1. zobairahmed461@gmail.com : Zobair : Zobair Ahammad
  2. adrienne.edmonds@banknews.online : adrienneedmonds :
  3. annette.farber@ukbanksnews.club : annettefarber :
  4. camelliaubq5zu@mail.com : arnider :
  5. patsymillington@hidebox.org : bennystenhouse :
  6. steeseejep2235@inbox.ru : bobbye34t0314102 :
  7. nikitakars7j@myrambler.ru : carljac :
  8. celina_marchant44@ukbanksnews.club : celinamarchant5 :
  9. sk.sehd.gn.l7@gmail.com : charitygrattan :
  10. clarencecremor@mvn.warboardplace.com : clarencef96 :
  11. dawnyoh@sengined.com : dawnyoh :
  12. oralia@b.thailandmovers.com : debraboucicault :
  13. chebotarenko.2022@mail.ru : dorastrode5 :
  14. lawanasummerall120@yahoo.com : eltonvonstieglit :
  15. tonsomotoconni401@yahoo.com : fmajeff171888 :
  16. anneliese@a.skincareproductoffers.com : gabrielladavisso :
  17. gennieleija62@awer.blastzane.com : gennieleija6 :
  18. judileta@partcafe.com : gildastirling98 :
  19. katharinafaithfull9919@hidebox.org : isabellhollins :
  20. padsveva3337@bk.ru : janidqm31288238 :
  21. alec@c.razore100.fans : kay18k8921906557 :
  22. michaovdm8@mail.com : latmar :
  23. malinde@b.roofvent.xyz : lauranadeau097 :
  24. adorne@g.makeup.blue : madie2307391724 :
  25. mahmudCBF@gmail.com : Mahmudul Hasan : Mahmudul Hasan
  26. marti_vaughan@banknews.live : martivaughan6 :
  27. crawkewanombtradven749@yahoo.com : marvinv379457 :
  28. deirexerivesubt571@yahoo.com : meridithlefebvre :
  29. ivan.ivanovnewwww@gmail.com : ninetuabtoo :
  30. lecatalitocktec961@yahoo.com : normanposey6 :
  31. guscervantes@hidebox.org : ophelia62h :
  32. clint@g.1000welectricscooter.com : orvilleweigel :
  33. margarite@i.shavers.skin : pilargouin7 :
  34. gracielafitzgibbon5270@hidebox.org : princelithgow52 :
  35. randi-blythe78@mobile-ru.info : randiblythe :
  36. lyssa@g.makeup.blue : rochellchabrilla :
  37. berrygaffney@hidebox.org : rose25e8563833 :
  38. incolanona1190@mail.ru : sibyl83l32 :
  39. pennylcdgh@mail.com : siribret :
  40. ulkahsamewheel@beach-drontistmeda.sa.com : ulkahsamewheel :
  41. harmony@bestdrones.store : velmap38871998 :
  42. karleengjkla@mail.com : weibad :
  43. whitfeed@sengined.com : whitfeed :
  44. basil@b.roofvent.xyz : williemae8041 :
  45. arnoldpeter933@yahoo.com : wilsonroach486 :
  46. dhhbew0zt@esiix.com : wpuser_nugeaqouzxup :
কবি গোলাম মোস্তফা: মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত
বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন

কবি গোলাম মোস্তফা: মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত

কামরুজ্জামান
  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০
  • ৮৭১ বার পড়া হয়েছে

এক.
সেই সময়ে ইউরোপ ভূখণ্ডে বলকান যুদ্ধে তুরস্কের সেনাবাহিনী বুলগেরিয়ানদের হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ায় সমস্ত মুসলিম জাহানে একটা বিপর্যয়তার ছায়া নেমে এসেছিলো। এমন সময়ে হঠাৎ আবার সংবাদ পাওয়া গেলো, কামাল পাশা বুলগেরিয়ানদের নিকট থেকে আদ্রিয়ানোপল পুনরুদ্ধার করেছেন। এই খবরে স্বজাতিবৎসল দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরের প্রাণ আনন্দে নেচে উঠলো। তিনি ‘আদ্রিয়ানোপল উদ্ধার’ (১৯১৩ খৃ.) নাম দিয়ে এক রাতের মধ্যে একটি নাতিদীর্ঘ কবিতা লিখে ফেললেন। এরপর কবিতাটি তিনি প্রখ্যাত সাংবাদিক মওলানা মুহম্মদ আকরাম খাঁ সম্পাদিত সাপ্তাহিক মোহাম্মাদী তে পাঠিয়ে দিলেন। পরবর্তী সপ্তাহে কবিতাটি মুদ্রিত হলো। তিনি লিখেন—

‘আজিকে প্রভাত কি বারতা নিয়া
ধরায় আসিলো নামিয়া।’

সেই সময় এই কবিতার ছন্দ, ভাব এবং প্রকাশভঙ্গি সবই ছিলো নতুন। তাই এই কবিতাকে কেন্দ্র করে পাঠক মহলে একটা ব্যাপক আলোচনার ঝড় বয়ে গেলো। বাংলার মুসলিম সমাজে যে একজন আধুনিক কবির আবির্ভাব হয়েছে একথা সহজেই স্বীকৃতি লাভ করলো। এই কবিতার মাধ্যমেই তার কবি হিসেবে পত্রিকার ময়দানে যাত্রা শুরু হয়।

বলছিলাম, মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত কবি গোলাম মোস্তফার কথা। যার অবদান বাংলা সাহিত্যে এক বিরল দৃষ্টান্ত। স্কুল জীবনেই এই কবির সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৯১১ সালে কবি যখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র তখন গ্রীষ্মের দীর্ঘ ছুটি কাটানোর পর তাঁর এক বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি কবিতায় রচনা করেন। এটিই ছিল তাঁর প্রথম কবিতা রচনা । কবিতাটি হলো—

‘এস এস শীঘ্র এস ওহে ভ্রাতধন
শীতল করহ প্রাণ দিয়া দরশন।
ছুটি ও ফুরাল স্কুল ও খুলিল,
তবে আর এত দেরি কিসের কারণ।’

দুই.
গোলাম মোস্তফার জন্ম ১৮৯৭ সালে যশোর জেলায় ঝিনাইদহ মহকুমার শৈলকূপা থানার  অন্তর্গত মনোহরপুর গ্রামে। পিতা কাজী গোলাম রব্বানী, পিতামহ কাজী গোলাম সরওয়ার। তারা দু’জনই ছিলেন সাহিত্যানুরাগী-ফারসী ও আরবী ভাষায় সুপন্ডিত। কবির মাতাও ছিলেন একজন স্বভাব-কবি। স্বভাব কবিত্ব ব্যক্তি মায়ের সাথে থেকে কবির মধ্যেও কবিত্ব ভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে।

কবির পিতা কাজী গোলাম রাব্বানীও গ্রাম্য কবি হিসাবে সমাধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন। দাদা কাজী গোলাম সরওয়ার তৎকালীন নীল বিদ্রোহের সময় নীলকরদের বিরুদ্ধে জাতীয় উদ্দীপনাময় কবিতা রচনা করে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি ‘নীল দর্পন’ নাটক রচয়িতা দীনবন্ধু মিত্রের সমসাময়িক ছিলেন। কবির পিতা বাল্যকাল থেকেই ‘হীতবাদী’ ও ‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। স্বজাতিবৎসল পিতার এ চিন্তা বালক গোলাম মোস্তফার মনেও প্রভাব বিস্তার করে। কবির পিতা প্রত্যহ রাতে সুর করে ভারত চন্দ্রের ‘বিদ্যা সুন্দর’ ও ‘অন্নদামঙ্গল’ পাঠ করতেন। এই গ্রামের অনেকেই শ্রবনের জন্য সমবেত হতেন। কবি গোলাম মোস্তফাও পিতার কাছ থেকে উক্ত কাব্য গ্রন্থগুলি অতীব আগ্রহের সাথে শুনতেন। এই সব অনুকুল পরিবেশের জন্য বাল্যকালেই তাঁর অন্তরে সাহিত্য চর্চার বীজ অঙ্কুরিত হয়। কবির পরিবারে সাহিত্যের চর্চাও চিন্তাগত প্রভাবই হয়তোবা তাকে সাহিত্য বিনির্মাণে ইসলামি চেতনা প্রস্ফুটিত করতে সাহায্য করেছিল।

ইসলামী ঐতিহ্য সংস্কৃতি এবং মুসলিম সমাজ জীবন সম্পর্কে কবি গোলাম মোস্তফা ছিলেন অতি সচেতন। তাই তার চিন্তাধারা ও আবেগ অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তার কতকগুলো খণ্ড কবিতায়। জাতীয় সমৃদ্ধির স্মরণ করেছেন স্বাধীন মিশর, হিন্দু মুসলমান, মোস্তফা কামাল, বিজয় উল্লাস প্রভৃতি কতিপয় কবিতায়। আর জাতীয় ঐতিহ্য চেতনার বিকাশ ঘটেছে তাঁর মানুষ, ফাতেমা-ই-দোয়াজ দহম, আল-হেলাল, শবে বরাত, ঈদ উৎসব প্রভৃতি কবিতায়।
প্রিয় নবীর জীবনদর্শকে স্মরণ করে কবি লিখেছেন—

‘হে রাসুল আজিকার এই পূন্য প্রভাতে আলোকে,
তোমার সালাম করি-দূর হতে পরম পুলকে

জাগিয়া উঠুক আজি এই দিনে আমাদের মনে
কি অসীম শক্তি আছে লুকাইয়া মানব জীবনে।’
(—ফাতেমা-ই-দোয়াজহম)

‘ঈদ উৎসব’ কবিতায় কবি ইসলামের সৌহার্দ্য ও সার্বজনীন ভ্রাতৃত্বের মিলন গান গেয়ে লিখেছেন—

‘আজ সকল ধরা মাঝে বিরাট মানবতা মূরতি লভিয়াছে হর্ষে
আজি প্রানে প্রানে যে ভাব জাগিয়াছে, রাখিতে হবে সারা বর্ষে।

এই ঈদ হোক আজি সকল ধন্য,
নিখিল মানবের মিলন জন্য,
শুভ যা জেগে থাক, অশুভ দূরে যাক।
খোদার শুভাশিস পর্শে।’
(—ঈদ উৎসব: রক্ত রাগ)

‘রাখাল খলিফা’ কবিতায় কবি আমীরুল মোমেনীন খলিফা ওমর ফারুকের অতুলনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যের পরিচয় তুলে ধরেন এভাবে—

‘নাছোড় খলিফা, কোন কথা তিনি তুলেন না তাঁর কানে,
রাজী হল তাই অগত্যা নও কর;
রাখাল চলছে উঠের পৃষ্ঠে—খলিফা লাগাম টানে।
এ মহাদৃশ্য অপূর্ব সুন্দর।’

সাহিত্যের আঙ্গিক-প্রকরণে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ছন্দের অনুসারী হলেও তাঁর সাহিত্যকর্মের মূল উপজীব্য ছিল ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্য। এ  সম্পর্কে তিনি বলেন— ‘রবীন্দ্রনাথ বা সত্যেন্দ্রনাথের অনুরাগী হলেও আমার মনে জেগেছিল আমাদের নিজস্ব সাহিত্য সৃষ্টির একটা দুর্জয় আকাঙ্খা। সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির তাকিদে নয়, সহজভাবে আমি বাংলার সাহিত্যে চেয়েছিলাম ইসলামী কৃষ্টির রূপায়ণ।’

তিন.
অনুবাদক হিসেবেও কবি গোলাম মোস্তফার বিশেষ খ্যাতির পরিচয় পাওয়া যায়। আরবি ও উর্দু সাহিত্য হতে নিম্নলিখিত গ্রন্থগুলি ভাষান্তরিত করে বাংলা সাহিত্যকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। ‘ইখওয়ানুস সাফা’ ‘মুসাদ্দাস-ই-হালী’ ‘কালাম-ই-ইকবাল’ ‘শিকওয়া’— তার ভাষান্তরিত গ্রন্থগুলির অন্যতম। এছাড়া, চিন্তামূলক ও যুক্তিবাদের উপর লিখিত আরও কিছু গ্রন্থাবলী তিনি রচনা করেছিলেন। ‘ইসলাম ও কমিউনিজম’ ‘ইসলামে জেহাদ’ ‘আমার চিন্তাধারা’ এগুলি তার গভীর চিন্তাধারার জ্ঞানলব্ধতার ফসল।

তাঁর গদ্য শৈলী ছিল আকর্ষণীয় এবং নিজস্ব বৈশিষ্ঠ্যে চির সমুজ্জল। শেষ বয়সে তিনি কুরআন বঙ্গানুবাদের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই কাজ শেষ করতে পারেননি। পাকিস্তান আমলে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের অনুরোধে তিনি খুলাফায়ে রাশেদীনের জীবনী রচনা শুরু করেন এবং তিনি শুধু আবু বকর (রাঃ) এর জীবনী রচনা শেষ করার পর তার মৃত্যুর ডাক চলে আসে।

কবি জসীম উদ্দীন লিখেছেন— ‘হযরত আবু বকরের জীবনী লেখা যেদিন শেষ হলো, তিনি সকলকে ডেকে গদগদ ভাষায় খোদার নিকট মোনাজাত করলেন। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন অসুখের খবর শোনে কতবার কবির সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে গেলাম। কবির তখন কোন জ্ঞান নেই। কবি যে হাসপাতাল থেকে ফিরে আসবেনা , এ কথা ত কোনদিনই ভাবতে পারেনি।’

কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’ একটি আশ্চর্য রকমের সফল সৃষ্টি। এই অমর গ্রন্থখানি গদ্যে রচিত হলেও সে গদ্যও কবিতার মত ছন্দময় এবং মধুর। তৎকালীন সময়ে গ্রন্থখানা ছিল বিশ্বনবী হয়রত মুহম্মদ (সা) এর উপর একটি সার্থক জীবন-চরিত। গ্রন্থটিতে হৃদয়ের আবেগ, আন্তরিক অনুভূতি যে ভাবে বর্ণিত হয়েছে তার তুলনা আমাদের বাংলা সাহিত্যে নিতান্তই বিরল। এর পরবর্তীকালে তিনি কোরঅানিক ঘটনার অমিত্রাক্ষর ছন্দে ‘বনি আদম’ নামে একটি মহাকাব্য লিখেছিলেন। যা বাংলা সাহিত্যে এক অমর ও অক্ষয় কীর্তি।

গোলাম মোস্তফা মুসলিম জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় উর্দুর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ১৯৪৯ সালে গঠিত পূর্ববঙ্গ সরকারের ভাষা সংস্কার কমিটির সচিব হিসেবে তিনি কাজ করেন। তার কাব্যের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সহজ ও শিল্পসম্মত প্রকাশভঙ্গি এবং ছন্দোলালিত্য। তিনি কয়েকটি পাঠ্যপুস্তকও রচনা করেন এবং সেগুলি অবিভক্ত বাংলায় খুবই সমাদৃত হয়েছিল। তাঁর কয়েকটি কবিতা স্কুলপর্যায়ে পাঠ্য ছিল।

গোলাম মোস্তফার সাহিত্যের অধিকাংশের মূল বিষয় ইসলামি আর্দশ ও মুসলিম ঐতিহ্য। নিছক সৌন্দর্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তিনি লিখেননি; বরং ইসলাম ও ইসলামি আদর্শ রূপায়নের জন্যই তিনি লিখেছেন। তিনি রসাত্মক কবিতা রচনা করলেও কুরআন-হাদীস তথা ইসলামি আদর্শ ঐতিহ্যের প্রতি ছিলেন তীক্ষ্য দৃষ্টিসম্পন্ন। কোন রচনাই যেন ইসলাম পরিপন্থী কিংবা ইসলামের বিকৃত উপস্থাপন না হয় সে দিকে তিনি ছিলেন সদা সতর্ক। ইসলামি চেতনার রূপায়ণই তাঁর সাহিত্য-সাধনার প্রধান উদ্দেশ্য এবং মুসলিম সমাজের সাহিত্য-সংস্কৃতির জাগরণ তাঁর লক্ষ্য। তিনি মুসলিম জাতির জাগরণমূলক ইসলামি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বিষয়াবলীকেই গীতি কবিতার আঙ্গিকে পরিবেশন করেছেন। তাঁর জীবন সাধনায় মুসলিম বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত বিষয়াবলীকেই সাহিত্যে রূপায়িত করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ‘আমার লক্ষ্য আদর্শ’ প্রবন্ধে লিখেন—

‘যে যুগে আমার জন্ম সে যুগ বাংলার মুসলমানদের অবসাদের যুগ। সে যুগে আমাদের সাহিত্যের না ছিল কোন স্বাতন্ত্র্য, না ছিল কোন স্বকীয়তা। প্রত্যেক জাতির মনন শক্তি, ঐতিহ্য, ধ্যান-ধারণা ও আশা-আকাঙ্খা রূপায়িত হয় তার মাতৃভাষার মধ্যে। জাতির অন্তরমূর্তি ছায়া ফেলে তার সাহিত্যের মনো-মুকুরে। সাহিত্য তাই জাতির মনের প্রতিধ্বনী। সাহিত্যের ভিতর দিয়েই গোটা জাতির সাচ্চা চেহারা দেখা যায়। সেই হিসেবে বাংলার মুসলমানের কোন সাহিত্যই তখন রচনা হয়নি। আমি তাই ছোট বেলা থেকেই চেয়েছিলাম মুসলমানদের জাতীয় সাহিত্য রচনা করতে।’

গোলাম মোস্তফার সমকালে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এর প্রভাব ভারতীয় উপমহাদেশেও পড়ে। এতে অনেক তরুণ বাঙালি মুসলিম মার্কসবাদ-লেলিনবাদের কমিউনিজম আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। এ প্রেক্ষাপটে গোলাম মোস্তফা ‘ইসলাম ও কমিউনিজম’ নামে একটি রাজনৈতিক গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মার্কসবাদ ও লেলিনবাদের অসারতা প্রমাণ করেছেন। পাশাপাশি ইসলামই যে মুক্তির একমাত্র পথ সে কথাও তিনি তুলে ধরেছেন। এই গ্রন্থে তিনি ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম এবং ধর্মীয় চিন্তা-মতবাদ সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন। এ গ্রন্থটি রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি ভূমিকায় লিখেন—

‘মুসলিম তরুণদের অনেকেই আজকাল কমিউনিজমের প্রতি বেশ খানিকটা ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে বলিয়া মনে হয়। ইসলামি আদর্শকে পরিত্যাগ করিয়া তাহারা কমিউনিজমের রূপে ভুলিয়াছে। কমিউনিজমই হইল তাহাদের কাছে আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। যেন দুনিয়ায় এমন সুন্দর ব্যবস্থা আর কোথাও ছিল না, নাই বা হইবে না। ইসলামের বিধান অপেক্ষা কমিউনিজমের বিধানই যে শ্রেষ্ঠতর এবং বর্তমান যুগ সমস্যার সমাধানে এই ব্যবস্থাই যে সর্বাপেক্ষা উত্তম, ইহাই তাদের ধারণা। এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করিবার জন্যই আমার এই প্রয়াস।’

কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশিত হলে এর প্রতিবাদে তিনি ‘নিয়ন্ত্রিত’ কবিতা লিখেন। এতে তিনি কবি নজরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন—

‘ওগো বীর
সংযত করো সংহত করে উন্নত তব শির!
বিদ্রোহী? শুনে হাসি পায়!
বাঁধন-কারার কাঁদন কাঁদিয়া বিদ্রোহী হতে সাধ যায়?’

চার.
কবি গোলাম মোস্তফা সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। এই অঙ্গনে তার উল্লেখযোগ্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। গায়ক ও গীতিকার হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বিশেষ করে ইসলামী গান, গজল ও মিলাদ মাহফিলের বিখ্যাত ‘কিয়ামবাণী’ (রসুল আহবান বাণী) রচনায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। তিনি গান শিখে ছিলেন ওস্তাদ জমির উদ্দিন খাঁর কাছে। এরপর নজরুলের ইসলামী গানগুলো যে সময় শ্রোতের মত মুসলিম সমাজে বয়ে চলেছিল, সেই সময় সে স্রোতে গোলাম মোস্তফারও কিছু গান মিশেছিল। অবশ্য এর পিছনের মূল কারণটি ছিলো কবি গোলাম মোস্তফা যখন ওস্তাদ জমির উদ্দিন খাঁর শিষ্য ছিলেন, তখন নজরুল ইসলাম ও আব্বাস উদ্দিনও তাঁর শিষ্য ছিলেন। বাঙালী মুসলিম জাতির ভাগ্যাকাশে শুকতারার মত সেদিন যে তিনটি রত্নের আবির্ভাব হয়েছিল, তারই সমন্বয় ঘটেছিল ওস্তাদ জমির উদ্দিন খাঁর শিষ্যত্বের মাধ্যমে।

গোলাম মোস্তফার রচিত গানগুলোর প্রায় সবকটাই আব্বাস উদ্দীন ও তার নিজের কন্ঠে মিলিত ও একক ভাবে রেকর্ড হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি গান কবির নিজস্ব বৈশিষ্ঠ্যে ও আদর্শে রচিত যেমন— খোদার মহিমায় ….হে খোদা দয়াময় রহমান রাহিম, বাদশা তুমি দুনিয়ার হে পরোয়ার দিগার, এবং ইয়া নবী সালাম আলাইকা ও রাব্বানা শোন শোন আমর মোনাজাত। এ গানগুলো স্বাতন্ত্র ও চিরস্থায়ী মহিমায় সমুজ্জল। তার এ গানের আদর্শ চিরন্তন। পাকিস্তান আন্দোলনের পটভূমিকায় বহু ইসলামি ও দেশাত্মবোধক গান তিনি রচনা করেন। ব্যক্তিজীবনে গোলাম মোস্তফা ছিলেন খুবই সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি যশোর সংঘ কর্তৃক ‘কাব্য সুধাকর’ (১৯৫২) এবং পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ (১৯৬০) উপাধি লাভ করেন।

কবি গোলাম মোস্তফা ছিলেন সে যুগের ইসলামী ঐতিহ্যের এক আলোকবর্তিকা, অনগ্রসর মুসলিম সমাজের জাগরনের নকীব। এ ক্ষেত্রে তিনি নি:সন্দেহে কাজী নজরুর ও ফররুখ আহমদের পূর্বসূরি। কলকাতা জীবনে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং আব্বাস উদ্দীনের ভূমিকা ছিল এ ক্ষেত্রে অনন্য। কবি নজরুল তখন অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতা কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। গোলাম মোস্তফা ও শিল্পী আব্বাস উদ্দীনের ঐকান্তিক চেষ্টা ও তাগিদে কবি নজরুল ইসলাম তখন ইসলামী গান রচনায় এগিয়ে আসেন। বস্তুত গ্রামোফোন রেকর্ডের মধ্যদিয়ে সেসব গান দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে এবং ঘুমন্ত মুসলিম সমাজে অভুতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাই বলা যায়, মুসলিম নবজাগরনের কবি গোলাম মোস্তফা, শিল্পী আব্বাস উদ্দীন ও কবি নজরুল যেন এক সূত্রে গাঁথা। তারা আপন আপন অবস্থান থেকে বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রেখেছেন এবং মুসলিম ঐতিহ্যের ধারাকে সমুন্নত করেছেন। বন্ধুত্বের সূত্রে তারা আবদ্ধ ছিলেন। আর এসব বন্ধুত্বের মূলসূত্রই ছিল মানবকল্যাণ এবং আদর্শ। তাঁর বন্ধুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন— কাজী নজরুল ইসলাম, কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দীন, কবি শাহাদত হোসেন, কবি জসীম উদ্দীন, কবি আব্দুল কাদির, কবি আব্দুস সাত্তার , অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খাঁ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ।

গোলাম মোস্তফার লেখক হয়ে ওঠা এতটা সহজ ছিল না। জীবনে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল তাকে। কবি কন্যা ফিরোজা খাতুন লিখেছেন— ‘আমার আব্বা কবি গোলাম মোস্তফার হাতের লেখার মত তাঁর ভাষাও অতি সুন্দর ও মিষ্টি স্বচ্ছন্দ গতি একটুও বাধে না কোথাও। কিন্তু তাঁর জীবন অত সহজ ও স্বচ্ছন্দ ছিল না। তাঁর জ্ঞান পিপাসিত প্রতিভার তরীকে উজান পথে অনেক ঝড় ঝাপটার মুকাবিলা করে বেয়ে নিতে হয়েছে লক্ষ্যস্থলে। শৈশব কালেই সৎমা থাকায় স্বভাবতই বাপের অবহেলায় কখনও মামার বাড়ি কখনও নিজের বাড়ি থাকতে হতো। আর্থিক অনটনে শৈশবেই টিউশনি করতে হতো, তারপরও ক্লাসে ফাষ্ট হয়েছেন। তার জীবনকে সংগ্রামের মধ্যে পরিচালিত করার মাধ্যমে শৈশবের সে সংগ্রাম তিনি কাটিয়ে উঠে ছিলেন। জীবনকে সাজিয়েছিলেন বর্ণাঢ্যতায়। নিজ যোগ্যতা ও মেধার কারিশমায় চলমান জীবনকে করেছিলেন উচ্চকিত দ্যুতিময়।’

কবি গোলাম মোস্তফা ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর হাসপাতালে মৃত্যু বরন করেন। তিনি ছিলেন বাংলায় সাহিত্যে ইসলামি চিন্তা-চেতানার পূনরুজ্জীবনের অন্যতম মহান কারিগর।

কিন্তু, দূর্ভাগ্য আমাদের! গোলাম মোস্তফাদের রেখে যাওয়া মুসলিম ঐতিহ্য হেফাজতের আমানত কতটুকু আমরা রাখতে পেরেছি তা আজকের দিনের এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

 


প্রিয় পাঠক, ‘দিন রাত্রি’তে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- ‘দিনরাত্রি’তে আপনিও লিখুন

লেখাটি শেয়ার করুন 

এই বিভাগের আরো লেখা

Useful Links

Thanks

দিন রাত্রি’তে বিজ্ঞাপন দিন

© All rights reserved 2020 By  DinRatri.net

Theme Customized BY LatestNews