তোপকাপে] দিকে এগিয়ে যান আর বাহিনীর নেতা হাসানসহ আঠারো জন মুহুর্তে শহীদ হয়ে যাওয়ার পর মাত্র বারো জনকে সাথে নিয়ে পুর্ণ চেষ্ঠায় সেন্ট রোমানের প্রাচীর টপকাতে সফল হন।

আমি এখনো শুনতে পাচ্ছি সেন্ট রোমানের শেষ কায়সার বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সট্যান্টাইন চিৎকার করে বলেছে— ‘এমন কোনো খ্রীস্টান কী নেই, যে আমাকে খুন করতে পারবে?’

আপনি দেখতে পাবেন কায়সারের পোশাক নিক্ষেপ করে উসমানী সেনাবাহিনীর উন্মত্ত তরঙ্গের মধ্যে লড়তে লড়তে এগারশত বছরের রোম সম্রাজ্যের বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শেষ কায়সার। নবীজী (সা.) সে কথা বলেছিলেন সাড়ে আটশত বছর আগে— ‘কায়সারের ধ্বংসের পর আর কোনো কায়সার জন্ম নিবে না। তারপর তোমরা তার গুপ্তধন আল্লাহর রাস্তায় সপে দিবে।’ (বুখারী ৩০২৭, মুসলিম ২৯১৮)

আল-ফাতিহ আয়া সুফিয়াকে মসজিদের রুপান্তর করে সে সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় সপে দেয়ার দলীল তুর্কী পররাষ্ট্র মন্ত্রীর হাতে ইউটেউবে দেখে নিতে পারেন। তিনি লিখেছেন:

আয়া সোফিয়া নিয়ে সুলতান মেহমেত আল ফাতিহ’র অসিয়ত— ‘এই ভিত্তি কেউ যদি পরিবর্তন করে, তার এবং তাদের উপরে আজীবন ধরে আল্লাহর, নবীজীর (সা.) ফেরেস্তাকূলের, সকল শাসকগণের এবং সকল মুসলিমের লানত পড়ুক। আল্লাহ যাতে তাদের কবরের আজাব মাফ না করেন, হাশরের দিনে তাদের মুখের দিকে যাতে না তাকান। এই কথা শোনার পরেও কেউ যদি একে পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যায়, পরিবর্তনের গুনাহ তার উপরে পড়ুক। আল্লাহর আজাব পড়ুক তাদের উপর। আল্লাহ পাক সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’
—ফাতিহ সুলতান মেহমেত (১ জুন, ১৪৫৩) (অসিয়ত-নামাটির অনুবাদ সংগৃহিত)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বুঝার তওফীক দিন। আমীন!

লেখক: ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক,

সহযোগী অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 


প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন

লেখাটি শেয়ার করুন 

এই বিভাগের আরো লেখা

Useful Links

Thanks

দিন রাত্রি’তে বিজ্ঞাপন দিন

© All rights reserved 2020 By  DinRatri.net

Theme Customized BY LatestNews