মুহিউদ্দিন আবু আবদুল্লাহ মােহাম্মদ ইবন আলি ইবন মােহাম্মদ ইবন আল আরাবী আল হাতেমি আত তায়ি। যিনি ‘শেখ আল আকবর’ নামে পরিচিত। তিনি ইসলামের প্রভাবশালী দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও সুফিদের মধ্যে অন্যতম ।
ইবনে আরাবী। Image Source:alchetron.com
ইবনে আরাবী ২৭ রমজান ৫৬ হিজরী/৭ আগষ্ট ১১৬৫ খ্রিষ্টাব্দ সালে মুর্সিয়া, স্পেনে জন্ম গ্রহণ করেন। ৮ বছর বয়সে তার পরিবার সেভিলে চলে যায়। সেখানে তিনি
আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ শুরু করেন। খুবই কম বয়স হতে তিনি আধ্মাতিক স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করেন। যার খবর তার বাবার বন্ধু, বিখ্যাত দার্শনিক, ইবন রুশদের কাছে পৌছায়। তিনি ইবনে আরাবীর সাক্ষাত কামনা করেন। ইবনে আরাবী স্পেন এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে প্রায় ১০ বছর অতিবাহিত করেন বিভিন্ন সুফি সাধকদের সাথে।
৫৯০/১১৯৪ সালে তিনি তার বাড়ি সেভিলে চলে আসেন। সে বছর যখন তার বয়স ৩০ তখন তিনি আবদুল আযিয অলি মাদাত্তয়ির সাথে সাক্ষাত করতে তিউনিশিয়া যান। এরপর তিনি ফেজ, কায়রাে, জেরুজালেম, মক্কাসহ বিভিন্ন স্থান ভ্রমন করেন। ৫৯৮
/১২০২ সালে তিনি তার বিখ্যাত বই ‘ফুতুহাত আল-মক্কিয়া লিখা শুরু করেন ৬২৭/১২২৯ সালে তিনি তার বিখ্যাত এবং তাৎপর্যময় বই ‘ফুসুস আল হিকাম’ রচনা
করেন যেটা একটা স্বপ্নের উপর রচিত। ৬৩০/১১৩৩ সালে তিনি “ফুতুহাত আল-মক্কিয়া রচনা এবং পরিমার্জন শেষ করেন। ২৮ রবিউল সানি ৬৩৮/১৬ নভেম্বর ১২৪০ সালে তিনি সিরিয়ার দামেস্কে কাযি মুহিউদ্দিন ইবন আল জাকির বাড়িতে ইন্তেকাল করেন।
কর্ম:
ইবনে আরাবী একজন উচ্চমানের লেখক ছিলেন। তার লিখিত বইয়ের সংখ্যা অনেক। ব্রোকেলম্যান কমবেশ ২৩৯টি কাজের কথা উল্লেখ করেছেন। ৮৪টি বই সন্দেহাতীত ভাবে ইবনে আরাবীর রচিত বা তার দ্বারা সত্যায়িত, এই বিষয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণাতে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তার কিছু বিখ্যাত রচনা হলাে—
(১) ‘ফুতুহাত আল-মক্কিয়া’— এটি তার বিখ্যাত কর্ম। এটি ৩৭ টি সফরে ৬টি ভাগে, ৫৬০টি অধ্যায়ে বিভক্ত। এখানে তিনি ইসলামী শরীয়ত, মারিফত নিয়ে বিস্তরিত আলােচনা করেন, যেটা তিনি ঐশ্বরিকভাবে কাবাতে এটি বালকের শরীরে অংকিত অবস্থায় অবলােকন করেন। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তিনি সেটাকে লিপিবদ্ধ করেন।
(২) ‘ফুসুস আল হিকাম’— এটা তার আরেকটি বিখ্যাত বই। তিনি বইটি একটি স্বপ্নের মাধ্যমে নবী মােহাম্মদ (স.) হতে লাভ করেন আর সেভাবেই তিনি তা
লিপিবদ্ধ করেন। বইটি ২৭ টি অধ্যায়ে বিভক্ত। এতে ইবনে আরাবীর সমগ্র শিক্ষার সংক্ষিপ্তসার রয়েছে। বইটি অতি উচ্চমানের এবং কঠিন প্রকৃতির। এর বহু ব্যাখ্যা গ্রন্থ রয়েছে।
(৩) ‘কিতাব আল ইসরা ইলা মাকাম আল আসরা’— এখানে তার তিনটি মিরাজের বিবরণ রয়েছে।
(৪) ‘তরজুমান আল আশওয়াক’— এটি তার কবিতার বই যেটা নিজামকে উদ্দেশ্য করে তিনি রচনা করেন।
(৫) ‘দাখায়িরুল আলাক’— তরজুমান আল আশওয়াকের একটি ভাষ্য।
(৬) ‘রিসালা রুহুল কুদস’— এতে তিনি তার সমকালিম বহু সুফির জীবন ইতিহাস সংকলন করেন।
(৭) ‘তানাজজুলাত আল মাওসিলিয়াহ’— এতে তিনি ধর্মীয় রীতি নীতির আধ্মাতিক ব্যাখ্যা দেন।
(৮) কিতাব আল আসফার
(৯) তাজ আর রাসাইল
এছাড়াও আরাে বহু রচনা রয়েছে। এসব কাজের মধ্যে ‘ফুতুহাত আল-ম্কিয়া’ এবং ‘ফুসুস আল হিকাম’ বই দুটো তার সমগ্র শিক্ষার ভান্ডার। বই দুটো ইসলামি সুফিতত্ত্বের উপর রচিত অমূল্য রতনস্বরূপ।
মূলঃ চিন্তার সীমানা (ইমাম রাযি রা. কে লেখা ইবনে আরাবী’র চিঠি)